আলোকপাত

যৌক্তিক সংস্কারের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থা সময়োপযোগী করা যেতে পারে

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল করা নিয়ে বর্তমানে ছাত্র আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন দিনদিন ব্যাপকতা লাভ করছে। ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। একই বছর ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল করা নিয়ে বর্তমানে ছাত্র আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলন দিনদিন ব্যাপকতা লাভ করছে। ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। একই বছর ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। গত ৫ জুন ছয়জন ছাত্রের দায়েরকৃত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। ১ জুলাই থেকে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেন, যা এখনো চলমান রয়েছে। সমতাবাদী অর্থনীতিবিদ হিসেবে সমাজে সাম্য ও সমতা বিধান বা নিশ্চিত করাকেই সমর্থন করি। আমার উদ্দেশ্য। ১৯৭২ সালে প্রণীত রাষ্ট্রীয় সংবিধানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে, সমাজে যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের কোটা সুবিধা দিতে হবে, যাতে তারা আর দশজন মানুষের মতো সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারে। রাষ্ট্র তাদের যদি বিশেষ সুবিধা দেয় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই। ১৯৭২ সালে প্রথম কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর একাধিকবার কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন সাধন করা হয়। ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য দেয়া কোটা বৃদ্ধি করা হয়। কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার হোক বা উঠে যাক এ আন্দোলনকে সমর্থন করি না। আমি মনে করি, কোটা ব্যবস্থা থাকতে পারে, তবে তার ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে বলতে চাই কোটা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা নয়, বরং যৌক্তিক সংস্কারের মাধ্যমে সময়োপযোগী করা যেতে পারে।

প্রশ্ন হলো, কোটা আইন সংস্কার কেন চাই? ১৯৭২ সালে যখন কোটা পদ্ধতির আইন প্রণীত হয়েছিল তখন দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা যেমন ছিল এখন তা অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাজেই আগের কোটা পদ্ধতি অবিকলভাবে বহাল রাখার সুযোগ নেই। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি, বিলুপ্তি নয়। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় তখন যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে একটি অংশই ছিল তরুণ ও ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এমনকি স্কুলের ছাত্ররাও ক্ষেত্রবিশেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তাদের অনেকেরই বাড়ি-ঘর পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা পুড়িয়ে দেয়; লুটপাট চালায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে তারা অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। এ অবস্থায় তাদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে সমাজে টিকে থাকার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া কোটা সুবিধা বাড়ানো হয়। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারিত আছে। অন্যান্য মিলিয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধার হার হচ্ছে ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা আছে ৫৬ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ৪৪ শতাংশ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত। স্বাধীনতার পরবর্তী কয়েক বছর হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সুবিধা সংরক্ষিত রাখার প্রয়োজন ছিল। কারণ সেই সময় মুক্তিযোদ্ধারা সবেমাত্র যুদ্ধ করে ফিরেছেন। তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। অনেকেই শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে তাদের পক্ষে আর শিক্ষাঙ্গনে যোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ তাদের সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারাটা আত্মনির্ভর হওয়ার একটি উপায় বা কৌশল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছিল। সেই সময় সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করার যুক্তি ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মাধ্যমে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধন করতে সমর্থ হন। একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে বলে তাকে সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা দেয়া হচ্ছে বিষয়টি আসলে তেমন ছিল না। বরং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে তারা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাই সমাজের একজন সামর্থ্যহীন মানুষকে বেঁচে থাকার অবলম্বন নিশ্চিত করার জন্যই সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধার প্রবর্তন করা হয়েছিল। কারণ সেই সময় এটা ছাড়া কোনো তাৎক্ষণিক বিকল্প ছিল না। ৭২-এর সংবিধানে তখনো সাধারণভাবে বলা হয়েছিল, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে (কোটা) সুবিধা দিতে হবে। তখন এমন একটি বিশেষ সুবিধা প্রদানের প্রয়োজন ছিল। অর্থনৈতিক ও আদর্শগত প্রয়োজন দুদিক থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা কোটা সুবিধা পাওয়ার জন্য উপযুক্তও ছিলেন। বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, তারা কোটা সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হন।

আমি মনে করি, এখনো আদিবাসীরা কোটা সুবিধা পেতে পারেন। কারণ তারা মূলধারার জনগণ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। কাজেই তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা দেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, চাকরি বা কর্মসংস্থান ছাড়া সহজে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। কাউকে কিছু আর্থিক বৃত্তি সহায়তা করার চেয়ে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হলে তার বেশি উপকার হবে। প্রতিবন্ধীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা পেতে পারেন। কারণ তারা সমাজে অত্যন্ত অবহেলিত অবস্থায় কর্মহীন রয়েছেন। নারীরাও কোটা সুবিধা পেতে পারেন। তবে আগে নারীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে রকম সুবিধাবঞ্চিত ছিলেন এখন তা নেই। নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। নারীরা এখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। কাজেই নারীদের কোটা আগের চেয়ে কমানো যেতে পারে। স্বাধীনতার পর  মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছিলেন সেই অবস্থা এখন আর নেই। কারণ যারা সেই সময় কোটা সুবিধার আওতায় সরকারি চাকরি লাভ করেছিলেন তারা নিশ্চিতভাবেই আর আর্থিক বঞ্চনার মধ্যে নেই। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি বা পোষ্যদের সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা পাওয়ার কোনো সুযোগ সংবিধান মোতাবেক থাকছে না। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা সুবিধা আছে তা কমানো যেতে পারে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেই তিনি সরকারি চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবেন, এটা হতে পারে না। দেখতে হবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাকে কোটা সুবিধা দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে তিনি প্রকৃতই সুবিধাবঞ্চিত কিনা। আগে যদি কোটা সুবিধা পেয়ে থাকেন তা তিনি ব্যবহার করতে পেরেছেন কিনা। অর্থাৎ কোটা সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত কিনা সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। এ-সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন তৈরি না করে ঢালাওভাবে ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সুবিধা প্রদানের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। কোটা সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় কঠোরভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ যাতে কোটা সুবিধার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। দেশে প্রায় ৫ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারী আছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। এরা জাল সার্টিফিকেট গ্রহণ করে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। এদের পোষ্যরা যাতে কোনোভাবেই কোটা সুবিধা পেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, যারা মুক্তিযোদ্ধার জাল সার্টিফিকেট গ্রহণ করে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। 

বর্তমানে ছাত্র সমাজ যে আন্দোলন করছে তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এর আগে আন্দোলনে ছাত্ররা একবার কোটা সুবিধার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি চেয়েছিলেন। তখন খুব বাজে স্লোগানও মিছিল থেকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে (মুক্তিযোদ্ধাদের গালে চপেটাঘাত করার আওয়াজ তোলার ধৃষ্টতাও আমরা দেখেছি!) আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু মনে হয়েছে, সেই সময় সরকার ভুল করে অথবা অভিমানবশত বলেছিল, ‘তোমরা এতকিছু করছ ঠিক আছে আজ থেকে কোটা সুবিধা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়া হলো।’ এ সিদ্ধান্ত ছিল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ফল। পরবর্তী সময়ে কোটা সুবিধা রক্ষা করার জন্য যখন আদালতে রিট হলো তখন সরকার তার দেয়া সিদ্ধান্তকে রক্ষা করার জন্য কোনো চেষ্টা করেনি। সরকারের এ পরবর্তী অবস্থানকে আমি সমর্থন করি। কারণ কোটা বিলুপ্তি কোনো সমাধান নয়। বরং সংস্কার করা যেতে পারে। আদালত সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা রেখে একটি রায় দেন। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বিলুপ্ত করা ঠিক হবে না। এতে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আন্দোলনরত ছাত্ররা বলছেন, এখন তো আর চাকরিপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নেই। তাদের সন্তান বা নাতিপুতিদের কোটা সুবিধা দেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। আন্দোলনরত ছাত্ররা কোটা বাতিল চাচ্ছেন না, তারা এখন কোটা সংস্কার চাচ্ছেন, যার অবশ্যই যুক্তি আছে।

আমরা যদি উন্নত দেশ হতে চাই তাহলে আমাদের প্রশাসন ব্যবস্থাকেও উন্নত করতে হবে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে উচ্চ শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের সমাবেশ ঘটাতে হবে। কোটা সুবিধা তাদের জন্য প্রযোজ্য হয় যারা প্রাথমিক যোগ্যতা প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ যারা পরীক্ষায় পাস করেছেন তাদের জন্য। যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় কোটা সুবিধা তাদের কোনো উপকারে আসে না। কাজেই যোগ্যতার একটি ন্যূনতম মাপকাঠি তো আমরা ধরেই নিচ্ছি। তারপর আসে কোটার প্রশ্ন। হয়তো চাকরির আবেদনকারীর মধ্যে যিনি অধিক যোগ্য তিনি কোটার কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় চাকরিটি পেলেন না। আর একজন তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কোটা সুবিধার কারণে চাকরিটা পেয়ে গেলেন। এক্ষেত্রে হয়তো আমরা মেরিট বা যোগ্যতাকে কম মূল্য দিলাম। তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী যদি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পান তাহলে প্রশাসনের জন্য তা কিছু না কিছু ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। এটা অবশ্যই মেধাবী হয়েও চাকরি পেলেন না তাদের জন্য ক্ষোভের কারণ হবে। তাই এ রকম ক্ষোভ কমানো ও দক্ষতাকে আরো গুরুত্ব দিয়ে কোটার এ অতি উচ্চ হার কমানো দরকার। যারা সমাজে পশ্চাৎপদ হয়ে আছেন এটা তাদের ব্যক্তিগত কোনো দোষ নয়। কারণ সমাজ তাদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে পারেনি। তাই কোটার মাধ্যমে তাদের একটি সাময়িক সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তাই বলে যেনতেনভাবে কোটা সুবিধার কারণে যদি অতিমাত্রায় অযোগ্য ব্যক্তি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পান সেটা কোনোভাবেই দেশের জন্য ভালো হবে না। কোটা সুবিধা থাকতে পারে। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে কোটা সুবিধার কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে মেধাশূন্য হয়ে না পড়ে। কত শতাংশ কোটা সুবিধা রাখলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কোটা সুবিধা হয়তো ১০ শতাংশ রাখা যেতে পারে। অথবা প্রয়োজন মনে হলে ২০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশও রাখা যেতে পারে। এ ব্যাপারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীকে উঠে আসার সুযোগ দিতেই হবে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অযোগ্য কর্মীর ভারে ভারাক্রান্ত করা যাবে না। অবশ্যই মেধাকে প্রধান গুরুত্ব দিতে হবে। আমার বিবেচনায় ৭০ শতাংশ মেরিটের ভিত্তিতে এবং ৩০ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আদালতের হাতে এটা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্ক ফোর্সকে এটা নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।

ড. এম এম আকাশ: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও