চৌধুরী মফিদুল ইসলাম একজন সজ্জন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ছিলেন। ব্যাংকিং সেক্টরে তার অনেক অবদান রয়েছে। অথচ মৃত্যুর আগে অনেক চেস্টা করেও তার জন্য একটা আই সি ইউ বেড যোগাড় করা যায়নি। তিনি প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করলেন। আরেকজন প্রথিতযশা ব্যাংকার বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েমারা গেছেন। তিনি অবশ্য অন্তত চিকিৎসা পেয়েছেন। টোয়ান্টি ফোর অনলাইন নিউজ পেপারের তথ্য মোতাবেক এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন ব্যাংকার প্রান হারিয়েছেন, বাংকার্স বাংলাদেশ বলছে ১৩ জন ব্যাংকার প্রান হারিয়েছেন। যতদুর জানা যায় সবাই কর্মস্থল থেকেই বা কর্মস্থলে যাবার পথে সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারেন। করোনা মহামারীতে প্রাণ হারনো সকল ব্যাংকারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবাবেরে প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক তাঁদের সাবেক সহকর্মীদের পরিবারের সাহয্যে এগিয়ে এসেছেন বলে জানা যায়। অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক করোনার মৃত ব্যাংকারদের পরিবারের জন্য এককালীন সাহায্যের ব্যাবস্থা করতে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক প্রায় সহস্রাধিক ব্যাংকার করোনা নিয়ে ভুগছেন।
ব্যাংকিং একটি জরুরী পেশার মধ্যে পড়ে। যে কোন প্রতিকূল অবস্থাতেও ব্যাংকারদের সেবা দিয়ে যেতে হয়। চলমান মহামারীর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকাররা আর্থিক সেবা অব্যাহত রেখেছেন। মানুষের অর্থের সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে। কোন ঈদের ছুটি ব্যাংকারা তিন দিনের বেশি ভোগ করতে পেরেছেন বলে জানা যায়না। এমনকি কোরবানির পশুর মাঠেও ব্যাবসায়িদের অর্থের নিরাপত্তা বিধানে ব্যাংকারা সেবা দিয়ে থাকেন। সরকারের যে কোন বিশেষ সেবা প্রদানে ব্যাংকারা সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন । সরকারের কোষাগারে ব্যাংক ব্যাবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ কর জমা হয় ফি বছর। এছাড়াও বিভিন্ন দৈব- দুর্বিপাকে রাস্ট্রের ডাকে সাড়া দিয়ে ব্যাংকাররা বিশেষ অনুদান সরকারি তহবিলে জমা দিয়ে থাকেন। দেশের খেলাধুলার মান উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন ব্যাংক গরিব মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। দেখা যায় প্রায় আর্থ -সামাজিক প্রতিটি সেক্টরে ব্যাংকের অবদান ওতপ্রেতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এতক্ষন যা লিখলাম এগুলো হচ্ছে ব্যাংকের মুল কাজের বাইরের কাজ। মুল কাজ হল দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা। ব্যাংক এক শ্রেনির মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে অন্য শ্রেনির মানুষের কাছে বিনিয়োগ করে। ব্যাংক মানুষের সঞ্চয় প্রবনতা জাগিয়ে তোলে। মানুষকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বৈদেশিক বাণিজ্য , বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনা ইত্যাদি কাজ সুচারুরুপে সম্পন্ন করে থাকে।
ব্যাংকগুলো হাজার কোটি টাকা সামাজিক দায় দায়িত্বের খাতিরে ব্যয় করে থাকে এবং এক্ষেত্রে অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবেও করতে হয়। যাইহোক ব্যাংক দেশের অর্থনীতি আর মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এটাই প্রত্যাশিত। ব্যাংকার ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবীদের বড় বড় গ্রুপ রয়েছে যারা রাষ্ট্রের প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু আজ অবধি ব্যাংকারদের এমন বড় সংগঠন গড়ে উঠে দেখা যায়নি। ফেসবুক রিলেটেড কিছু গ্রুপ ছাড়া। তবে অতি সম্প্রতি ব্যাংকারা একটি ক্লাব গড়ে তোলায় ব্রতী হয়েছেন এবং এটি জোরেশোরে তাঁদের সদস্য সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সিনিয়র, জুনিয়র সকল পর্যায়ের ব্যাংকাররা এতে যোগদান করেছেন । আশাকরা যায় সহসাই এটি বড় একটি সংগঠনে পরিণত হবে। সেক্ষত্রে ব্যাংকারদের অনেক সুবিধা –অসুবিধা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। যাইহোক আমি আসল কথায় আসি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকাররা বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকাদের জন্য একটি সম্মিলিত ব্যাংকার হাসপাতাল তৈরির দাবী জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের দুর্গতি এই দাবীকে আরও জোরালো করে তুলেছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ৬২ টি প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং ৩২ টির মত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। প্রত্যেক ব্যাংকের সিএস আর ফান্ড থেকে টাকা বরাদ্দ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ এবং আর্থিক সহযোগিতে নিয়ে সম্মিলিত ব্যাংকার হাসপাতাল তৈরির জোর দাবী জানাচ্ছি। এই কাজে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে। উল্লেখ্য এই হাসপাতালে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকসহ সবাই অগ্রাধিকার পাবেন এবং সাধারণ মানুষের জন্যও চিকিৎসা সেবা নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
আনোয়ার ফারুক তালুকদার
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক