আলোকপাত

নিরীক্ষা বিভাগের দায়িত্ব রাষ্ট্রের সম্পদ আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা সংরক্ষণ

গত ১১ মে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং দেশব্যাপী তিনদিনের বিশেষ সেবা কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও উন্নয়ন সহযোগীদের চাহিদা পূরণে অডিট কার্যক্রমে সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী বলেন, নিয়ত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা,

গত ১১ মে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং দেশব্যাপী তিনদিনের বিশেষ সেবা কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও উন্নয়ন সহযোগীদের চাহিদা পূরণে অডিট কার্যক্রমে সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী বলেন, নিয়ত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানের অডিট সম্পাদনের প্রচলিত কমপ্লায়েন্স ও ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি পারফরম্যান্স অডিট, আইটি অডিট এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অডিট রিপোর্ট প্রণয়ন করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অডিট বিভাগে এরই মধ্যে এর আগের নয়টি অডিট (বাণিজ্যিক, সিভিল, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, রেভিনিউ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প, পূর্ত, মিশন, ডাক ও তার) অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আটটি (পরিবহন, সামাজিক নিরাপত্তা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও পরিবেশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আইটি ও জনসেবা) পূর্ণাঙ্গ অডিট অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অডিট কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও মানসম্মত ভূমিকা পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। নিরীক্ষা বিভাগের তরফে সেবামূলক কার্যক্রম, যেমন বেতন ও পেনশন সুবিধা পরিশোধ পদ্ধতি প্রশংসনীয় আধুনিকায়ন—একটি আলাদা বিষয়। সেটি অর্থ বিভাগের প্রযোজনায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দপ্তরের উদ্যোগ। নিরীক্ষা বিভাগের ওপর রাষ্ট্রের সম্পদ আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত, মোদ্দা কথায় ওয়াচডগের ভূমিকা পালন। সাংবিধানিক এ দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বার্থ সেবা হতে পারে। অনুষ্ঠানে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় চার কোটির অধিক অডিট রিপোর্ট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদায় হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে উদ্বেগের বিষয়, প্রায় ২৩৫টি অডিট রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে কিন্তু আলোচনা হয়নি।

সেই নিরিখে অডিট কার্যক্রম আরো ফলপ্রসূ হলে সরকারের আর্থিক সম্পদের দক্ষ ও সুষম ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে। সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে মানসম্পন্ন এবং রিয়েল টাইম অডিট সম্পন্ন করতে সিএজির সার্ভিস সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে মাননীয় মন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, অডিট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল প্লাটফর্মে এনে যে অডিট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে, সময়ের সঙ্গে এর উৎকর্ষ নিশ্চিত করে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগের পুরনো পদ্ধতি বদলে দিয়ে এরই মধ্যে অনলাইন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করা হয়েছে। নতুন নতুন নিরীক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও অনলাইন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে মানসম্মত, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাকল্পে পুষ্টিকর অডিট রিপোর্ট দেশ ও অর্থনীতি প্রত্যাশা করে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, নিরীক্ষা যেকোনো ব্যবস্থাপনাকে আস্থাশীল করে তোলে। আস্থা সৃষ্টির প্রসঙ্গটি এখানে প্রধান ও মুখ্য ভূমিকায় থাকে। হিসাব মেলানো হলে আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঠিক পরিস্থিতি প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু সেই কর্মকাণ্ডের যৌক্তিকতা, যথার্থতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততা কতখানি তা নিরীক্ষায় নির্ধারিত ও নিশ্চিত হয় বলেই নিরীক্ষা আস্থা সৃষ্টির দ্যোতক এবং অনুঘটক উভয়ই। সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকে নিরীক্ষাকে তাই স্বচ্ছতা ন্যায় ও ন্যায্যতার নির্ণায়ক, নিয়ন্ত্রক ও নির্ধারক হিসেবে সমীহ করার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। নিরীক্ষা যেকোনো আর্থিক কর্মকাণ্ডে উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় নিয়োজিত সম্পদ সদ্ব্যবহার সম্পর্কে ঘটনাত্তোর তদারকি করে বলেই অনিয়ম উদ্ঘাটন তার যেমন একটি কাজ, তেমনি স্বচ্ছতা অনুসন্ধানে তার প্রয়াস প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে আরো সচেতন সতর্ক হওয়ার একটা আবহ সৃষ্টিতে তার ভূমিকা সংবিধিবদ্ধ হয়ে আছে। আর এ শেষোক্ত ভূমিকাটির ওপর নিরীক্ষার নেতৃত্ব নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিরীক্ষা নিজেই নিজেকে কতটা নির্ভরযোগ্য করে তুলতে পারল সেটি নিরীক্ষার গুরুত্ব পরিমাপের মাপকাঠি। নিরীক্ষার দায়বদ্ধতা নিরীক্ষার তাৎপর্য ও ভূমিকাকে অর্থবহ করে তোলে।

নিরীক্ষার দায়বদ্ধতা কার কাছে? রাষ্ট্রের কাছে তো বটেই, নিরীক্ষাধীনের কাছে, আর তার চেয়ে বেশি তাদের কাছে যাদের পক্ষ হয়ে তাদের সহায় সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অর্থাৎ আমজনতার কাছে নিরীক্ষার দায়বদ্ধতা বেশি। নিরীক্ষার ফলাফল তাদের জানার অধিকার বেশি যাদের সহায় সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ। নিরীক্ষার বার্ষিক প্রতিবেদন সুদৃশ্য ফিতায় মোড়কে দাখিল করার মধ্যে তার ভূমিকা শেষ হয়ে যায় না। হিসাব বর্ষ থেকে যথেষ্ট সময় পার করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলে এবং তার ওপর বিধিসম্মত ব্যবস্থা নিতে আরো দেরি করার অর্থই হচ্ছে নিরীক্ষার প্রতি রীতিমতো অবিচার করা।

নিরীক্ষার দায়বদ্ধতা গণমানুষের কাছে বেশি, জাপানে এ সত্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে অর্থবছর শেষ হওয়ার প্রথম তিন মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী অর্থবছরের যাবতীয় আর্থিক কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক নিরীক্ষা কর্মসম্পাদন করা হয়। স্থানীয় হিসাব অফিসের প্রতিবেদন, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও সব সংস্থার বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাবের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় নিরীক্ষা দপ্তর গত অর্থবছরের এ প্রাথমিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পন্ন করে। বছরের নির্দিষ্ট/নির্ধারিত তারিখে (অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে) সেই প্রাথমিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার সব মিডিয়ার একযোগে গণজ্ঞাতার্থে প্রচার করা হয়। গণবিজ্ঞাপিত সে সংক্ষিপ্তসারে সবাই জানতে পারে গত অর্থবছরে কোন কোন সংস্থা কী পরিমাণ আর্থিক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন—অনুমোদিত বাজেট অতিরিক্ত খরচ কোন কোন সংস্থা করেছে, কারা তাদের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রা (আয় ও ব্যয় উভয় খাতে) অর্জন করতে পারেনি। বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের দু-চারটি টাটকা উদাহরণও সেখানে থাকে। নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিটি পত্রপত্রিকায় অডিটর জেনারেলের এ গণবিজ্ঞপ্তি ফলাও করে প্রচার পায়। তাৎক্ষণিক এ প্রতিবেদন প্রকাশে বেশ প্রতিক্রিয়া হয় সব মহলে। সংসদীয় কমিটিতে কোনোকালে এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে তার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না। স্বচ্ছতার একটি অন্যতম উপায় হলো তাৎক্ষণিকভাবে নিদর্শন পেশ করা।

এ প্রাথমিক প্রতিবেদনে অর্থনীতির চলতি অবস্থায় হালচালসহ নির্বাহীদের মাধ্যমে দেশের আর্থিক সহায় সম্পদের ব্যবহার ও অপব্যবহার অপচয় অনিয়মের পরিস্থিতি করদাতা সমগ্র দেশবাসী জানতে পারে। তবে এ প্রাথমিক প্রতিবেদনই নিরীক্ষার সব নয়। বিস্তারিত নিরীক্ষা, বিশেষ নিরীক্ষা, বিষয়ভিত্তিক নিরীক্ষা সবই যথানিয়মে এবং যথারীতি সম্পাদিত হয়ে থাকে সব বিধিবিধান অনুসরণ করেই। নিরীক্ষিত নির্বাহী সংস্থার বক্তব্য ও প্রতিবিধানমূলক গৃহীত ব্যবস্থাদি পরীক্ষা পর্যালোচনা করেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা নিয়মমাফিক দাখিল হয়—ডায়েট বা সংসদের নির্দিষ্ট পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি তা পরীক্ষা পর্যালোচনা করে। তবে অনূর্ধ্ব দুই বছরের মধ্যে এ জাতীয় কাজ শেষ হয়। সেখানে নিরীক্ষার ফলাফল বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় বলেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন ও দাখিলে সময়ানুবর্তিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা অনুসরণে বাধ্যবাধকতা বিধিবদ্ধ করা আছে। 

নিরীক্ষাকে বিশেষায়িত অবয়বে বিশ্বাসযোগ্য ও অর্থবহ করার নিমিত্তে জাপানের নিরীক্ষা দপ্তরে সব পেশার মানুষের নিয়োগের নিয়ম রয়েছে। প্রকৌশল ডিগ্রিধারী নিরীক্ষকরা পূর্ত ও নির্মাণ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের নিরীক্ষা দায়িত্ব পালন করে থাকে। চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রিধারী অডিটর স্বাস্থ্য দপ্তরের, হিসাববিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীরা বাণিজ্যিক ও হিসাব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি কর্মসূচির আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতির প্রায়োগিক ও প্রাসঙ্গিক কাঠামো পরীক্ষা পর্যালোচনার ব্যবস্থা রয়েছে। কাগজপত্রের নিরীক্ষা নয়—ক্ষৈত্রিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের, মূল্যায়নের কাজও এখন নিরীক্ষার। পারফরম্যান্স আর ভ্যালু ফর মানি অডিটের এক সুষম সমন্বয় জাপানি নিরীক্ষায় সহজেই শনাক্ত করা যায়।

জাপানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেখানে আর্থিক অনিয়ম যথার্থতা অস্বচ্ছতার বিষয়টি ভাউচার আর হিসাব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নয়, রীতিমতো প্রকৌশল পদ্ধতি প্রয়োগগত ব্যবহারিক দিকনির্দেশনার বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রটি নির্দেশ ও সঠিক অবকাঠামো বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ণীত হয়। একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্পে সেতুর ডিজাইনের কোনো ত্রুটি আছে কিনা সে থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে পদ্ধতি প্রক্রিয়াগত কোনো ক্রটি আছে কিনা তা দেখা হয় এবং পরীক্ষা পর্যালোচনা করে মন্তব্য করা হয়। সেসব মন্তব্য/পর্যবেক্ষণে পদ্ধতিগত সংস্কারের ইঙ্গিতও থাকে। জাপানে ১০ বছর আগে মৃত্যুবরণকারী এক ওভারশিয়ার কর্তৃক ২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের ওপর অনিয়ম সম্পর্কে বৃহৎ ড্রাফট প্যারা তৈরিতে সময় ব্যয় করা হয় না। নির্বাহী দপ্তরের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, এমপাওয়ারমেন্ট ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের ওপর, পরিবেশ পরিস্থিতির নিরীক্ষার মন্তব্যগুলো বিশেষ উপাদেয়। এভাবে নিরীক্ষা সেখানে তার দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

জাপানে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ‘আউটলাইন অব অডিট রেজাল্ট’ শিরোনামে একটি অধ্যায়ে নিরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়। প্রথমে ক্যাটাগরিভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাসে অনিয়ম সংখ্যা, আর্থিক সংশ্লেষের পরিমাণ সারণিতে তুলে ধরা হয়। এরপর উদ্ঘাটিত অনিয়মগুলো মন্ত্রণালয়/বিভাগ ওয়ারি বিভাজনে দেখানো হয়। উদাহরণস্বরূপ ২০০০ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যেমন দেখা যায়, একটি মন্ত্রণালয়ে আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত উদ্ঘাটিত কেসের সংখ্যা ১০৮ এবং এসব অনিয়মের সঙ্গে ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইয়েনের সংশ্লেষ রয়েছে। সে বছর ওই একই মন্ত্রণালয়ে নিরীক্ষা আইনের ৩৪ বিধির আওতায় একটি ১৬ মিলিয়ন ইয়েনের এবং ৩৬ বিধির আওতায় আওতায় একটি ১০৮ মিলিয়ন ইয়েনের ‘আদায়যোগ্য’ পর্যায়ের কেস রয়েছে। তিনটি কেসে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইয়েন অর্থ নিরীক্ষার আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদায় করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এর ফলে সার্বিকভাবে দেখা যায়, একটি অর্থবছরে শুধু একটি মন্ত্রণালয়ে মোট ১১৩টি কেসে নিরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ঘাটিত ১৬ বিলিয়ন ইয়েনের অনিয়ম সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থার মধ্যে এনে রাষ্ট্রীয় আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। দেশ ও জাতির কাছে নিরীক্ষার দায়বদ্ধতা এ এক মেধাবী, পরিশ্রমী ও নিবেদিত নিষ্ঠার সগৌরব উপস্থাপনা। ২০০০ অর্থবছরে জাপানে নিরীক্ষায় মোট ২৫৮টি কেসে ২১ বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ১৭১ মিলিয়ন ডলার) পাবলিক মানির অনিয়ম ও আদায় পরিস্থিতি প্রতিবেদিত হয়েছে। নিরীক্ষায় উদ্ঘাটিত অনিয়মগুলো উপস্থাপনশৈলীর মধ্যে নিরীক্ষার পরিশীলিত দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যবেক্ষণের তীক্ষ্মতা, বলিষ্ঠতা এবং সর্বোপরি মেধাবী মূল্যায়নের প্রয়াস বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

কথায় আছে, ‘Charity begins at home’। জাপানের নিরীক্ষা দপ্তর একটি স্বশাসিত সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। নিজেদের প্রতিটি ব্যাপারেও তারা যথা পদ্ধতি অবলম্বনে সচেতন। তাই বলে পোকা বাছার মতো কাজকর্মে নিজেদের কর্মপরিবেশ উন্নতিতে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে তারা কৃপণতার আশ্রয় নেয় না। সে দেশের নিরীক্ষা কমপ্লেক্স নির্মাণকাজে ২৫ বছর সময় লাগে না। নিরীক্ষা ভবনের নির্মাণের জন্য পিপি পিসিপি তৈরিতে দুই দশক ব্যয় হয় না। অডিটর জেনারেলের অফিসে সরকারের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড সংস্থাপন ও সম্প্রচার করা হয় না। জাপানের বোর্ড অব অডিটে অন্য এক দেশের অডিটর জেনারেল সরকারি সফরে এসেছেন। জাপানে অডিটর জেনারেল সফররত অডিটর জেনারেলকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করবেন। সেখানে চারজনের আপ্যায়নের জন্য বাজেট আগে থেকে অনুমোদিত। এর কোনো ব্যতিক্রম চলবে না। আমন্ত্রিত অতিথির দিক থেকে একজন মেহমান বাড়লেও না, এমনকি দোভাষীর দায়িত্ব পালনকারীকেও সেই মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়নের সুযোগ নেই। তাদের অফিসের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তো দূরের কথা। 

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও জাপানে বাংলাদেশের সাবেক বাণিজ্যদূত

আরও