আলোকপাত

রাজনীতির ডামাডোলে অর্থনীতির ইস্যু কি আড়ালে পড়ে যাচ্ছে

প্রশ্নাতীত নির্বাচন না হওয়ার কারণে রাজনীতির মাঠে এমনকি সাধারণ আলোচনায়ও অর্থনীতিতে করণীয়, অকরণীয় কী এর কোনো আলোচনা এখনো দেখছি না। এটি ভালো কি মন্দ তা নয়। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন এবং মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা দেখে মনে হয় ক্ষমতাসীন দল গত পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট। এ কথা কী করে আমি বলছি। বলছি কারণ দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির যে টিম গত

প্রশ্নাতীত নির্বাচন না হওয়ার কারণে রাজনীতির মাঠে এমনকি সাধারণ আলোচনায়ও অর্থনীতিতে করণীয়, অকরণীয় কী এর কোনো আলোচনা এখনো দেখছি না। এটি ভালো কি মন্দ তা নয়। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন এবং মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা দেখে মনে হয় ক্ষমতাসীন দল গত পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট। এ কথা কী করে আমি বলছি। বলছি কারণ দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির যে টিম গত পাঁচ বছর অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়েছে তারা সবাই মনোনয়ন পেয়েছেন—সসম্মানে। দুয়েকজন সম্পর্কে কাগজে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। এবং তারাও মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে তো বলা যেতেই পারে পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। ভালো ছিল বলেই মনোনয়ন পেয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি লোটাস কামাল বলে বাজারে পরিচিত। মনোনয়ন পেয়েছেন ‘‌রংপুরের মেয়েরা তিন বেলা লিপস্টিক লাগায়’ খ্যাত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মনোনয়ন পেয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাধন মজুমদার। মনোনয়ন পেয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী দস্তগীর গাজী। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বলাই বাহুল্য এরা সবাই দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। এই বোঝেই সম্ভবত তাদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছিল অর্থনীতির বোঝা। সঙ্গে ছিলেন আমলা হিসেবে ‘‌তালুকদার’ এবং ‘‌মজুমদার’ সাহেবদ্বয়। তারা যেহেতু সসম্মানে মনোনয়ন পেয়েছেন কাজেই ধরে নেয়া যায় সরকার তাদের কাজে সন্তুষ্ট। কীভাবে তা প্রমাণ করবে সরকার। সরকার তার হাতের যাবতীয় পরিসংখ্যান আমাদের সামনে হাজির করবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয়, বিনিয়োগ, রাজস্ব, উন্নয়ন, আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরবে। চমৎকার হিসাব! এ হিসাব হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু বাস্তবেও কি ‘‌টিম’ দেশের অর্থনীতিকে ভালো চালিয়ে একটা ভালো জায়গায় রেখে গেছেন। ডলারের দাম, ডলারের প্রাপ্যতা, মূল্যস্ফীতি, সিন্ডিকেট, ভোগ, আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স, রাজস্ব, সরকারি ঋণ ইত্যাদি বড় বড় সূচকে আমাদের ভালো একটা জায়গায় রেখে গেছেন? এ হচ্ছে প্রথম প্রশ্ন।

দ্বিতীয় এবং অধিকতর বড় প্রশ্ন হচ্ছে আরেকটি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। পাঁচ বছরে একটি নির্বাচন। নির্বাচিতরা পাঁচ বছর দেশ চালাবেন। তারা আগামী পাঁচ বছর কী করতে চান, কী করবেন না ইত্যাদি বিষয় মানুষের জানার আছে। সাধারণভাবে মানুষ ‘‌নির্বাচনী মেনিফেস্টো’র মাধ্যমে তা জানতে চায়। এবং নির্বাচনের অনেক আগেই যাতে বিতর্ক হতে পারে। নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি। মেনিফেস্টোর কোনো খবর আছে কি? বিরোধী দল এ অভিযোগ থেকে মুক্ত। তারা নির্বাচন করবেন না বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। প্রধানমন্ত্রীও সংবিধানের বাইরে নির্বাচনে যাবেন না। অতএব তাদের এক দাফা, এক দাবি। ‘‌হাসিনা কবে যাবেন’—তারা এর জন্য হরতাল অবরোধ করছেন। এরই মধ্যে ঘটছে অগ্নিসন্ত্রাস। প্রতিদিন বাস-পরিবহন পোড়ানো হচ্ছে। এক জায়গায় রেললাইনও উপড়ে ফেলা হয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের কাছ থেকে নির্বাচনী ম্যানুফেস্টো চাওয়াটা একটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় হয়। তারা ব্যস্ত মানুষের সমর্থন জোগাতে। তবে কী চান তারা? বোঝা যায় তারা চান তাদের দলীয় নেত্রীর মুক্তি, নেতাকর্মীদের মুক্তি। আগামী পাঁচ বছর দেশের অর্থনীতি কীভাবে চলবে, এসব তাদের কাছে বিবেচ্য নয়। অতএব মামলা খালাস। আছে লেজে লেজে থাকা কয়েকটা বামপন্থী দল। তারা কী চায় এটাও বুঝতে পারছি না। অথচ দেশে কত কাজ, কত সমস্যা, কত উদীয়মান সমস্যা। দুঃখের বিষয় এমতাবস্থায় আগামী পাঁচ বছর তারা কী করবেন তা জানা গেল না। তারা মনে হয় ব্যস্ত মনোনয়নের ‘‌ভাগ’ নিয়ে। আসা যাক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে। কাগজে দেখলাম তারা বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি নির্বাচনী কমিটি করেছে। ‘‌অর্থনীতির’ কমিটিবিষয়ক কোনো খবর কাগজে বড় করে দেখিনি। হয়েছে তাও জানি না, হয়নি তাও জানি না। অথচ ক্ষমতাসীন দলের জন্য এটি একটি ফরজ কাজ। দেশবাসী জানতে চায় তারা আগামী পাঁচ বছর অর্থনীতির ক্ষেত্রে কী করতে চায়। ১০-১৫ বছরে তারা কী কী করেছে তা মানুষ স্বচক্ষে দেখছে। এর ওপর পরিসংখ্যান আছে। বিপক্ষ যুক্তি/তথ্যও আছে। গ্রামের মানুষ, শহরের মানুষ সবাই বর্তমান সরকারের অবদান চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। সিন্ডিকেটমুক্ত বাংলাদেশ হয়েছে কিনা মানুষ দেখছে। রংপুরের মেয়েরা তিন বেলা লিপস্টিক লাগায় কিনা তা রংপুরের লোকেরাই জানে। আর্থিক খাতের ‘‌নয়-ছয় সুদনীতি’ আছে কিনা তা মানুষ দেখছে। এ মুহূর্তে সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ বেশি, না ব্যাংকে বেশি তাও মানুষ দেখছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদেশে পাচারকৃত টাকা দেশে এসেছে কিনা তাও দেশবাসী জানে। দেশের ভেতরের ‘‌কালো টাকা’ কত উদ্ধার হয়েছে তাও জানা। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সঞ্চয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যানও আমাদের জানা। গত পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রী তার একটি বাজেট বক্তৃতাও সংসদে পাঠ করেছেন কিনা তা সবার জানা। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হরেদরে ঋণ নিয়েছেন। ডলারের দাম উঁচুতে ধরে রেখে শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ধরা খেয়েছেন তাও দেখলাম। ডলার রিজার্ভের হিসাবায়ন তিনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে না করে দেশবাসীকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

ডলারের দাম ধরে রেখে অর্থমন্ত্রী ‘‌ডলারের হুন্ডি বাজার’ তৈরি করেছেন। এসব খবর আমরা জানি। অর্থমন্ত্রী রাজস্ব বাড়াতে না পেরে সমানে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে গেছেন। তিনি খেলাপি ঋণ আর এ পয়সাও বাড়তে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। তা তিনি পারেননি। বারবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে খেলাপিদের সুযোগ দিয়েছেন। এখন বস্তুত খেলাপি হওয়ার সুযোগই সীমিত। কিন্তু এর পরেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবহেলায় পা৭চ বছরে বিনষ্ট হয়েছে। ব্যাংকের মালিকদের যত সুবিধা দেয়া যায় দিয়েছেন। বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা বলে অর্থমন্ত্রী ঋণের ওপর সুদহার রাখেন নামমাত্র। বাজারের নিয়ম তিনি মানেননি। অথচ বিনিয়োগ এখনো স্থবির। পরিনামে বিনষ্ট হয়েছে সঞ্চয় পরিস্থিতি। শেয়ারবাজার আজও উঠল না। তিনি বলেছিলেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন। তা ঠিক করে দেবেন। আজ শেয়ারবাজারের খবর কী? এটা যেখানে ছিল সেখানেও নেই। মানুষ ‘‌স্টকমুখী’ হতে ভয় পায়। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে তিনি আমাদের ঘাটতি বাড়িয়েছেন। গার্মেন্সে আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশনের খবর কী? এসব উত্থাপন করছি, কারণ তিনি অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে গর্ব করে বলতেন তিনি ফেল করবেন না। ফেল করার লোক তিনি নন। এসব নিয়ে তিনি যখন  প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রয়াত মুহিত সাহেবের সঙ্গে বহু বাহাস করেছেন। সেসব কথা পাঁচ বছর পর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মনে পড়ছে। শুধু কী মাননীয় অর্থমন্ত্রী? বাণিজ্য, খাদ্য, শিল্প, বস্ত্র ইত্যাদির মন্ত্রীরা তাদের পারফরম্যান্স কী? বস্তুব এটা একটা টিম। টিমের একটা বড় কাজ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল আছে, যার প্রধান অর্থমন্ত্রী? বাকিরা সদস্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আজ মূল্যস্ফীতি যা সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল কী করল—এ প্রশ্ন তো পাঁচ বছর পর করাই যায়। মূল্যস্ফীতি এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ। এটা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কাগজে দেখলাম মূল্যভার বহন করতে না পেরে সাধারণ মানুষ গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ভীষণ দাম। ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস কেনার ক্ষমতাও নেই মানুষের। এর প্রভাব পড়েছে মাছ-মুরগির বাজারে। ডিমের দামও কমেছে। তাই কাগজের খবরের শিরোনাম হয়েছে: ‘‌গরুর কারণে কমল মাছ-মুরগির দাম’। এদিকে দেখা যাচ্ছে সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে মন্থরতা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের কারণে কিনা জানা যায়নি। তবে মন্থরতার খবর কাগজে ছাপা হচ্ছে। খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘‌অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব: ‌ব্যাংকে সব মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন কমেছে’। সব মাধ্যম মানে কী? এর মধ্যে আছে চেক ক্লিয়ারিং, ইএফটি, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ইত্যাদি। খবরে বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতিতে বাজারে পণ্য বিক্রি কমেছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। আমদানি কমেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। রফতানির প্রবৃদ্ধি কম। ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে গ্রাহক। ডলারের বাজারে অস্থিরতা। ডলার নেই। আবাসন শিল্প, পরিবহন শিল্প, পর্যটন শিল্প, হোটেল ব্যবসা সর্বত্র মন্দা। বণিক বার্তার এসব খবরের পর আর কিছু বলার থাকে না। এ মেয়াদের সরকারের পাঁচ বছর শেষ হচ্ছে এ অবস্থার মধ্যে।

বর্তমান মুহূর্তের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বলার উদ্দেশ্য কি সরকারের সমগ্র অগ্রগতি অস্বীকার করা? না, নিশ্চয়ই নয়। পদ্মা সেতু হয়েছে নিজস্ব টাকায়। মেট্রোরেল হয়েছে ঢাকায়। ঢাকা-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বড় বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কৃষিতে মোটামুটি স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। মানুষ একদম না খেয়ে নেই। অবশ্য এক কোটি পরিবারকে খাদ্য দিয়ে সাহায্য করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে। যদিও এ খাতে পুঞ্জীভূত লোকসান প্রচুর এবং তা ভুল নীতির কারণে। অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে অনেক। রাস্তাঘাটের অভাব নেই এখন। ভুখা-নাঙ্গা মানুষ নেই। ‘‌মঙ্গাও’ নেই। আছে বৈষম্য। আঞ্চলিক বৈষম্য এবং মানুষে মানুষে বৈষম্য। ধন-সম্পত্তি কুক্ষিগত হচ্ছে, তবে ধন-সম্পত্তির পরিমাণও বাড়ছে। এভাবে দেখলে বলা যায় চমকপ্রদ অগ্রগতির পাশাপাশি রয়ে যাচ্ছে ‘‌কালো মেঘ’। কার্পেটের নিচে জমা হয়েছে অনেক আবর্জনা, যা দূর করা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষায় দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। রফতানির তুলনায় আমদানি বাড়ছে বেশি। বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে রাজস্ব বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। বাণিজ্যিক ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। এর একটি উদাহরণ জাতীয় নির্বাচন। ১৯৭২ নয় ১৯৪৭ সাল থেকে ধরলে দেখা যাবে আজ পর্যন্ত আমরা কী ধরনের সংবিধান চাই তা ঠিক করতে পারিনি। সবার মান্য কোনো সংবিধান আমাদের নেই। নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় তার কোনো পদক্ষেপ নেই। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন পর্যন্ত শক্তিশালী করতে পারিনি। জনপ্রশাসন সেকেলে। এ ধরনের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এমতাবস্থায় আলোচ্য বিষয় কী হওয়া উচিত ছিল?

আশা করেছিলাম ২০২৪-এর নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সব দল ও মতের লোকেরা জমে ওঠা সমস্যাগুলোর সমাধানে একটা সুষ্ঠু আলোচনা/বিতর্কে অবতীর্ণ হবেন। সব দল ‘‌নির্বাচনী মেনিফেস্টো’ হাজির করবে। দেশবাসী এর ওপর আলোচনা-বিতর্ক করবে। কৈ তা তো দেখতে পাচ্ছি না। কারো মধ্যে এর সম্পর্কে কোনো উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না। টিভিতে আলোচনায় যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে শুধুই রাজনীতি আর রাজনীতি। অর্থনীতির সমস্যার ওপর গভীর কোনো বিতর্ক দেখা যাচ্ছে না। অন্যদের কথা বাদ দিলাম। ক্ষমতাসীন দল এবং অন্য যারা নির্বাচনে যাচ্ছেন তারা কেন এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মেনিফেস্টো জাতির সামনে হাজির করবেন না? তারা কি দেশের মানুষকে কোনো হিসাবের মধ্যে নিতে চাইছেন না? আর কিছু না হোক, অন্তত এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন দল কী কী পদক্ষেপ নেবে তাই বলুক। ডলারের দাম, কম আমদানি, বহুল আলোচিত ‘‌সিন্ডিকেট’, পণ্য সিন্ডিকেট, আর্থিক সংস্কার সম্পর্কে কিছু একটা তারা বলুক। আমরা জানি, বুঝি আগামী দিনের সরকার কী কী করতে যাচ্ছে। না, আমরা হতাশ। এমন কোনো ঘটনা সময় থাকতে ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। রাজনীতি আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। ‘‌ক্ষমতা কেবলম’, ‘‌অর্থহি কেবলম’।

ড. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

আরও