২০১৯-২০
অর্থবছরে বিবিএসের
হিসাব মতে,
দেশের গড়
মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে
৫ দশমিক
৬৫ শতাংশ;
যা তার
আগের অর্থবছরে
ছিল ৫
দশমিক ৪৮
শতাংশ। এতে
দেখা যায়,
তুলনামূলকভাবে গড়
মূল্যস্ফীতি কিছুটা
বেড়েছে। সেই
সঙ্গে মাসিক
হিসাবে গত
মে মাসের
তুলনায় জুনে
মূল্যস্ফীতি কিছুটা
বেড়ে হয়েছে
৬ দশমিক
শূন্য ২
শতাংশ। বন্যার
ধাক্কায় জাতীয়,
শহর ও
গ্রাম সব
জায়গায়ই খাদ্য
মূল্যস্ফীতি বাড়ায়
এমনটি হয়েছে
বলে জানিয়েছেন
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ
মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,
মে মাসের
তুলনায় জুনে
শূন্য দশমিক
৬৭ শতাংশ
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি
পেয়েছে। এর
মূল কারণ
হচ্ছে হঠাৎ
বন্যা। বন্যায়
ফসলের বিশেষ
করে সবজির
ক্ষতি হয়েছে।
তাছাড়া এমনিতেই
আষাঢ়-শ্রাবণ
মাসে অতিবৃষ্টির
কারণে এ
সময়টায় মূল্যস্ফীতি
কিছুটা বেড়ে
যায়। তবে
তিনি আশা
করছেন, বন্যার
পানি নেমে
গেলে দ্রুত
রাস্তাঘাট সংস্কার
হবে, তখন
সরবরাহ ব্যবস্থা
স্বাভাবিক হবে।
ফলে মূল্যস্ফীতিও
কমে আসবে।
আগেই জেনেছি,
জুনে দেশের
সার্বিক মূল্যস্ফীতি
বেড়ে দাঁড়িয়েছে
৬ দশমিক
শূন্য ২
শতাংশ, যা
মে মাসে
ছিল ৫
দশমিক ৩৫
শতাংশ। এছাড়া
খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি
বেড়ে হয়েছে
৬ দশমিক
৫৪ শতাংশ,
যা মে
মাসে ছিল
৫ দশমিক
শূন্য ৯
শতাংশ। তবে
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের
মূল্যস্ফীতি কমে
হয়েছে ৫
দশমিক ২২
শতাংশ, যা
মে মাসে
ছিল ৫
দশমিক ৭৫
শতাংশ।
জুনে শহরে
সার্বিক মূল্যস্ফীতি
বেড়ে দাঁড়িয়েছে
৬ দশমিক
শূন্য ৩
শতাংশ, যা
মে মাসে
ছিল ৪
দশমিক ৮১
শতাংশ। খাদ্যপণ্যের
মূল্যস্ফীতি বেড়ে
হয়েছে ৬
দশমিক ৭২
শতাংশ, যা
মে মাসে
ছিল ৩
দশমিক ৯৪
শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত
পণ্যের মূল্যস্ফীতি
কমে দাঁড়িয়েছে
৫ দশমিক
২৭ শতাংশ,
যা মে
মাসে ছিল
৫ দশমিক
৭৯ শতাংশ।
এদিকে জুনে
গ্রামে সার্বিক
মূল্যস্ফীতি বেড়ে
হয়েছে ৬
দশমিক শূন্য
২ শতাংশ।
মে মাসে
এটি ছিল
৫ দশমিক
৬৫ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি
বেড়ে হয়েছে
৬ দশমিক
৪৭ শতাংশ,
যা তার
আগের মাসে
ছিল ৫
দশমিক ৬১
শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত
পণ্যের মূল্যস্ফীতি
কমে হয়েছে
৫ দশমিক
১৮ শতাংশ,
যা মে
মাসে ছিল
৫ দশমিক
৭৩ শতাংশ।
আমরা অনেকদিন
ধরেই জেনে
এসেছি বিবিএস
তথ্যের সঙ্গে
বাস্তবের খুব
মিল পাওয়া
যায় না।
তার দুটি
কারণ: ১.
খাদ্য ও
খাদ্যবহির্ভূত উপাদানের
আপেক্ষিক ও
পরিবর্তনশীল গুরুত্বের
পার্থক্য, ২)
সনাতনী ভিত্তি
বিবেচনা থেকে
অর্থনীতির সরে
আসা এবং
অর্থনীতির মূল
নায়ক হিসেবে
নিম্নবিত্ত ও
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর
অনেক এগিয়ে
আসা। এ
কারণেই আমরা
হয়তো দেখতে
পাচ্ছি, ঢাকা
ও চট্টগ্রামে
অনেক ‘টু-লেট’
বা বাড়ি
ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি
বা বাড়ি
খালি করে
মানুষ গ্রামে
চলে গেলেও
যেমন বাড়ি
ভাড়া খুব
কমছে না,
তেমনি নিম্নবিত্ত
বা মধ্যবিত্তের
সদাইপাতিতে যেসব
সবজি, মাছ-মাংস,
তেল, মসলা,
দুধ কিংবা
ওষুধ থাকে,
গেল তিন
মাসে তার
মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে
প্রায় ২৯
শতাংশ। তার
মধ্যে শুধু
যে বর্ষায়
সবজির দাম
বেড়েছে তা
নয়। প্রায়
সবকিছুর দাম
বেড়েছে। মধ্যবিত্ত
যেহেতু খুব
একটা অর্থনৈতিক
সিদ্ধান্তের আলোচনায়
থাকে না,
তাদের মধ্যে
অনেক লুকিয়ে
থাকা উচ্চবিত্ত
বা ‘উপরি
আয়ের’ মধ্যবিত্তও
রয়েছেন এবং
তাদের ভোগব্যয়ে
খুব একটা
কমতি নেই।
তাই সমাজের
এই অংশের
মূল্যস্ফীতি নিয়েও
কথা নেই।
সেই সঙ্গে
সুশাসনের অভাবে ‘হুজুগে’ দাম
বাড়ানো তো
রয়েছেই। ভোগ্যপণ্যের
তালিকায় যদি
কোনো আমদানীকৃত
পণ্য থাকে
তাহলে তো
কথাই নেই।
মোদ্দাকথা, এই
করোনাকালে যারা
বলেছিলেন চাহিদা
হ্রাসের কারণে
মূল্যস্ফীতির কোনো
ভয় নেই,
তারা এরই
মধ্যে ভুল
প্রমাণিত হয়েছেন।
ভবিষ্যতে হয়তো
আরো হবেন।
একই ধারায়
অর্থনীতিবিদদের কেউ
কেউ নোবেল
বিজয়ী অভিজিৎ
ব্যানার্জির মতো
জোরেশোরে লেগে
গিয়েছিলেন টাকা
ছাপানোর জন্য।
অভিজিৎ ব্যানার্জি
যদিও বলেছিলেন,
‘প্রয়োজনে টাকা
ছাপিয়ে হলেও
গরিবদের সাহায্য
করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র বা
ভারত থেকে
ঢাকায় এসে
এটা হয়ে
গেল অনেকটা
‘যেকোনো মূল্যে
যেন টাকা
ছাপাতে হবে।’
অথচ আমি
যখন এই
সাধারণ লেখাটির
পাঁয়তারা করছি
তখন অর্থ
মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
চলছে—এসএমই
ও ক্ষুদ্রঋণ
খাতে আজ
পর্যন্ত প্রণোদনা
বিতরণ এত
নগণ্য কেন?
অবশ্যই প্রয়োজনে
টাকা ছাপানো
লাগতে পারে,
তবে তা
হবে মুদ্রা
সরবরাহ ব্যবস্থাপনার
আলোকে এবং
রাজস্ব আয়ে
ঘাটতি বিবেচনায়।
এক্ষেত্রে আরেকটি
প্রণিধানযোগ্য বিষয়
হলো মুদ্রানীতি।
আমাদের বাজারে
মুদ্রা সরবরাহের
প্রয়োজন হয়েছে
অথচ আমরা
অলস ছিলাম—এমন
প্রমাণ অন্তত
বাংলাদেশে নেই।
বরং উল্টো
ঘটতে যাচ্ছিল
কয়েকবার। মরহুম
কিবরিয়া সাহেব
অর্থমন্ত্রী থাকাকালে
আমরা যখন
বারবার অন্য
কিছু সমপর্যায়ের
দেশের আলোকে
তাকে বাংলাদেশে
‘সভরেন বন্ড’
ইস্যু করার
জন্য চাপাচাপি
করছিলাম, তিনি
বলেছিলেন, ‘বাপু,
আমার এমপি
সাহেবরা যদি
জানতে পারেন
বিদেশ থেকে
এত সহজে
টাকা আনা
যায়, তাহলে
তারা খরচের
বন্যা বইয়ে
দেবেন।’
এবার আসি
রিজার্ভের অর্থে
অবকাঠামো অর্থায়নের
কথায়। আমাদের
রিজার্ভ খুব
ভালো, ৩৬
বিলিয়ন ডলার
রিজার্ভ রেখে
আমাদের কী
লাভ? ইদানীং
আমাদের এসব
কথা প্রায়ই
শুনতে হচ্ছে।
আমার ভালো
লেগেছে ছাত্রজীবনে
যেসব অর্থনীতির
শিক্ষকের শ্রেণীকক্ষে
যোগ দিয়ে
আনন্দ পেয়েছি,
তাদের কেউই
এখন পর্যন্ত
এই ‘বোকাদের’
বা উচ্চ লম্ফনকারীদের
তালিকায় নেই।
৫০-৫৫
বিলিয়ন ডলার
আমদানির দেশে
আপৎকালে তিন
বা ছয়
মাসের আমদানি
বিলের সমান
রিজার্ভ মোটেও
পর্যাপ্ত নয়।
অপ্রত্যাশিত আমদানি
বা ব্যয়
নির্বাহের জন্য
হয়তোবা ৯-১০
মাসের রিজার্ভও
যথেষ্ট নয়।
আমাদের রফতানি
কমছে, কমছে
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স
আয়। এ
সময় আপত্কালীন
প্রস্তুতিতে আমাদের
আরো দক্ষতার
পরিচয় দিতে
হবে। তাছাড়া
আমরা বারবার
যদি স্বীয়
অর্থে বৃহৎ
প্রকল্প চালাতে
যাই তাহলে
প্রকল্প ব্যয়
ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা
একদম ভেঙে
পড়বে, জবাবদিহিতা
আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত
হতে পারে।
মাথা ঠাণ্ডা
রেখে সুবিবেচনাপ্রসূত
সিদ্ধান্ত নিতে
হবে। অনেকেই
বলছেন, বিপদ
আমরা এখনো
দেখিনি, তাই
হুজুগে সিদ্ধান্ত
জাতির জন্য
হতে পারে
আত্মঘাতী। করোনায়
যেখানে গোটা
বিশ্বের ২১৩টি
দেশ বা
ভূখণ্ড আক্রান্ত,
সেখানে আমাদের
তার বিকল্পও
নেই। আমাদের
সমস্যা বেশির
ভাগ আমাদেরই
সমাধান করতে
হবে। বাংলাদেশ
ব্যাংককেও স্থিতধী
হয়ে সিদ্ধান্ত
নিতে হবে,
সরকারের যখন
তখন প্রস্তাবে
লাফিয়ে নয়।
মামুন রশীদ: অর্থনীতি বিশ্লেষক