ক্যান্সার এ শতাব্দীতে একটি অমীমাংসিত বিপর্যয়কর চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ যা আগামী দশকে ২০৪০ সালের মধ্যে আরো লাখ লাখ লোককে আক্রান্ত করতে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার আইএসিআর দ্বারা পরিচালিত গ্লোবোকান ২০২২ পরিসংখ্যান অনুসারে এখন বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১৯ দশমিক ৯৭ মিলিয়নেরও বেশি নতুন কেস, যা ২০৪০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে। ৭০ শতাংশ ক্যান্সার রোগী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন জাতি, লিঙ্গ ও বয়স নির্বিশেষে ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর প্রধান কারণ ক্যান্সার। ক্যান্সার একটি অবাধ্য রোগে পরিণত হয়েছে যা রোগীর ইমিউন সিস্টেমে দমন কার্যকলাপ হিসেবে পরিচিত। এনসিআই রিপোর্টে প্রকাশ হয়, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের মোট বার্ষিক অর্থনৈতিক ব্যয় ছিল ২০৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ২০২০-৫০ সালের মধ্যে ক্যান্সার চিকিৎসার বৈশ্বিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর সরকার ৯০ শতাংশ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহন করে, কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের মাত্র ৩০ শতাংশেরও কম ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে।
ক্যান্সারের নতুন ধারণা: বিজ্ঞানীরা এখন ক্যান্সারের উত্তর জানেন
বিশ্বব্যাপী, ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনের যুগে, মানব জিনোম আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা জিনোমিক প্রোফাইল ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এপিজেনেটিক ঘটনাগুলোর বিভিন্ন পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন। ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, জিনোমিক কোডে একাধিক ডিএনএ পরিবর্তনের কারণে জিনগত অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে একটি সাধারণ কোষ ম্যালিগন্যান্ট কোষে রূপান্তরিত হয়। টিউমার দমনকারী জিনে দমন বা মিউটেশনের সঙ্গে অনকোজিনের ভারসাম্য পরিবর্তনের সঙ্গে অনকোজিন সক্রিয়করণের ফলে সেলুলার সিগন্যালিং দ্বারা কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত প্রসারণের মাধ্যমে যেকোনো অঙ্গের মধ্যে বা শরীরের যেকোনো জায়গায় জমাট বেঁধে "টিউমার বা গলদা" গঠন করে। যেমন স্তন, ফুসফুস, গ্যাস্ট্রিক, কোলন, প্রোস্টেট, লিউকেমিয়াস ও লিম্ফোমাসসহ থাইরয়েড ক্যান্সার। হাইপারঅ্যাকটিভ ম্যালিগন্যান্ট কোষগুলো তখন আশপাশের টিস্যুগুলোয় আক্রমণ করে এবং মেটাস্টেসিস আকারে শরীরের দূরবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে উপস্থিত উপসর্গ দেখা যায় এবং কার্যকলাপ ব্যর্থ হয়ে ক্যান্সারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ক্যান্সারের কারণ ডিএনএর রূপান্তর ও জিনগত অস্থিরতা
খাদ্যাভ্যাস, মেটাবলিজমের পরিবর্তন, খাদ্যে ভেজাল, আয়নাইজিং রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা, বায়ুদূষণ, রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত কারণগুলো দ্বারা ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণ একটি কোষের মধ্যে ডিএনএতে সেকেন্ডারি মিউটেশন ঘটাতে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা লাখ লাখ জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের উৎপত্তির পথে ধাবিত করে। ক্যান্সারের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণগুলোর জন্য সোম্যাটিক মিউটেশনের কারণে ঘটে, বিপরীতে ক্যান্সারের মাত্রা ৫-১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনোমিক মিউটেশন প্রধানত ব্র্যাক-১ এবং ব্র্যাক-২ জিনের ত্রুটির কারণে হয়। পি-৫৩ টিউমার দমনকারী জিন যা পি-৫৩ নামক প্রোটিন তৈরির জন্য নির্দেশনা দেয় যা অনকোজিনকে দমন করে। পি-৫৩ জিনে পরিবর্তন ক্যান্সারের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তারের দিকে পরিচালিত করে।
ক্যান্সারের মলিকুলার বা মূল কারণ নির্ণয়ের গুরুত্ব
উচ্চতর গবেষণা ও বিভিন্ন রোগে উদ্ভাবনী বায়োপ্রযুক্তি প্রয়োগের কারণে স্বাস্থ্যসেবার অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে, সঠিক চিকিৎসা নির্বাচন করার জন্য রোগের সঠিক কারণ এবং কোর্স নির্ধারণ করা অপরিহার্য। ক্যান্সারসহ কোনো রোগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে আমাদের সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে, বিদ্যমান চিকিৎসা প্রদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসেবা সমস্যার কোনো সমাধানই চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব হবে না। বিশেষত ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের ক্ষেত্রে এটি সত্য। ইমিউন হিস্টোকেমিক্যাল স্টেইনিং দ্বারা পর্যাপ্ত টিউমার টিস্যুতে ক্যান্সারের ধরন বা টাইপের নিশ্চিতকরণ এবং সিরাম টিউমার বায়োমার্কারগুলোর পরিমাপ করে টিউমার শনাক্তকরণ একান্ত প্রয়োজন। ক্যান্সারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মলিকুলার মিউটেশন পর্যায়ে ক্যান্সারের প্রাথমিক ধরন নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে।
প্রিসিশন অনকোলজি
সারা বিশ্বে বায়োটেকনোলজি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে প্রিসিশন অনকোলজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিসিশন অনকোলজি অর্থ ক্যান্সারের মিউটেশন ও মলিকুলার প্রোফাইলিং করে সঠিক সময়ে সঠিক রোগীর জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা। ক্যান্সারের মলিকুলার প্রোফাইলিং নির্ণয়ের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ক্যান্সারের জিনোমিক অস্থিরতার প্রাদুর্ভাব খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার ধরন
ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য স্ট্যান্ডার্ড থেরাপি হলো সার্জারি, ননস্পেসিফিক কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ দুই দশক ধরে স্ট্যান্ডার্ড থেরাপি চিকিৎসার ব্যাপক ব্যবহার থাকা সত্ত্বেও উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশে ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর হার কমানো যায়নি। রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি সব টিউমার কোষের কার্যকলাপ ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং ক্যান্সার কোষগুলোর পাশাপাশি স্বাভাবিক কোষগুলোও ধ্বংস করে। এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর জন্য আলাদা এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেম নষ্ট করে দেয়। অধিকন্তু কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপির নির্বিচার ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি ঘটে যা পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
টার্গেটেড থেরাপি
টার্গেটেড থেরাপি হলো নতুন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা, যেখানে নতুন ওষুধ স্বাভাবিক কোষগুলোকে বাদ দিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংসে ব্যবহার করা হয়। মলিকুলার ডায়াগনোসিস এবং বায়োটেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের মিউটেশন খুঁজে পাওয়ার পর টার্গেটেড থেরাপি দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ২০০০ থেকে ক্রমাগত গবেষণা, টার্গেটেড থেরাপি ক্যান্সার কোষগুলোয় মিউটেশন উপস্থিত বা অ্যান্টিজেনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যা ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার কোষগুলোকে সাধারণ কোষ থেকে আলাদা করে। টার্গেটেড থেরাপি ক্যান্সার কোষগুলোর মধ্যে সেলুলার সিগন্যালিং বন্ধ করে এবং নতুন রক্তনালি গঠন বন্ধে কাজ করে। টার্গেটেড থেরাপির প্রচলিত কেমোথেরাপির তুলনায় কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
ক্যান্সারের জন্য ইমিউনোথেরাপি ও ইমিউনভিত্তিক সেল থেরাপি
ইমিউনভিত্তিক সেল থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসায় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে। কেমোথেরাপির আগে ক্যান্সার রোগীদের অটোলোগাস ইমিউন কোষ, সাইটোটক্সিক টি-কোষ বা এনকে কোষগুলোকে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত করা হয়। ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংসের জন্য রোগীর দেহে পুনরায় প্রয়োগ করে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। CAR-T কোষ থেরাপি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ দ্বারা ক্যান্সারের সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য অনুমোদিত। আমরা যদি ইমিউনভিত্তিক সেল থেরাপির মাধ্যমে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারি, তাহলে ক্যান্সার রোগীর নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম দ্বারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) গবেষণার ভিত্তিতে ১ দশমিক ৬৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে ভুগছে। সুচিকিৎসার অভাবে সাত লাখের বেশি রোগী পার্শ্ববর্তী দেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। বাংলাদেশের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের পরিমাণ বছরে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বাংলাদেশে সামাজিক কুসংস্কারের কারণে প্রাথমিক শনাক্তকরণে বিলম্ব, সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের অভাব এবং সঠিকভাবে ক্যান্সারের ধরন নিশ্চিত না করার কারণে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি। অপর্যাপ্ত ডায়াগনস্টিকের কারণে অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক রক্তের নমুনা এবং টিস্যু বায়োপসি, বিশেষ করে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোয় মলিকুলার ডায়াগনোসিসের ওপর ভিত্তি করে ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রদান করা হয়। টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউন থেরাপি চিকিৎসা দিয়ে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ থেকে সাধারণ মানুষের পক্ষে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক রোগ নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রদানে চিকিৎসকরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। দুর্ভাগ্যবশত জটিল রোগ, যেমন ক্যান্সার, চিকিৎসা নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত এবং উন্নত জ্ঞান ছাড়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন। উপরন্তু অনির্দিষ্ট কেমোথেরাপির ব্যবহার চিকিৎসাকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল করে।
SIFCIACT ও BioMed-এর ভূমিকা
২০২০ সালে বাংলাদেশে সেলিমা ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপি অ্যান্ড সেল থেরাপি, বায়োমেড ডায়াগনস্টিকস, জেনারেল অ্যান্ড মলিকুলার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রিসিশন অনকোলজি চালু করা হয়েছে। বায়োটেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যান্সারের সঠিক কারণ নির্ণয় করে আধুনিক চিকিৎসা সরবরাহ করতে পারে।
আমাদের ক্যান্সার সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কীভাবে শনাক্ত করা যায়, প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর সঠিক মলিকুলার প্রোফাইলিং, বায়োটেকনোলজি প্রয়োগের সঙ্গে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং টার্গেটেড থেরাপির পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা সঙ্গে ক্যান্সার ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ, সচেতনতা এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম অপরিহার্য
ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের কাজ ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় প্রদান উভয় ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, চিকিৎসায় সাফল্যের হার বৃদ্ধিতে অবদান রাখে সব ক্যান্সার রোগীকে ফলোআপ প্রোগ্রামে থাকতে হবে।
ঝুঁকি কমিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়?
১. শারীরিক ব্যায়াম
২. একটি সুস্থ, স্থির ওজন রাখুন
৩. খাদ্য গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এড়ানো
৪. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সিরাম বায়োমার্কার পরীক্ষা
অধ্যাপক ডা. তাসনিম আরা: সিইও, সেলিমা ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপি অ্যান্ড সেল থেরাপি, বায়োমেড ডায়াগনস্টিকস, জেনারেল অ্যান্ড মলিকুলার ল্যাব