জাতিসংঘের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতা সংস্থার (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-ওইসিডি) প্রতিবেদনের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বরের বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ, মানোন্নয়ন বা নতুন পণ্য উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক কাজের ব্যাপারে একেবারেই নির্লিপ্ত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওইসিডি কর্তৃক প্রণীত ‘উৎপাদন রূপান্তর নীতি পর্যালোচনা’ (প্রডাকশন ট্রান্সফরমেশন পলিসি রিভিউ-পিটিপিআর) শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের তথ্য থেকে দেখা যায়, নতুন পণ্য ও সেবা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবদান প্রায় শূন্যের কোটায়। আর বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাত যেহেতু মূলত বেসরকারি খাতনির্ভর, সেহেতু বণিক বার্তার ওই প্রতিবেদনে এ অনাগ্রহ ও নির্লিপ্ততাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রধানত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দায় হিসেবে দেখা হয়েছে। অবশ্য তাদের এ দেখার মধ্যে মোটেও কোনো ভুল নেই, তবে অসম্পূর্ণতা রয়েছে এবং সেটি এই যে এ জাতীয় গবেষণা ও উদ্ভাবনের (আরঅ্যান্ডডি) প্রয়োজনীয়তা মূলত বেসরকারি খাতের হলেও এ কাজের জন্য বাংলাদেশে একাধিক রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যাদের ভূমিকা বেসরকারি খাতের মতোই সমান হতাশাব্যঞ্জক। অতএব, এক্ষেত্রে উল্লিখিত উভয় খাতের ভূমিকা নিয়েই এখানে খানিকটা আলোকপাতের চেষ্টা করা হলো।
নতুন পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন এবং ক্রেতা ও ভোক্তার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের নকশা পরিবর্তন, গুণগত মানের উন্নয়ন ও এসবের বহুমুখীকরণ আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাণিজ্য ও অর্থনীতির চলমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এগুলোর নিয়মিত চর্চা ও বাস্তবায়ন শুধু জরুরিই নয়, এসবের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকিও তৈরি করতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বেসরকারি খাত আপাতভাবে বিষয়টি নিয়ে সেভাবে ভাবছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং তাদের ভাবনায় সম্ভবত কাজ করছে এ বোধ যে গবেষণা ও উদ্ভাবনের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে তা যদি চলতি উৎপাদনের কাজে ব্যয় করা যায়, তাহলে সেটি তাদের জন্য অধিকতর মুনাফা অর্জনে সহায়ক হবে। তাছাড়া এটাও লক্ষণীয় যে গবেষণা ও উদ্ভাবনের পেছনে অর্থ ব্যয় না করলেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না বা কাজটি মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক কাজ থেকে যে ধরনের ফলাফল আশা করা হয়, সেটি যদি কোনো গবেষণা ছাড়া এমনিতেই মিলে যায়, তাহলে আর কষ্ট ও ব্যয় বাড়িয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন কি?
বস্তুত সে রকম একটি অবস্থাই এখন দেশে বিরাজ করছে। নিম্ন ক্রয়ক্ষমতার এ দেশে ক্রেতা ও ভোক্তা উভয়েই বাজারে মোটামুটি মানের পণ্য পেয়েই খুশি। অতীতে দীর্ঘকাল ধরে অতি নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত এ ক্রেতারা অতিসামান্যতেই এতটা তুষ্ট যে চলতি ধারার গুণগত মানেই তারা রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। বিশ্ববাজারের উন্নত মানের পণ্যের সঙ্গে তাদের অধিকাংশেরই তেমন একটা পরিচয় নেই বিধায় তারা হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, অতীতের মান বিবেচনায় সেটাকেই মহার্ঘ্য ভেবে পরিতৃপ্ত হচ্ছেন। আর সেটাকেই সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের উৎপাদকরাও এসব পণ্য থেকে বলতে গেলে অনেকটা একচেটিয়া মুনাফাই লুটছেন। আর দেশে যেহেতু এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা চালু নেই, সেহেতু এ একচেটিয়াত্ব মেনে নেয়া ছাড়া ক্রেতার হাতে বিকল্প কোনো উপায়ও নেই। আর এরূপ একচেটিয়াত্বপূর্ণ মুনাফাসহায়ক পরিস্থিতিতে পণ্য বা সেবা নিয়ে উৎপাদকরা কেনই-বা গবেষণায় আগ্রহী হবেন? তারা তা হচ্ছেনও না।
প্রায় একই কথা প্রযোজ্য পণ্য রফতানি বা আমদানির ক্ষেত্রেও। অতি নিম্ন মজুরিতে উৎপন্ন পণ্যের গায়ে বিশ্বখ্যাত নামিদামি কোম্পানির লোগো বসিয়ে দিয়ে পণ্য রফতানির মাধ্যমে যেহেতু আয়-উপার্জন মোটামুটি ভালোই হচ্ছে, সেহেতু নিজেদের পণ্যের স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড বা পরিচিতি গড়ে ওঠল কিনা তা নিয়ে তাদের মোটেও কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং নিজেদের উৎপাদিত পণ্যে তারা যে নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো এঁকে দিতে পারছেন, এতেই তারা খুশিতে আটখানা। কিন্তু তারা একবারের জন্যও ভেবে দেখছেন না যে ডেনিম, ওয়েব জিন্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকের গায়ে নিজেদের লোগো বসিয়ে তা বাজারজাত করতে পারে, তাহলে ওই পোশাকের বাংলাদেশি মূল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কেন নিজেরাই ব্র্যান্ড গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন না? এটি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার দৈন্যই শুধু নয়, দীর্ঘকাল ধরে একটি আমদানিনির্ভর অর্থনীতির মধ্যে বসবাস করতে করতে আন্তর্জাতিক বাজারে যে নিজেদের কোনো স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড থাকতে পারে এ সাহসটুকু পোষণ করতেও ভয় পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে বলি—এতটা ভীতি ও হীনম্মন্যতায় ভোগা একেবারেই অনুচিত। আর সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজটি করতে হলে এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন হচ্ছে এসব পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে নিরন্তর গবেষণা।
বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার মধ্যে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন উন্নত মানের পণ্য যেমনি রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানা জাতের অসংখ্য মানহীন পণ্যও। ওইসব মানহীন পণ্যের বিপরীতে তো বটেই, এমনকি উল্লিখিত মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার সামর্থ্যও বাংলাদেশের রয়েছে। কিন্তু কিছুটা হলেও হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা এই যে নামিদামি ওই ব্র্যান্ড পণ্যগুলো বাংলাদেশের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য ও মুনাফা করে গেলেও তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের ব্র্যান্ডকে খ্যাতিমান ও সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলার তেমন কোনো উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাই আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না। আর এ ব্যাপারে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ না থাকার কারণেই বস্তুত পণ্য নিয়ে তাদের তেমন কোনো গবেষণাও নেই এবং সে ধরনের গবেষণার প্রয়োজন তারা বোধ করছেন বলেও মনে হয় না।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে মোটামুটি বোঝা গেল যে পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত কোনোটি নিয়েই গবেষণা পরিচালনা বা এ কাজে বিনিয়োগের তেমন কোনো আগ্রহ এ দেশের বেসরকারি উৎপাদকদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে এবং এ না থাকার কারণগুলো সম্পর্কেও ওপরের আলোচনা থেকে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া গেল। কিন্তু রাষ্ট্র খাতের যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর এ জাতীয় গবেষণার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে, তারা কী করছে? ১৯৭৩ সালে স্থাপিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) গত ৫০ বছরে শিল্প খাতের উন্নয়নে এমন কী কী গবেষণামূলক কাজ করেছে, যেটি দেশের সাধারণ শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কাজে এসেছে? তারা এমন কী উদ্ভাবন করেছে, যেটি সাধারণ মানুষ জানে, যেমন করে সাধারণ মানুষ জানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত নানা জাতের ধানের উচ্চফলনশীল বীজের কথা কিংবা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত নানাজাতের ফসলের কথা?
দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল যখন ছিল পাট, তখন পাটকাঠি থেকে কাগজ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বিসিএসআইআর প্রথম আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু এর পরবর্তী পাঁচ দশকে স্পিরুলিনা নামক সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে বিস্কুট উৎপাদনের মতো দু-একটি অতি সাদামাটা প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন ব্যতীত এ প্রতিষ্ঠানের অবদান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। অথচ বাংলাদেশের শিল্প-গবেষণার ক্ষেত্রে এটি এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে, অনুমান করি, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তারা বলবেন যে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকা ও জনবলস্বল্পতাই এর মূল কারণ। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ও মৌলিক গবেষণাকাজের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়ে তা পাওয়া যায়নি, এরূপ ঘটনা কখনো ঘটেছে বলে কি তারা উদ্ধৃত করতে পারবেন? বিসিএসআইআরের ওয়েবসাইটে ১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সময়ে তাদের উদ্ভাবিত ১ হাজার ১২টি শিল্পপণ্যের নাম রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অতি মামুলি পণ্যের সংখ্যাই অধিক এবং এর চেয়ে ভালো মানের পণ্য বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারেন। তাহলে যে আশা ও লক্ষ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি কি তাহলে শুধু কাগজে-কলমেই থেকে যাবে?
স্বীকার্য যে গবেষণামূলক কাজে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের মধ্যে ব্যাপক অনীহা ও বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি আবার এটাও সত্য যে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে মৌলিক গবেষণার ব্যাপারে শিল্প-গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় উদ্যম ও চিন্তাভাবনারও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কৃষি খাত নিয়ে বিআরআরআই বা বিএআরআইর যেসব প্রমাণিত উদ্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তুলনাযোগ্য দু-চারটি উদ্ভাবনা কাজের উদাহরণ কি শিল্প-গবেণার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোয় রয়েছে? মোটেও না।
দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইদানীং বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ মর্মে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে যে তাদের উৎপাদিত ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য বিদ্যুৎসাশ্রয়ী, কেউ কেউ বলছেন তাদের পণ্য পরিবেশবান্ধব, কেউ কেউ তা স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা স্বাস্থ্যের জন্য অক্ষতিকর বলে দাবি করছেন। এসব দাবি বা বক্তব্য সত্য হয়ে থাকলে তা নিঃসন্দেহে ওই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমিত গবেষণারই ফলাফল। কিন্তু বিভিন্ন শিল্পপণ্যের এরূপ বা এর চেয়েও উচ্চতর উপযোগসংক্রান্ত গুণাবলি বাড়িয়ে তোলার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কি আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ বা কার্যক্রম হাতে নিতে দেখা গেছে?
পাট নিয়ে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) আজ পর্যন্ত যা যা করেছে, তা মূলত পাটের উৎপাদন উন্নয়নবিষয়ক অর্থাৎ কৃষি গবেষণাসংক্রান্ত কাজ এবং সেক্ষেত্রেও তাদের অবদান আহামরি তেমন কিছু নয়। পাট চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উর্বরতা গুণের বিবেচনায় বাংলাদেশের মাটি চীন ও ভারতের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে। অথচ চীন ও ভারতে পাটের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন যেখানে যথাক্রমে ৩৬ হাজার ৮৯৭ হেক্টোগ্রাম ও ২৫ হাজার ৫৩৬ হেক্টোগ্রাম, সেখানে বাংলাদেশে এ উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে ২১ হাজার ২৮৩ হেক্টোগ্রাম। সেক্ষেত্রে এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজেআরআই গত ৭২ বছরে তাহলে করলটা কী? আর পাটভিত্তিক শিল্প-গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটির তো কোনো ছায়াও চোখে পড়ছে না। অথচ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে কি বিশাল স্থাপনা নিয়ে রাজাধিরাজের মতোই না এর অবস্থান!
অন্যদিকে পণ্যের মানোন্নয়নসংক্রান্ত গবেষণার কথা বলি। বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) একটি নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিষ্ঠান এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্যও অত্যন্ত সীমিত। ফলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণমূলক কাজগুলোই যেখানে তারা ঠিকমতো করতে পারছে না, সেখানে তাদেরকে গবেষণার কথা বলা আপাতদৃষ্টে খুবই বেমানান ও অন্যায্য বলে মনে হবে। কিন্তু তার পরও বলি, পণ্যের গুণগত মান যাতে এর উৎপাদকরা সংরক্ষণ করতে পারেন বা এর উন্নয়ন ঘটাতে পারেন, সেজন্য তাদের (বিএসটিআই) পক্ষেও কিছু গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেয়া সম্ভব বলে মনে করি। আর আমাদের অনেকে হয়তো জানিই না যে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মান সংস্থার (সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন-এসএআরএসও) সদর দপ্তর এখন ঢাকায় অবস্থিত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসএআরএসওর সঙ্গে মিলে বিএসটিআই এ জাতীয় গবেষণার কাজ হাতে নিতে পারে বলে মনে করি।
এভাবে নানা উদাহরণ যুক্ত করে এ আলোচনাকে আরো দীর্ঘ করা যায় এবং বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য কখনো কখনো সেটি দরকারিও। কিন্তু কথা হচ্ছে, তাতে করে দেশের রাষ্ট্র খাতের শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘুম ঘুম মেজাজ ও আচরণের ক্ষেত্রে কি আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে? যদি তা না আসে, তাহলে ওইসিডির প্রতিবেদনে—যে বাংলাদেশের শিল্প খাতে নয়া পণ্য উদ্ভাবন, পণ্যের বহুমুখীকরণ, গুণগত মানোন্নয়ন ইত্যাদি ব্যাপারে গবেষণামূলক উদ্যোগ ও অবদান প্রায় শূন্যের কোটায় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, দেশ কি তাহলে সেখানটিতেই থেকে যাবে? দেশের শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি উদ্যোক্তা উভয়েরই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে মনে করি।
আবু তাহের খান: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত
সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়