আবার আলোচনায় রুপি ও ইউয়ানে লেনদেন। ভারতের রুপিতে বাণিজ্যের বিষয়টি এক দশক ধরে আলোচনায় থাকলেও গত বছরই মূলত এটি প্রকাশ্যে আসে। নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের এ উদ্যোগ এক দশক আগেই নেয়া হয়েছিল। সে সময় নানা ঝুঁকি বিবেচনায় প্রস্তাবটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এ দফায় প্রস্তাবটি আসে ভারতের একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে। এরপর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। তার পরও সম্ভাবনার খোঁজে সবাই। বাংলাদেশ যাতে ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করতে পারে, সম্প্রতি সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। বিষয়টি এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। চীনের ইউয়ান ব্যবহার করে বাণিজ্য ও লেনদেনের বিষয়টিও কিছু দূর এগিয়েছে। তবে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেনি এখনো। রুপি বা ইউয়ানে বাণিজ্যের যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু ঝুঁকি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে ভারতের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে রুপিতে লেনদেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই। ভারতের দুটি ব্যাংক লেনদেনের হিসাব খুলবে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকে। একইভাবে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংক ভারতীয় দুটি ব্যাংকে তাদের লেনদেনের হিসাব খুলবে। ফলে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা ডলারে রূপান্তর করতে হবে না। বিনিময় হার হবে সরাসরি টাকা থেকে রুপি বা রুপি থেকে টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন বা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করবেন, তারা ওই ব্যাংক হিসাবে ভারতীয় রুপি যোগ করতে পারবেন। একইভাবে কোনো ভারতীয় বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় বা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতে ব্যাংক হিসেবে টাকা যোগ করতে পারবেন।
কভিড-১৯-এর ধাক্কার পাশাপাশি প্রায় এক বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে দেশে ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সংকটও তৈরি হয়েছে ডলারের। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে পণ্যের দাম। তাতে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে ডলার সংকট আরো প্রকট হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশ। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত নয়। তার পরও কিছু দেশ এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে। রাশিয়া, মরিশাস, ইরান ও শ্রীলংকার সঙ্গে ভারত রুপিতে বাণিজ্যও শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের জন্য বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিচ্ছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে ১৯৬০-এর দশকে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান এসব দেশ ভারতীয় রুপি গ্রহণ করত। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম বটে। চীন বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেশ। তারা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছিল ইউয়ানে বাণিজ্য করতে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের প্রচেষ্টাকে বাড়তি গতি দিয়েছে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে আরবিআই ‘ইন্টারন্যাশানাল সেটেলমেন্ট অব ট্রেড ইন ইন্ডিয়ান রুপি’ নামের একটি পদ্ধতি চালু করেছে। যার মাধ্যমে ওই বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে ভারত প্রথম ভারতীয় রুপিতে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পন্ন করে। ধীরে ধীরে রাশিয়া ছাড়া আরো অনেক দেশ ভারতের এ বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেসব দেশে ডলারের সংরক্ষণ কম অথবা যেসব দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলার ব্যবহার করতে পারে না, তাদের কাছে ভারতের রুপি ও চীনের ইউয়ান বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে।
বিদেশে রুপির প্রচার এবং আগ্রহ বৃদ্ধির জন্যই ‘স্পেশাল রুপি ভস্ত্রো অ্যাকাউন্ট’-এর বন্দোবস্ত করেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য ভারতীয় মুদ্রায় করা সম্ভব। সে পদ্ধতিও তুলনামূলক সহজ। ভস্ত্রো অ্যাকাউন্ট বিদেশের ব্যাংকে খোলা হয়। কিন্তু তা পরিচালনা করে দেশীয় ব্যাংকগুলোই। আরবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে ১৮টি দেশে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার এবং ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হয়েছে। রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, বোতসোয়ানা, জার্মানি, ব্রিটেন, ফিজি, গায়ানা, ইসরায়েল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মিয়ানমার, নিউজ়িল্যান্ড, ওমান, তানজ়ানিয়া, উগান্ডার মতো মোট ১৮টি দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআইয়ের তালিকায় আছে। ডলারের বিকল্প হিসেবে তারা ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্যে উৎসাহ প্রকাশ করেছে। ভারত বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে কিছু পরিমাণে রুপির ব্যবহার করছে। যেমন রাশিয়া-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনে রুবল ও রুপির হিসাব খোলা হয়েছে এবং তারা রাশিয়াকে রুপিতে অর্থ পরিশোধ করছে। আবার রাশিয়াও ভারতকে রুবলে অর্থ পরিশোধ করছে। শুধু রাশিয়া নয়, যাদের সঙ্গে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সঙ্গেও ভারত কিছু পরিমাণে রুপিতে অর্থ পরিশোধের পথে হাঁটছে।
ভারতের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে রুপিতে বাণিজ্যের পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে লেনদেন করতে পারবেন বলে আশা করছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে বাংলাদেশ যেখানে ঘাটতিতে আছে, সেখানে রুপি ও টাকার লেনদেনের প্রস্তাব তত্ত্বগতভাবে ঠিক মনে হলেও বাস্তবে ভারত লাভবান হবে এবং বাংলাদেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ভারতে এমন অনেক পণ্য আছে যার কাঁচামাল তাকে ডলারে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ওই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করতে গেলে রফতানিকারকরা বেশি দাম নির্ধারণ করতে পারে। ফলে ডলার সংকটের কারণে যে উদ্দেশ্যে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনের কথা বলা হচ্ছে সেটি দিনশেষে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক থাকবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এছাড়া একবার রুপি-টাকায় লেনদেনে গেলে একপর্যায়ে সেটি একপক্ষীয় মুদ্রা বা রুপিভিত্তিক বিনিময় কাঠামোয় উপনীত হতে পারে। বাণিজ্যিক ঘাটতি থাকা অবস্থায় লেনদেনে গেলে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু চাহিদার মাত্র ১২-১৩ শতাংশ রুপি আছে। সেক্ষেত্রে ভারত থেকে ঋণ করে কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য কমিয়ে অথবা ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করে ওই বাণিজ্য অব্যাহত রাখার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তখন ভারত থেকে ঋণের সুদের চাপ থাকবে আবার ডলার ভাঙালে লোকসান হবে। রুপি-টাকায় লেনদেন একবার শুরু হলে এটি শুধু স্থানীয় পণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিভিন্ন সেবামূলক বাণিজ্য যেমন ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশী নাগরিকরা ভারতে চিকিৎসা, পর্যটন ও কেনাকাটা বাবদ প্রচুর ব্যয় করেন। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৪ শতাংশ হয় ভারত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের। ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ৪১৯ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি এবং বাংলাদেশের হাতে যেহেতু যথেষ্ট পরিমাণ রুপি নেই। এ কারণে দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলারের যে রফতানি আয় বাংলাদেশ করছে, সে পরিমাণ বাণিজ্য ভারতীয় মুদ্রায় করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর বেশি পণ্য রুপিতে কেনা যাবে না, কারণ রফতানি ছাড়া রুপি পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশকে আমদানি মূল্যের বাকি অংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের আমদানি ব্যয় আগের মতোই মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে হবে। ফলে বাংলাদেশের খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ কম।
অন্যদিকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বাণিজ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা। এরই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত ডলার সংকটের মুখে গত বছর বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে নেয়া ঋণ চীনা ইউয়ানে পরিশোধে সম্মতি দিয়েছে রাশিয়া। এর আগে ডলারে নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া বাংলাদেশের কাছে ঋণের অর্থ চেয়েছিল রুবলে। তবে রুবলে ঋণ পরিশোধ সম্ভব না জানিয়ে চীনা মুদ্রায় সম্মতি দেয় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় ইউএস ডলার, ইউরো, জাপানি ইয়েন, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড ও কানাডিয়ান ডলারের পাশাপাশি ইউয়ানে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিষ্পত্তির সুযোগ দিয়েছিল। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যাংকগুলো এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। এরপর গত বছর কয়েকটি ব্যাংক চীনা মুদ্রায় ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট খোলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অথরাইজড ডিলার শাখা চীনের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে ইউয়ান মুদ্রায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। চীন হচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ হাজার ৮২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে আমদানি করা হয় ১৮ হাজার ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। রফতানি করা হয় ৬৮৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবসময় ডলার ব্যবহার করে আসছে। তাই চাইলেই ইউয়ানের মাধ্যমে লেনদেন করা যাবে কিনা সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। ইউয়ানের দাম কীভাবে নির্ধারিত হবে? রফতানি কম হওয়ায় ইউয়ানের জোগান খুবই কম। এ অবস্থায় বাণিজ্যের লেনদেন ও প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে চীনা মুদ্রা কতটা ব্যবহার করা যাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছিল চীন। দেশটি ইউয়ানকে ডলারের বিকল্প আন্তর্জাতিক মুদ্রা করতে চাইছে। এ প্রচেষ্টায় সম্প্রতি কিছুটা সফলতা পেয়েছে চীন। গত মার্চের সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, আন্তঃসীমান্ত (ক্রস-বর্ডার) লেনদেনে প্রথমবারের মতো ডলারের পরিবর্তে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করছে চীন। বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ ‘হাই ভ্যালু কারেন্সি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনের ইউয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম। আইএমএফের কারেন্সি বাস্কেটে ইউয়ান স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৬ সালে। এর পর থেকে আইএমএফের পর্যালোচনায় মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।
অন্যান্য মুদ্রায় বৈদেশিক লেনদেনে একটি বড় সমস্যা হলো তার জোগান। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আসে রফতানি এবং রেমিট্যান্স থেকে। দুটিই আসে ডলারে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের, আর ভারত ও চীনের সঙ্গে ঘাটতি। ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে রুপি ও ইউয়ানে লেনদেন করতে গেলে বিপুল পরিমাণ রুপি ও ইউয়ানের প্রয়োজন পড়বে, যা জোগাড় করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দেশ দুটি যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করে সে পরিমাণ রুপি বা ইউয়ান গ্রহণ করতে পারে বা দেশগুলোকে ওই পরিমাণ বাংলাদেশের অর্থ গ্রহণের প্রস্তাব দিতে পারে। ব্যবসায়ীরা দেখবেন বিনিময়ে টাকার মূল্যমানের সঙ্গে ইউয়ানের মূল্যমান কত হয়। তাদের আশ্বস্ত করতে হবে। রফতানিকারকদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তারা কত ডলার আয় করছে। যারা রফতানি করছে তারা রুপি বা ইউয়ানে পরিশোধ নাও চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে জটিলতা বাড়বে। তাছাড়া রুপি বা ইউয়ানের মূল্য কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। বড় বিষয় হলো, দেশের ব্যাংকগুলোকেও এর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কীভাবে এটি পরিচালিত হবে, রুপি বা ইউয়ানের ক্ষেত্রে কোনো প্লাটফর্ম তৈরি করা হবে নাকি ব্যাংক টু ব্যাংক পার্থক্য হবে, তাও বিবেচনার বিষয়।
চীন এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী অর্থনীতি। তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো এবং তাদের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে চীনের মুদ্রার ওপর ভরসা করা যায়। ভারতের অর্থনীতি চীনের মতো শক্তিশালী না হলেও তারাও বড় এবং সম্ভাবনাময়। তাছাড়া বাংলাদেশের বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। তাই রুপিতেও বাণিজ্য হতে পারে। ইউয়ান ও রুপি এখনো ডলারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তবে চীন ও ভারতের ওপর বাংলাদেশ আস্থা রাখতে পারে বন্ধু দেশ হিসেবে। চীন ও ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার উদ্যোগটি বাংলাদেশের ডলার রিজার্ভের ওপর চাপ প্রশমনে সাময়িক সহায়তা করবে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে দেশগুলোয় রফতানি বাড়ানোর মাধ্যমে আরো রুপি ও ইউয়ানের জোগান বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। দেশগুলোকে এ সুযোগে চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে, যাতে তারা আরো পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। সর্বাগ্রে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিষয়টিতে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ধরনের বিনিময়ে বাংলাদেশের বিকল্প পেমেন্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিও আছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
এম এম মুসা: সহযোগী সম্পাদক, বণিক বার্তা