আলোকপাত

বাংলাদেশের গ্রামীণ শ্রমজীবীদের অবস্থান ও করণীয়

ক. জল সেচ এখন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হচ্ছে—ডিপ টিউবওয়েল বা শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে। মাধ্যাকর্ষণকে ব্যবহার করে বা ড্রেন কেটে যেখানে নদী-খাল-পুকুর বা বিল থেকে আগে জমিতে পানি আনা

বলা হয় গ্রামীণ কৃষি খাত বাংলাদেশে এখন প্রযুক্তির পরিবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এ প্রযুক্তির পরিবর্তনের ক্ষেত্রগুলো যদি আমরা খুব সংক্ষেপে চিহ্নিত করতে চাই তাহলে সেগুলো নিম্নরূপ:

ক. জল সেচ এখন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হচ্ছে—ডিপ টিউবওয়েল বা শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে। মাধ্যাকর্ষণকে ব্যবহার করে বা ড্রেন কেটে যেখানে নদী-খাল-পুকুর বা বিল থেকে আগে জমিতে পানি আনা যেত, তা এখন সম্ভব নয় বা ক্রমাগত কমে আসায় তার ওপর মানুষ এখন আর নির্ভর করতে পারছে না। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে কোথাও কোথাও এখনো জলাশয়গুলো থেকে Power Pump-এর মাধ্যমেও জল সেচ হতে পারে। খ. জমি চাষ এখন অনেক জায়গায়ই লাঙল-হাল-বলদের পরিবর্তে Power Tiller বা ট্রাক্টর দিয়ে করা হচ্ছে। গ. কোথাও কোথাও ধান কাটার বিষয়টিও Harvester দিয়ে হচ্ছে।

এসব প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষিতে একদিকে শ্রমের চাহিদা কমেছে, অন্যদিকে পুঁজির চাহিদা বেড়েছে। এতে কৃষির ধনবাদী রূপান্তর ত্বরান্বিত হওয়ার কথা ছিল। তা কিন্তু হচ্ছে না। এ সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে এ কুটাভাষের (Paradox) ব্যাখ্যার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

কেন চিরায়াত ধনবাদী কৃষি বাংলাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে না?

প্রথমত, ধনবাদী কৃষি সম্প্রসারিত হওয়ার জন্য দরকার মজুরি শ্রমিক ও উদ্যোক্তা চাষী এবং লাভজনক বৃহদায়তন বাণিজ্যিক কৃষি। অর্থাৎ ফসলের লাভজনক ক্রমপ্রসারণশীল বাজার, কৃষিতে অধিকতর পুঁজি বিনিয়োগ ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও মজুরি শ্রমের প্রসার। এজন্য উদ্যোক্তা কৃষকের হাতে পুঁজি (সস্তায় ঋণে বা নিজস্ব সঞ্চয় থেকে) থাকতে হবে। কিন্তু গ্রামে কৃষি ঋণ সুলভ নয়, সুদের হার অনেক বেশি। ওই সুদে পুঁজি ধার নিয়ে কৃষিতে খাটালে ফসল বিক্রি করে ওই ঋণ পরিশোধ হয় না। তাই উদ্যোক্তা চাষীরা এ ঝুঁকি নিচ্ছেন না। Subsistence Crop বা ধানের বদলে বা কম মূল্যের ফসলের বদলে যারা বেশি মূল্যের লাভজনক ফসল ফলাতে পারেন, যেমন বিশেষ ধরনের ফল-শাক-সবজি-ফুল বা রফতানিযোগ্য ফসল ফলাচ্ছেন, তারা কিন্তু কৃষিতে পুঁজিবাদী বিনিয়োগে কিছুটা আগ্রহী হন। সেসব খাতে ঋণ, জ্ঞান এবং বাজারে প্রবেশাধিকার থাকলে এ ধরনের বাণিজ্যিক কৃষির প্রতিযোগিতামূলক বিকাশ ঘটার বিপুল সম্ভাবনা বাংলাদেশে আছে। বর্তমানে কিছু শহুরে উদ্যোক্তা এক ধরনের Contract Farming-এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক কৃষি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শহর থেকে এসব খামার বা বাগান বা কন্ট্রাক্ট চাষীরা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এখানে পুঁজিবাদী সম্পর্ক কিছু হলেও গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। উত্তরবঙ্গের নতুন চা বাগানগুলোয় কাজী ফার্মে তা দেখা যায়। তবে সেখানে কৃষি শ্রমিকরা কিছুটা যৌথভাবে কাজ করলেও তারা যৌথভাবে এক জায়গায় বসবাসকারী নন এবং একটি যৌথ দরকষাকষির এজেন্ট বা ট্রেড ইউনিয়নে তারা সংগঠিত হতে পারেননি।

মাছ, পশু-পাখি-হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যেসব কৃষিকাজ আগে পারিবারিকভাবে উৎপাদিত হতো সেসব খাত এখন বাণিজ্যিকভাবে চলছে এবং সেখানেও ছোট আয়তনে এখন পুঁজিবাদী বিনিয়োগ ও মজুরি শ্রমের প্রসার ঘটতে দেখা যায়। ছোট ও মাঝারি পুঁজির মালিকরা বৃহৎ এগ্রো বিজনেসের অধীনে থেকে এগুলো চালান। অনেক সময় কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমেও এগুলো চলছে।

মূলত পুঁজিবাদী বিকাশের জন্য যে পুঁজি, উদ্যোক্তা, বাজার ও প্রযুক্তির সমন্বয় দরকার তা না থাকায় এবং কৃষিকাজ এখনো উচ্চ হারে লাভজনক না হওয়ায় বা পুঁজির দাম/সুদ বেশি হওয়ায় এবং বাজারে সিন্ডিকেট বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দোর্দণ্ড প্রতাপ থাকায় গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তি পুঁজির বিকাশ ত্বরান্বিত হচ্ছে না। এটা নিয়ে ম্যাক্রো পলিসিপ্রণেতাদের ভাবতে হবে। কীভাবে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের গ্রামাঞ্চলে প্রধান উৎপাদকে পরিণত করা সম্ভব হবে তা নিয়ে তাদের ভাবতে হবে। যতদিন গ্রামে এদের শক্তি শহুরে পুঁজির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে ততদিন গ্রামে গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদের উত্থান হবে না।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যমান উৎপাদন সম্পর্ক

এ কথা ঠিক যে গ্রামাঞ্চলে যেকোনো কৃষিকাজের অন্যতম পূর্বশর্ত ‘আবাদযোগ্য’ জমির মালিকানা। এমনিতেই বাংলাদেশে জমি তিন ফসলি হলে বা কমপক্ষে দুই ফসলি হলে তার একটি কৃষিজ ব্যবহারের অপরিহার্যতা রয়েছে। আইনি কারণ ও খাদ্যশস্য বা খোরাকি সংগ্রহের জন্য ধান উৎপাদনে জমির ব্যবহার এখনো টিকে রয়েছে এবং খাদ্যনিরাপত্তার জন্য তা টিকে থাকা প্রয়োজনও বটে। কিন্তু সেখানে জমিগুলোর খণ্ডীকরণ এত বেশি যে বৃহদায়তন কৃষি খামার সেখানে ধান উৎপাদনের জন্য হলেও গড়ে তোলা সহজে সম্ভব হয় না। প্রয়োজনমতো বর্গা নিয়ে বা জমি কিনে একত্রীকরণ করে বৃহদায়তন পুঁজিবাদী শস্য খামার গড়ে তোলা অসম্ভব না হলেও সেদিকে পুঁজিবাদী কৃষির অগ্রগতি হচ্ছে না। কারণ এসব বিভিন্ন জমির মালিকরা ‘‌নববধূর গয়নার বাক্সের মতো’ জমিকে আঁকড়ে ধরে আছেন। উত্তরাধিকারী আইনে জমির খণ্ডীকরণে অব্যাহত রয়েছে। তারা প্রয়োজনে টুকরো টুকরো করে বেশি পরিবারের মধ্যে জমি বণ্টনে আগ্রহী, কারণ তাতে খাজনা প্রাপ্তি সর্বোচ্চ হয়।

ফলে এখন পর্যন্ত বাজার প্রতিযোগিতায় দুটি মেরুতে (ভূমিহীন শ্রমিক—বৃহৎ ভূমি মালিক) সমাজকে বিভক্ত করার পরিবর্তে কৃষিতে চলছে জনমিতিমূলক নিঃস্বকরণ (Demographic Pauperization) প্রক্রিয়া। বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে এখানে নানা ধরনের উল্টো বর্গা/ভাড়া প্রথা চালু হতে। দেখা যাচ্ছে জমিগুলো টুকরো টুকরোভাবে শ্রমবহুল পরিবারগুলোকে বর্গা বা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। তারা সেখানে নিদারুণ কঠোরভাবে পারিবারিক শ্রম ব্যবহার করে অর্থাৎ কম খেয়ে (Under consumption) ও বেশি কাজ (Over work) করে ফসল ফলাচ্ছেন। অংশত পারিবারিক ভরণপোষণের জন্য, অংশত বিক্রি করে ভাড়া বা ঋণ শোধের জন্য (পুঁজিটা যেহেতু উচ্চ হার সুদে এনজিও বা কৃষি ব্যাংক থেকে নেয়া) এবং অংশত অকৃষিজ প্রয়োজন মেটানোর জন্য (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অকৃষিজ পণ্য)। এ পারিবারিক কৃষি খামারগুলোয় বছরের সারা সময় একটি পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে শ্রম ভাগাভাগি করে আত্মনিয়োজনে ব্যাপৃত থাকেন। খুব প্রয়োজন হলে পাশাপাশি পরিবারগুলো ধান কাটার সময় একে অন্যকে একত্রে সহযোগিতাও করে থাকে। তবে যখন জমিতে কাজ থাকে না তখন তারা অন্য নানা অকৃষিজ কাজে শ্রমশক্তি বিক্রি করে থাকে বা যাকে বলা হয় ‘‌‌টুকটাক’ করে বিচিত্র পেশার মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে। এ প্রবণতা এখন এসব পরিবারের বউ-ছেলে-মেয়ে-গৃহকর্তা সবার মধ্যেই দেখা যায়। এ অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক বা Casual Agricultural Labour হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের আধা সর্বহারা শ্রমিক (Semi Proletariat worker), কৃষি-অকৃষিতে নিয়োজনযোগ্য বিশাল এক অর্ধবেকার শ্রমশক্তির সস্তা রিজার্ভ ভাণ্ডার। এদের গ্রামে একটি পারিবারিক আবাস আছে, কিন্তু প্রায়ই এরা কোনো আবাদি জমির মালিক হন না। হলেও তা এত কম যে জমি ভাড়া না নিলে তাদের চলে না, আবার কাজ না থাকলে শ্রমশক্তি বিক্রি করেই এদের তখনকার মতো জীবন নির্বাহ করতে হয়। এরা একই সঙ্গে শ্রমিকও-মালিকও।

গ্রামীণ শ্রমজীবী: গ্রামের প্রধান উৎপাদন শক্তি

গ্রামীণ এ পরিবারগুলোই হচ্ছে বিচিত্র পেশায় ভাসমান গ্রামীণ কৃষি-অকৃষি পেশায় নিয়োজিত শ্রমজীবী শ্রেণীর সদস্য। ভবিষ্যতের পুঁজিবাদী বিকাশের সম্ভাব্য গ্রামীণ মজুর বাহিনী। এদের মধ্যে সমান্য একটি অংশ আছে যারা প্রকৃত অর্থেই সারা বছর শ্রমশক্তির বিক্রেতা বা গ্রামীণ মজুরি শ্রমিক। তাদের অনেকে আবার মৌসুমভেদে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গিয়ে বা শহরে এসে রিকশা-ভ্যান চালানোর জন্য দু-এক মাস শ্রমশক্তি বিক্রয় করে নিয়মিত খাটেন। খোরাক, আবাস ও নগদ মজুরি সবই তখন তাদের জোটে। ভিসা জোগাড়ের ও প্রয়োজনীয় বিদেশ যোগাযোগ থাকলে এদের কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমান।

সুতরাং কৃষিতে বর্তমানে প্রধান খাত হচ্ছে এ পারিবারিক শ্রমজীবী খামারগুলোর সদস্যরা, যাদের ‘‌আধা-শ্রমিক’ বা ‘‌গ্রামীণ শ্রমজীবী’ বললে বেঠিক বলা হবে না। চিরায়ত মজুরি শ্রমিক বা আশির দশকের ভূমিহীন খেতমজুর বা পুঁজিপতি কৃষকের অধীন গ্রামীণ স্থায়ী মজুর বা মুনীষ এরা নন। বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি যখন তৈরি হয়েছিল এবং আশির দশকে যখন গ্রামাঞ্চলে তাদের জঙ্গি বৃহৎ সংগঠন গড়ে উঠেছিল তখন অবস্থা এতটা বৈচিত্র্যময় ছিল না এবং তখন এ সংস্থার পক্ষ থেকে তিনটি মূল দাবি তোলা হয়েছিল:

১. যেসব খাসজমি সরকারি মালিকানায় বা বেদখল হয়ে গ্রামীণ প্রভাবশালীদের দখলে আছে (আবাদি/অনাবাদি নির্বিশেষে) তা এসব ভূমিহীনের নামে লিখে দিতে হবে। তবে খাসজমি বা পুকুর একটু বড় হলে সমিতি তা তখন লাল ঝাণ্ডার আন্দোলন করে যৌথ মালিকানার অধীনে নিয়ে আসত। এ রকম কোনো কোনো যৌথ মালিকানাধীন খাস পুকুরে আমি নিজেও গিয়ে খালই থেকে মাছের পোনা ছেড়ে উদ্বোধন করেছি। তখন তাদের মূল স্লোগান ছিল,

  • ‘‌আড়াই হাত লাঠি ধর,
  • খাসজমি দখল কর’

২. দ্বিতীয় দাবি ছিল খেতমজুরদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি হবে সাড়ে তিন সের চাল বা সমপরিমাণ টাকা।

৩. গ্রামে হালকা মৌসুমে তখন যেসব মাটি কাটা-রাস্তা তৈরি বা অন্যান্য সরকারি কাজ হতো—সেসব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য দাবি তোলা হয়। প্রতিটি প্রকল্পের নির্ধারিত বরাদ্দ ও শ্রম নিয়োজন দিবস প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে প্রদর্শন করার বিধি প্রণয়নের দাবি তোলা হয়েছিল।

বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সুযোগ অনেক কমে এসেছে। যদিও খাসজমি ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারলে আইন এখন ভূমিহীনদের পক্ষে কাজ করার কথা। তৃতীয় দাবির পরিসরটি এখন আরো বিস্তৃত হয়েছে। আর মজুরি এখন এমনিতেই গড়ে সাড়ে তিন কেজির সমান বা কাছাকাছি হয়ে গেছে।

বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা নীতির অধীনে গ্রামাঞ্চলে যে ১৫০-এর অধিক নানা ধরনের সুযোগ ও ভাতা প্রদানের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ আমলে চালু হয়েছিল, তার স্বচ্ছতা ও সুষম বণ্টনের বিধান জরুরি হয়ে উঠেছে। এখানে এখনো প্রচুর ‘‌Inclusion Error’ এবং ‘‌‌Exclusion Error’ রয়ে গেছে।

তাছাড়া দরিদ্র ২০ শতাংশ তথা সাড়ে তিন কোটি লোককে আরো দুটো জনপ্রিয় দাবি হচ্ছে মাথার ওপরে ছাদের বা স্থায়ী বসতবাটির দাবি। বিগত সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করে তা মেটানোর জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তারপর তার কী হলো এর কোনো সুষ্ঠু মূল্যায়ন এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি।

এছাড়া সারা বছর ন্যূনতম খোরাকির জন্য ন্যূনতম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রেশনের দাবি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানবিক অধিকারের দাবি গ্রামীণ দারিদ্র্যপীড়িতদের তো রয়েছেই। দুস্থ মাতা বা গোষ্ঠীর জন্য টিসিবি কার্ড যেটা কভিডের সময় চালু হয়েছিল—তাকে একটি সুষ্ঠু রেশন ব্যবস্থায় পরিণত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিলে তাতে তাদের জনপ্রিয়তা ও জনকল্যাণ উভয়ই ত্বরান্বিত হতে পারে।

উপসংহার

তবে তৃণমূলে রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র ও বিদ্যমান গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর ওপর গ্রামীণ শ্রমজীবী সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্রদের গণতান্ত্রিক খবরদারি (Democratic Governance) না থাকলে উল্লিখিত সেবা ও অধিকারগুলো গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য অর্জন সম্ভব নয়। সেজন্য আবার গ্রামীণ দরিদ্রদের তৃণমূলের স্বচালিত সংগঠন গড়ে তুলে তৃণমূলের নির্বাচনে আনুপাতিক মাত্রায় কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। একার্থে বলা যায়, আনুপাতিক কর্তৃত্ব অর্জনের এ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয় অর্জনের ওপরই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের আগামী দিনের ম্যাক্রো গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। এজন্য গ্রামীণ শ্রমজীবীদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আজ সমাজ প্রগতির জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। আনুপাতিক মাত্রায় প্রতিনিধিত্ব অর্জন ছাড়া গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় শহরমুখী নব্য ধনিকদের আধিপত্য দূর করা সম্ভব হবে না।

এম. এম. আকাশ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও