শিক্ষা ভাবনা

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো জরুরি

রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষকের দক্ষতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সবসময় অবহেলিত।

শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও উচ্চ শিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিতেও এ স্তরের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের উন্নত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। সেজন্য সেসব দেশে প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানের পাশাপাশি বেতনও দেয়া হয় উচ্চতর স্কেলে। এছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষকের দক্ষতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সবসময় অবহেলিত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। আর্থিক সামর্থ্য কম থাকায় তাদের এ প্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভর করতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষকের দক্ষতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু দক্ষ শিক্ষক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়। আমরা সে বিষয়ে কমই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। দেশে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও মর্যাদা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এছাড়া জনবলের অভাবে শিক্ষকদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ শিক্ষা স্তরের প্রচুর বিনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের পরই আমরা দক্ষ শিক্ষক ও মানসম্মত শিক্ষা আশা করতে পারি। অতএব মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ স্তরের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে তা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি। প্রাথমিকের ১১ বছরে বাংলাদেশের শিশুরা যা শেখে, তা অন্য দেশের শিশুরা শিখছে সাড়ে ছয় বছরে। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। গত বছর প্রকাশিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যন্ত। নিয়মিত ক্লাস নিলেও এ শিক্ষকদের একটি বড় অংশই নিজেদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। নিজেদের জ্ঞানের বিষয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস নেই। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে শিক্ষকরাই তার শিক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট নন, তাহলে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা কীভাবে পাবে? অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, প্রাথমিকে দক্ষ ও ভালো শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তখন অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন চলে আসে। সেটি হলো কেন প্রাথমিকে ভালো শিক্ষক নেই? এর পেছনে অন্যতম কারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের নিম্ন বেতন কাঠামো এবং সামাজিক মর্যাদার অনেক অভাব। এশিয়ার দেশগুলোর সমাজ কাঠামোয় বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরে শিক্ষকদের অনেক সম্মানের চোখে দেখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেতন কাঠামো ও সামাজিক মর্যাদা অন্যান্য পেশার তুলনায় অনেক কম এবং সুযোগ-সুবিধাও অপর্যাপ্ত থাকায় প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষক পেশাকে আকর্ষণীয় মনে করা হয় না। এ কারণে এ স্তরে মেধাবী ও উচ্চ শিক্ষিতরা আসতে অনাগ্রহী। এছাড়া রয়েছে শিক্ষকের সংকট। প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হলে এসব সংকট দূর করে শিক্ষকের বেতন ও মর্যাদা বাড়াতে কাজ করতে হবে। তাহলেই যোগ্যরা প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হবেন।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। এ গ্রেড অনুযায়ী তাদের মূল বেতন ১১ হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ সর্বসাকল্যে পান সাড়ে ১৯ হাজার টাকার মতো। শিক্ষককে যদি পর্যাপ্ত বেতন ও সঠিক মর্যাদা দেয়া না হয়, তাহলে শিক্ষাদান তার কাছে কেবলই অন্তঃসারশূন্য দায়িত্ব মনে হবে। বাস্তবেও তাই মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, শিক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ব্যতীত সুফল আশা করা বোকামি। একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক শিক্ষার্থী, সমাজ ও দেশকে পরিবর্তনে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আর প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষকের বেতন কাঠামো ও মর্যাদা বাড়ানোর বিকল্প নেই। মেধাবীদের এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে এ পেশার সব ধরনের বৈষম্য ও সমস্যা দূর করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন ও আত্মবিশ্বাসী হন।

লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং বেশি বেতনের চাকরিগুলোর একটি। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে লুক্সেমবার্গ। ইউরোপের এ দেশটির প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ৫ হাজার ৯৮৪ ডলার ৩০ সেন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। দেশটির প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ৫ হাজার ৭৯৯ ডলার ৯১ সেন্ট। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুইজারল্যান্ডের শিক্ষকরা ন্যূনতম ৫ হাজার ৭৯ ডলার বেতন পেয়ে থাকেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষকদের বেতন তুলনা করলে সবচেয়ে পেছনে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বেতন পান মালদ্বীপের শিক্ষকরা। দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রাথমিকের শিক্ষকদের মাসিক গড় বেতন প্রায় ৯৫৩ ডলার ১৩ সেন্ট, যা বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ গুণ। এমনকি পাকিস্তানেও শিক্ষকদের গড় বেতন ২০৬ ডলার ৭ সেন্ট ও শ্রীলংকায় ২৫০ ডলার ৪৪ সেন্ট। ভারতে রাজ্য ও বিষয়ভেদে শিক্ষকদের বেতনের ভিন্নতা রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেতন কাঠামো নিয়ে তথ্য সংরক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভারতের শিক্ষকদের গড় মাসিক বেতন ২৮৪ ডলার ৬৪ সেন্ট। এছাড়া ভুটানে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মাসিক গড় বেতন ৩৪১ ডলার ৭২ সেন্ট এবং নেপালে ৪৬৭ ডলার ৪৫ সেন্ট। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারেও শিক্ষকদের গড় বেতন ১৮৯ ডলার ২২ সেন্ট। এসব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যয় আমাদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। যদিও বিশ্বব্যাংক ও ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সব সময় গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে বেতন দেয়া হয়, তাতে তাদের সংসার চালানো অনেকটাই অসম্ভব। দেশে দুই বছরের অধিক সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ফলে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অনেকেরই দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ার কথা।

বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত করা। এজন্য আমাদের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৬-২২ সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে গড় ব্যয় ছিল ৪১টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে পঞ্চম সর্বনিম্ন। জিডিপির শতাংশীয় হিসেবে বাংলাদেশের গড় শিক্ষা ব্যয় আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার চেয়ে কম। এ বাজেট দিয়ে প্রাথমিকে মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োজন কঠিন।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় সব শিক্ষার্থীকে একই বই পড়ানো হয় এবং একই ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অন্তত ১১ ধরনের। ধরনভেদে প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমেও রয়েছে ভিন্নতা। সরকারিভাবে স্বীকৃত বা স্বীকৃতিহীন মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কারিকুলাম চালু আছে অন্তত পাঁচ রকমের। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাথমিক পর্যায়ে একই ধরনের কারিকুলামের আওতায় একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের কথা বলা হলেও দেড় যুগেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, উচ্চ মাদ্রাসাসংলগ্ন ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, এনজিও পরিচালিত শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট স্কুল, কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পুরোপুরি সরকারি কারিকুলামকেই অনুসরণ করা হয়। এ কারিকুলাম সাধারণ শিক্ষা কারিকুলাম নামেও পরিচিত। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোয় সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামে নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বেশকিছু অতিরিক্ত বিষয়ও পড়ানো হয়। ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং উচ্চ মাদ্রাসাসংলগ্ন ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় অনুসরণ করা হয় সরকার নির্ধারিত পৃথক কারিকুলাম। এ কারিকুলাম সাধারণ মাদ্রাসা কারিকুলাম নামে পরিচিত, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। আর কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোয় সম্পূর্ণ নিজস্ব কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। এ দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন পদ্ধতিও পুরোপুরি আলাদা। কওমি মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদিস শিক্ষায় জোর দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনুসরণ করা হয় বিদেশী কারিকুলাম। এ পার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায় শেষে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার স্তরে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক বৈষম্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সচ্ছল ও বিত্তবান পরিবারের সন্তানরা বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও বিদ্যালয়ে পড়তে যায়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীকে পড়ানো বেশ ব্যয়বহুল। এতে অভিভাবকদের রীতিমতো শিক্ষার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যয় কম কিন্তু শিক্ষার মান নিম্ন। ব্যয় কম হলেও শিক্ষার মান নিম্ন হওয়ায় অভিভাবকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের পাঠান না। ফলে কিছু কিছু বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি।

প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি একমুখী পাঠ্যক্রম প্রণয়নে গুরুত্ব দেয়া উচিত। যোগ্য প্রার্থীদের এ পেশায় আকৃষ্ট করতে বেতন স্কেল, সুযোগ-সুবিধাসহ সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরো অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের যেসব এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনুন্নত রয়েছে সেগুলোর উন্নয়নে প্রাধান্য দিতে হবে। দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর সঙ্গে পরিচ্ছন্ন ও আনন্দঘন শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সর্বোপরি বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা গেলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। আর প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন হলে উচ্চ শিক্ষায় এর সুফল পাওয়া যাবে। উচ্চ শিক্ষা শেষে কর্মজীবনে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারবে। অর্থাৎ শিক্ষার ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।

দিদারুল হক: সহসম্পাদক, বণিক বার্তা

আরও