চট্টগ্রাম শহরের অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্যের ১০ শতাংশ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম এ বছরেও অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অংশ হিসেবে এই প্রতিশ্রুতি আবারো জানানো হয়।
এ উপলক্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও উন্নয়ন সংস্থা ইপসার যৌথ আয়োজনে চট্টগ্রামের বে ভিউ র্যাডিসন ব্লু হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এ সময় বিশেষ অবদানের জন্য তিনজন বর্জ্য সংগ্রাহক ও দুজন ভাঙারিওয়ালাকে সম্মাননা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার আইইউএ চৌধুরী (এস), ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর রুহুল কুদ্দুস, লিগ্যাল ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি এস ও এম রাশেদুল কাইয়ুম, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার ও ইপসার সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক নাসিম বানু।
২০২২ সালের জুনে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, চসিক এবং ইপসার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এ সহযোগিতা শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে। এটি শহরের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ১০ শতাংশ। পাশাপাশি ৩ হাজারের বেশি বর্জ্যকর্মীকে নিরাপদ পদ্ধতিতে বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২ হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক ও ২০০ জন ভাঙারিওয়ালাকে সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ও ব্যবসায়িক দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৮২৭ জন বর্জ্যকর্মী ও ভাঙারিওয়ালার জন্য একটি গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে। এ বীমার আওতায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসার খরচ, হাসপাতাল ব্যয় ও ওষুধের খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জনসচেতনতা তৈরিতে প্রকল্পটি আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ও ৭১টি স্কুলের ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে উৎসস্থলে বর্জ্য আলাদা করে রাখার বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জন্য প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইউনিলিভার ও ইপসার সঙ্গে আমাদের এ উদ্যোগ দেখিয়েছে, কীভাবে প্লাস্টিককে বর্জ্য নয় বরং সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা একত্রিত করে আমরা বাস্তব ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। এ মডেলটি দেশের অন্যান্য শহরেও বাস্তবায়ন সম্ভব।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার বলেন, প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বিশ্বাস, অনানুষ্ঠানিকভাবে প্লাস্টিক সংগ্রহকারী শ্রমিকরাই প্রকৃত পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার মাধ্যমে আমরা একটি ন্যায্য ও টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলছি।
ইপসার পরিচালক নাসিম বানু বলেন, এ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা প্রান্তিক বর্জ্যকর্মীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সমাজে সহনশীলতা ও পরিবেশ সচেতনতা বাড়িয়েছে। এটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই চট্টগ্রাম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উল্লেখ্য, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দেশে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কোম্পানিটির ৯৬ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। ইউনিলিভার বাংলাদেশ বর্তমানে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ইউনিলিভার গ্রুপের অংশ। এর ৬০.৭৫ শতাংশ মালিকানায় রয়েছে ইউনিলিভার গ্রুপ এবং বাকি ৩৯.২৫ শতাংশ বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। —বিজ্ঞপ্তি