বড় প্রতিষ্ঠানের শুল্ক ১%, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে ৩০%

শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কায়নে দ্বৈতনীতি পরিহার চায় বিসিআই

শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পের করহারের বৈষম্য পরিহার চেয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পের করহারের বৈষম্য পরিহার চেয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। সংগঠনটি জানিয়েছে, বর্তমানে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্লাস্টিক উৎপাদনের কমপ্লিট মোল্ড আমদানি করলে সেটি মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে গণ্য হয় এবং কেবল আমদানি শুল্ক (সিডি) ১শতাংশ দিতে হয়। অন্যদিকে, একই মোল্ড তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানি করলে ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আগাম কর (এটি), অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) মিলিয়ে প্রায় ৩০শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এ করহারের পার্থক্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছে বিসিআই।

গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সংগঠনটি শর্তহীনভাবে করহার ২.৫শতাংশ কমিয়ে প্রাইভেট কোম্পানির জন্য ২৫শতাংশ এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২০শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তি-শ্রেণীর করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করা, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর কমানো, রফতানি আয়ের উৎসে কর ১শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫শতাংশ করা এবং রফতানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার প্রস্তাবও দিয়েছে বিসিআই।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘গ্রস-প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়, যা যুক্তিসংগত নয়। আবার গ্রস-প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় ক্ষতি হলেও তা বিবেচনায় নেয়া হয় না। এমনকি আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কমলেও কর কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয় না। এটি সংশোধন করা প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হলেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাড়তি বোঝা।’

বিসিআইয়ের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অনুন্নত এলাকার শিল্পে বিশেষ কর অবকাশ, নিম্নতম শুল্কহারে কাঁচামাল, উপকরণ ও মেশিনারিজ আমদানির সুযোগ দেয়া ইত্যাদি।

একই দিন বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসা উন্নয়ন ও রফতানি-সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি গ্রেসপ্রুফ পেপার, গ্লাসিন পেপার, থারমাল পেপার ও লাইনার পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) এবং ৩০শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

এছাড়া ছাপা কাগজ আমদানিতে সিডি ও আরডি মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনাশুল্কে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত কাগজ ও বোর্ড আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান।

এদিন নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাইকারি ব্যবসায়ীদের লেনদেনে ১.৫শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ৫শতাংশ মূল্য সংযোজন কর নির্ধারণের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন সুতায় করহার কমানো এবং আগাম কর প্রত্যাহারের দাবিও জানায়।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘অব্যাহতি দিলে অভ্যাস খারাপ হয়ে যায়, মিসইউজ হয়। ৫০ বছর পরও (পোশাক শিল্পকে) অব্যাহতি দিতে হবে কেন? সাধারণ হারে আসুন। আপনারা (বিসিআই) কেন বিশেষ করহার চান? মিথ্যার সঙ্গে বসবাস থেকে আমাদের বের হতে হবে। আপনারা তথ্য লুকান, আমরাও চাপিয়ে (কর) দিই। কমপ্লায়েন্ট ট্যাক্সপেয়ার হলে আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। হিসাব ঠিক রাখুন, তাহলেই হলো। ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না।’

আরও