অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বেশ অস্থির সময় পার করছে পাকিস্তান। গত তিন দিন ধরে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইসলামাবাদ অভিমুখী রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। চরম এ অস্থিরতার মধ্যেও দেশটির পুঁজিবাজারে আজ সূচক রেকর্ড ১ লাখ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। গত এক বছরে দেশটির বেঞ্চমার্ক কেএসই-১০০ সূচক প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দিন শেষে কেএসই-১০০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮১৩ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থান ১ লাখ ৮১ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনের শুরুতে সূচকটি একপর্যায়ে ১ লাখ ২১৬ পয়েন্টে উঠেছিল। গত বছরের মার্চে সূচকটি ৪০ হাজার পয়েন্টে ছিল। সেখান থেকে ২০ মাসে পাকিস্তানের বেঞ্চমার্ক সূচক ১ লাখ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে ১১৬ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার মূল্য ছিল ৩ হাজার ৯৭৭ কোটি রুপি। পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে আজ ৪৫২টি সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ২৯০টির রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে, কমেছে ১১৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টির বাজার দর।
পাকিস্তানের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে দেশটির জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বেইল আউট প্যাকেজ অনুমোদন করা হয়েছে। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেশটির আর্থিক ও মুদ্রানীতিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যার প্রভাবে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এর পাশাপাশি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত গতিতে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসা মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগতে হয়েছে পাকিস্তানকে। তবে আইএমএফের বেইল আউট প্যাকেজের সহায়তা দেশটির রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছর নীতি সুদহার ৭ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পরও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের পিই (মূল্য-আয় অনুপাত) রেশিও ৫ এর নিচে রয়েছে, যা দেশটির পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে এক পর্যায়ে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছিল দেশটি। অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কেনারও অর্থ ছিল না দেশটির কাছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শেষ পর্যন্ত আইএমএফের দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে দেশটিকে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। এতে দেশটির অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। ঋণ অনুমোদনের খবরে গত বছর দেশটির পুঁজিবাজারের সূচক একদিনেই ২ হাজার ৪০০ পয়েন্টের বেশি বেড়েছিল। ব্লুমবার্গের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, পাকিস্তানের পুঁজিবাজার সে সময় বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বাজারের তালিকায় উঠে এসেছিল। দেশটির পুঁজিবাজারের এ ঊর্ধ্বমুখীতা এখনো দেখা যাচ্ছে। গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তানের বেঞ্চমার্ক সূচক কেএসই-১০০ প্রথমবারের মতো ৯০ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়িয়েছিল।