টানা
বৃষ্টিতে মুন্সিগঞ্জে তলিয়ে গেছে আলু খেত। বুধবার শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি গতকাল ভারি বর্ষণে রূপ নেয়। এতে জেলার বহু আলু খেতে পানি জমে গেছে। ফলে আবাদি জমির বীজ নষ্ট হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। পাশাপাশি ফলন কমার আশঙ্কায় সামনে আলুর বাজারে সংকট বাড়তে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন। তবে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করেছেন কৃষক। বাকি জমিতে আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষীরা।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, আলু রোপণের আদর্শ সময় বিবেচনা করা হয় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরবর্তী ২৫ দিনকে। আবাদের আদর্শ সময় পার হওয়ার পথে থাকলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমি আলু চাষের আওতায় আসেনি। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের খবরে জমি তৈরি করেও বীজ রোপণ করেননি অনেক কৃষক।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় মিথিলির সময় জমিতে পানি জমে আলুর বীজ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পুনরায় বীজ বপন করে আরেক দফা ক্ষতির মুখে পড়েছেন মিগজাউমের কারণে। সরজমিনে দেখা গেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার কৃষিজমিগুলোয় বুধবার থেকে বন্ধ আলু আবাদ কার্যক্রম। যেসব বিলে এ সময়ে হাজারো শ্রমিক আলু খেতে কাজ করতেন ঝড়ের প্রভাবে এখন তা শ্রমিক শূন্য হয়ে পড়েছে।
আবাদি আলু বীজ রক্ষা করতে অনেক কৃষকই কোঁদাল হাতে আইল কেটে নালা করে দিচ্ছেন পানি সরে যাওয়ার জন্য। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহি এলাকার বিলে নালা তৈরি করছিলেন কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এ বছর ৭০ শতাংশ জমি আলু রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করেছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রেখেছি। এতদিনে আলু রোপণ করে ফেলতাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে শুনতে ছিলাম আবারো ঘূর্ণিঝড় হইবো। তাই আলু রোপণ করি নাই। এখন যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপণ করতে পারমু না। যেটুকু লাগাইছি (রোপণকৃত) সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা করে দিচ্ছি।’
সিরাজদিখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, ‘আমি এবার ৫ কানি (৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমার রোপণ করা বীজআলু একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হবে।’
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক সৈয়দ বেপারী বলেন, ‘এবার ১২ কানি জমিতে আলু রোপণ করার ইচ্ছা ছিল। এরই মধ্যে আট কানি জমিতে আলু রোপণ শেষ হয়েছে। এখন বৃষ্টিতে সব আলুর জমি পানিতে ভরে গেছে। এতে আমার ১৫-২০ লাখ টাকার লোকসান হতে পারে। এর আগের বৃষ্টিতেও আমার এক কানি জমির আলুর বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ নেই। তবে আমরা তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিথিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখোন আবারো ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় আলু চাষ আরো বিলম্বিত হবে। ফলে আগামী মৌসুমে আলুর বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে।’