উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেন মাত্র ৩০ শতাংশ নারী

বাংলাদেশ সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (এসপিপি) পলিসি বিষয়ক এক ডায়ালগে এসব তথ্য উঠে আসে। পলিসিটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)।

মাত্র ৩০ শতাংশ নারী উন্মুক্ত দরপত্র বা ওপেন টেন্ডারিং মেথড (ওটিএম) ব্যবহার করেন। দরপত্রের এ পদ্ধতিতে বড় আকারের বিনিয়োগ করতে হয়। তাই নারীরা এতে পিছিয়ে রয়েছেন। নারী উদ্যোক্তাদের দাবি বিষয়টি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদিও। এছাড়া তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতারও অভাব রয়েছে। তবে ৬০ শতাংশ নারী কোটেশন পদ্ধতি (আরএফকিউ) পছন্দ করেন। দেশে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে, যদিও সম্পূর্ণরূপে নয়। তবে ক্রয়ের একটি বড় অংশ এখন বহুল পরিচিত ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয়।

বাংলাদেশ সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (এসপিপি) পলিসি বিষয়ক এক ডায়ালগে এসব তথ্য উঠে আসে। পলিসিটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। এ সমীক্ষার ফলাফল বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকার সিক্স সিজনস হোটেলে উপস্থাপন করা হয়।

বিল্ড সিইও ফেরদৌস আরা বেগম সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, জরিপকৃত নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ শতাংশ পাবলিক প্রকিউরমেন্টে অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপনপত্র (আরএফকিউ) পদ্ধতি পছন্দ করে এবং মাত্র ৩০ শতাংশ ওপেন টেন্ডারিং মেথড (ওটিএম) ব্যবহার করে। এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬০ শতাংশ এবং প্রকিউরিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ১৫ শতাংশ এসপিপি পলিসি সম্পর্কে অজ্ঞাত। অন্যদিকে এসপিপি গাইডলাইন সম্পর্কে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রকিউরিং এনটিটিজ সচেতন।

বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) সিইও মির্জা আশফাকুর রহমান জানান, পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টিয়ারিং কমিটি এসপিপি বিষয়ে কাজ করছে। এসপিপি টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত। এখন সরকার এসপিপি বাস্তবায়নের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে, যা পাবলিক ক্রয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১২.৭ অর্জনের জন্য একটি বাধ্যবাধকতা।"নারী উদ্যোক্তা এবং দরপত্রদাতাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে এর জন্য ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন।

গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ মনিটরের ২০২৩/২৪ নারী প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে আশফাকুর বলেন, বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীরা উচ্চ-প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন-চালিত ব্যবসায় ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত হচ্ছে। তবুও তারা বাধার মুখোমুখি হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ক্রয়ের মতো বাজারে অসম প্রবেশাধিকার। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ৭.২ শতাংশ ব্যবসার মালিক নারী, যা দেশে উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য নির্দেশ করে।

বিপিপিএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মোট কর্মশক্তির প্রায় অর্ধেক থাকা সত্ত্বেও, ব্যবসায়িক মালিকানায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিশ্বব্যাপী যেখানে প্রতি তিনটি ব্যবসার মধ্যে প্রায় একটির মালিক নারী, সেখানে বাংলাদেশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এ কারণেই এসপিপি নীতি বাস্তবায়ন কেবল একটি সরকারি খাতের দায়িত্ব নয় বরং এটি একটি সামাজিক অঙ্গীকার।

শি ট্রেডস ইনিশিয়েটিভের দিইনা জেম আরবো নারী উদ্যোক্তাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় জেন্ডার সংক্রান্ত বিধানগুলো বুঝতে এবং প্রক্রিয়াটির পথনকশা তৈরি করার উপায় সম্পর্কে জোর দেন।

বিপিপিএর পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন এসপিপি বাস্তবায়নের জন্য বিপিপিএর নেয়া রোডম্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসডিজির ১৭ টি গোলের মধ্যে এসপিপিও একটি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রকিউরমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোট বাজেটের ৪০ ভাগ অর্থই বরাদ্দ থাকে উন্নয়ন কাজে। সেই বরাদ্দের ৭০ ভাগ প্রকিউরমেন্ট খাতে ব্যয় হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দীপক রয় বলেন, টেকনিক্যাল কমিটি না থাকায় আমরা গুণগত পণ্য বুঝে পাই না। অথচ ঠিকই সরকারের অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।

নারী উদ্যোক্তা নাদিয়া বিনতে আমীন বলেন, এসব আলোচনার আয়োজন পাঁচতারকা হোটেল থেকে গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার নারীদের সচেতন করতে হবে।

ডায়ালগে একমত হওয়া বিষয়গুলো হলো- সব স্তরে নীতি গ্রহণে সরকারের প্রতিশ্রুতি, নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তাদের জন্য উপযুক্ত সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ডেটা সিস্টেম গড়ে তোলা ও পারফরম্যান্স সূচকের উন্নয়ন করতে হবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বিপিপিএ ও প্রকিউরিং এনটিটিগুলোর সমন্বয়ে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে, যা এসপিপি অ্যাকশন প্ল্যান এবং জেন্ডার-সংশ্লিষ্ট এম অ্যান্ড ই ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। নারী-মালিকানাধীন ব্যবসার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করা এবং ই-জিপির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক ডেটা সংগ্রহ, প্রকিউরিং এনটিটিজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরাসরি যোগাযোগ ও কর্মশালার আয়োজন, বিপিপিএ থেকে প্রকিউরিং এনটিটিজগুলোকে এসপিপি বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি সুপারিশও করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) শি ট্রেডস ইনিশিয়েটিভ, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) ও যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সহযোগিতায় সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়।

আরও