ভ্যাট ফাঁকি ১৬৭ কোটি আদায় ৫ কোটি টাকা

ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করতে বিদায়ী অর্থবছরে ২৭৮টি গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ১৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। তবে এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পশ্চিম) সাম্প্রতিক প্রতিবদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করতে বিদায়ী অর্থবছরে ২৭৮টি গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ১৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। তবে এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পশ্চিম) সাম্প্রতিক প্রতিবদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, এনবিআর কর্মকর্তারা বাহবা পাওয়ার জন্য ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে ফেলতে বিভিন্ন সময়ে অভিযানের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট করেন। তবে এসব রিপোর্টের বিপরীতে মামলা করা হলে সিংহভাগই বাতিল হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ভ্যাট ফাঁকি থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করতে এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানান ভ্যাট প্রদানে সংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেকোনো উপায়ে ভ্যাট ফাঁকি দিতে চায়। সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট থেকে সরেজমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকে। ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটিত হওয়ার পর মামলা করে কালক্ষেপণ করেন ব্যবসায়ীরা। এতে আদায় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।’

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে অভিযান শেষে ভ্যাট ফাঁকির যে তথ্য তুলে ধরা হয় তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে তারা হয়তো নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নেয়। যার ফলে আদায় কম হয়। এজন্য এ অভিযান করার ক্ষমতা কমিশনারের হাতে থাকা উচিত না। এ ক্ষমতা থাকা উচিত যারা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে না। তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অডিটের অংশ হিসেবে থাকতে পারে। আর অডিট কার্যক্রমও কম্পিউটারভিত্তিক বা অন্য কোনো পদ্ধতিনির্ভর হওয়া উচিত। কিন্তু এখন কমিশনারদের হাতে সর্বময় ক্ষমতা থাকার কারণে এটার অপব্যবহার হচ্ছে। এখন ভ্যাট ফাঁকির যেকোনো অ্যামাউন্ট দেখিয়ে হয়তো হয়রানি করা হয়। আর প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহ কম হয়। 

তবে ভ্যাট ফাঁকি রোধ করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়া ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন করা অন্যতম। যদিও এ ডিভাইস বসানোর কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ৬ হাজার ও বছরটি শেষে মোট ১০ হাজার দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসানোর কথা জানায় এনবিআর। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৪৯টি ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মূসক নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৫৫টি। তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তিন লাখ দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসানোর পাশাপাশি, সারা দেশের যন্ত্রটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডকে। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করেছে এনবিআর। এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ২০ হাজার মেশিন বসানোর লক্ষ্য রয়েছে। বড় বড় শহরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেশ ভালো এমন উপজেলা সদরের দোকানপাটেও আগামী পাঁচ বছরে ভ্যাটের মেশিন বসানো হবে।


আরও