চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লেবার পার্টির বাজেট ঘোষণা ঘিরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও উচ্চ সুদহারের প্রভাব পড়ে যুক্তরাজ্যে ব্যবসা ও ভোক্তাব্যয়ে। এতে অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল বলে দেখা যাচ্ছে প্রান্তিকটির জিডিপি প্রতিবেদনে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) তথ্যানুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে দশমিক ১ শতাংশে। এ পরিসংখ্যানকে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভসের জন্য বড় এক ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ জি-৭ জোটের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যকে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ছিল জি-৭-এর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে। ইতালির ওপরে থাকলেও যুক্তরাজ্যের অবস্থান ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিচে। দেশ তিনটির প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ৪, দশমিক ২ ও দশমিক ৭ শতাংশ।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখায় যে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত তিন মাসে নতুন লেবার সরকারের অধীনে প্রথম প্রান্তিকে পরিষেবা ও উৎপাদন খাতের মুনাফা ধীর হয়ে গেছে। বাজেট ও উচ্চ সুদহারের অনিশ্চয়তার কারণে বসন্তের পর উৎপাদনের গতি হ্রাস পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে। কিন্তু মাসভিত্তিক হিসাবে সেপ্টেম্বরে জিডিপি দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম।
ওএনএস বলেছে, গত সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে পতন ও আইটি খাতে কাজের অভাবে দেশটির অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে, যা গাড়ি বিক্রি হ্রাসের অন্যতম কারণ।
২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়লেও রফতানিতে টানা তৃতীয় পতনের পর যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যের অবস্থান এখন আগের চেয়েও খারাপ। আমদানি কমানোর মাধ্যমে বাণিজ্যের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ বিদেশী পণ্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে ভোক্তারা।
অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নতি করা আমার প্রতিটি কাজের কেন্দ্রবিন্দু। তাই আমি এ পরিসংখ্যানে সন্তুষ্ট নই।’
ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, জাতীয় বীমায় নিয়োগকারীদের অবদান বাড়ানোসহ বাজেটে ঘোষণা করা পদক্ষেপগুলো তাদের খরচ বাড়িয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া সাময়িক ঘটনা হবে বলে ধারণা করছেন সিবিআই ব্যবসায়িক লবিস্ট গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ বেন জোনসের। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (এনআইইএসআর) বলেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেষ তিন মাসের দুর্বল চিত্র চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধির গতিকেও হ্রাস করবে।