ফেনীতে সরিষা আবাদ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি

সহজে ও তুলনামূলক কম পরিশ্রমে উৎপাদন এবং ভালো লাভ থাকায় ফেনীতে দিন দিন বাড়ছে সরিষা আবাদ। জেলায় তেলজাতীয় এ শস্যের আবাদ চার বছরের ব্যবধানে বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। চলতি মৌসুমে ফেনীতে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। খেতে হলুদের আভায় হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে।

সহজে ও তুলনামূলক কম পরিশ্রমে উৎপাদন এবং ভালো লাভ থাকায় ফেনীতে দিন দিন বাড়ছে সরিষা আবাদ। জেলায় তেলজাতীয় এ শস্যের আবাদ চার বছরের ব্যবধানে বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। চলতি মৌসুমে ফেনীতে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। খেতে হলুদের আভায় হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে।

গত পাঁচ বছরে সরিষা আবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে ফেনীতে সরিষা আবাদ হয় ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। ২০২১ সালে আবাদ হয় ১ হাজার ৯০৭ হেক্টর, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে এটি বেড়ে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টরে উন্নীত হয়। চলতি মৌসুমে এটি ৬ হাজার ৬৬ হেক্টরে পৌঁছেছে।

আগামী মার্চের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে উৎপাদিত সরিষা। দেশে সরিষার তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকার কৃষকদের তেলজাতীয় শস্যটি উৎপাদনে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরা।

সোনাগাজীর চরছান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষক আহমেদ করিম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১৫ কানি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার পর তিনি বর্তমান দর অনুযায়ী ৪-৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।

সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় শুধু শৌখিন কৃষকরা সরিষা আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারি প্রণোদনা ও ভালো লাভ পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরাও এটি আবাদে ঝুঁকছেন।’

কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২২ সাল থেকে সরকার তেলজাতীয় শস্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। এর অংশ হিসেবে ফেনীতে সরিষা আবাদ বাড়াতে চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ২০০ জন কৃষককে ৯০ লাখ টাকার কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর আওতায় তালিকাভুক্ত কৃষকদের বিনা মূল্যে সরিষা বীজ, টিএসপি ও এমওপি সার দিয়েছে সরকার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার ২০০ প্রান্তিক কৃষককে এক কেজি করে উন্নত জাতের সরিষার বীজ, ১০ কেজি করে টিএসপি সার ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেয়া হয়েছে। শুধু সরিষা আবাদের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এসব প্রণোদনা কৃষকের হাতে পৌঁছার পর তারা আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

চলতি মৌসুমে সোনাগাজী উপজেলায় ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়। ফেনী সদরে ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৫৮০, ফুলগাজীতে ৬৩৫, পরশুরামে ২২৬, দাগনভূঞায় ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। 

আবাদ বাড়াতে সরকার ১৬ হাজার ২০০ প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার আওতায় বীজ ও সার দিয়েছে। প্রণোদনা ও সার প্রাপ্তদের মাঝে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১১০ জন, ছাগলনাইয়ায় ১ হাজার ১০, ফুলগাজীতে দুই হাজার, পরশুরামে ৫৭০, দাগনভূঞায় ৬৬০ ও সোনাগাজীতে ৪ হাজার ৮৫০ জন রয়েছেন। প্রণোদনার আওতায় থাকা কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদের জন্য এক কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার পেয়েছেন। জেলায় মোট ১৬ হাজার ২০০ কেজি বীজ, ১ লাখ ৬২ হাজার কেজি টিএসপি সার ও ১ লাখ ৬২ হাজার কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। প্রণোদনার পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শুরুতে বৈরী আবহাওয়ায় সরিষা আবাদে কিছুটা ভাটা পড়লেও গত বছরের তুলনায় এবার আবাদ বেড়েছে।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ‘প্রণোদনা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে দিন দিন সরিষা আবাদ বাড়ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।’

আরও