শিক্ষাজীবনে অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের দেয়া হয় চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল বা রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি সমাবর্তনে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনের জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। উচ্চশিক্ষায় অনন্য মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ দুই শিক্ষার্থীর স্বর্ণপদক জয়ের পেছনের গল্প শুনেছেন শফিকুল ইসলাম
সময় ব্যবস্থাপনা এবং একাগ্রতা লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রেখেছে
চন্দ্রিমা চক্রবর্তী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। স্নাতকে সিজিপিএ: ৪.০০
আমি উত্তরা, ঢাকায় বড় হয়েছি। আমার স্কুল ও কলেজ দুটোই ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এরপর আমি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করি।
রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এ অর্জন ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রায় পাঁচ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে দিনটি এল। আমার বাবা ও ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যা এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটিকে আরো আনন্দময় ও স্মরণীয় করে তুলেছে।
এ অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং পরিকল্পিত পড়াশোনা। পাশাপাশি আমার পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুরা সবসময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বিশেষ করে সময় ব্যবস্থাপনা এবং একাগ্রতা লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সবকিছুর পেছনে আমার বাবা-মা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা সবসময় আমাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে এবং কখনো হাল না ছাড়তে শিখিয়েছেন। আমার শিক্ষকরাও কঠিন সময়ে আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। কঠিন বিষয়গুলো বোঝা, সময়মতো অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া, মানসিক চাপ সামলানো এসব চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ধৈর্য, সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি সেগুলো অতিক্রম করতে পেরেছি।
ভালো ফলাফল অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি স্মার্ট ও পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রিভিশন করা, নোট তৈরি করা, সময়মতো পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং পড়ালেখার পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া এসব ভালো ফলাফলের জন্য অপরিহার্য।
আমি আমার জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকের নিজস্ব প্রতিভা ও দক্ষতা রয়েছে। সাফল্যের জন্য ধৈর্য, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস অপরিহার্য। সবাইকে নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকার আহ্বান জানাই।
টপিক বুঝে নিজের মতো করে প্রকাশের সক্ষমতা প্রয়োজন
আরিফুল করিম, ফার্মেসি বিভাগ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। স্নাতকে সিজিপিএ: ৪.০০
রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পাওয়া আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের মুহূর্ত। এটা আমার কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্যের স্বীকৃতি। আমার ক্যারিয়ারের জন্যও এটি একটি বড় মাইলফলক হিসেবে থাকবে।
সর্বপ্রথম পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আল্লাহর রহমত ছাড়া কখনই এত বড় অ্যাচিভমেন্ট সম্ভব ছিল না। আর অবশ্যই আমার ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সব শিক্ষককে শ্রদ্ধার সঙ্গে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমাদের জন্য তাদের দরজা ছিল সবসময় উন্মুক্ত।
আমি বড় হয়েছি বাউনিয়া, উত্তরায়। স্কুল ও কলেজ বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা। আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন দুজন মানুষ। তারা আমার মা ও বাবা। জীবনের প্রতিটি বাধায় আমার মাথায় ছায়া হয়ে আছেন তারা। আলহামদুলিল্লাহ তাদের দোয়াই আজকে আমি এ সম্মান পেয়েছি।
আর সবার মতোই শিক্ষাজীবনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সময় মেইনটেইন করা। ক্লাস, পরিবার, বিভিন্ন ফাংশন, ক্লাব কার্যক্রম—এসবের পাশাপাশি টিউশন করানোর জন্য সময় বের করাটা ছিল সত্যিই কঠিন। সবকিছু একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
ভালো ফলাফল করতে চাইলে নিয়মিত ক্লাস ও কোর্সওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো ধরনের অস্পষ্টতা ফ্যাকাল্টির সঙ্গে আলোচনা করে বুঝে নেয়া প্রয়োজন। কোনো টপিক বুঝে নিজের মতো করে প্রকাশ করার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
আমার বড় বোন ফার্মাসিস্ট, ছোটবেলায় আমারও ইচ্ছা হতো একদিন তার মতো হব। সে থেকেই আমার ফার্মেসি নিয়ে পড়া। ভবিষ্যতে আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের ফার্মা সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।
আমি সবার কাছে দোয়া চাই, যেন আমি আমার প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারি।