বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার পর চাকরি না করে একটা স্টার্টআপ খোলার সিদ্ধান্ত নেন ইফতেখার। শুরুতে ভালোই চলছিল ব্যবসাটা। কিন্তু প্রতিযোগিতার চাপে, ভুল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যবসা ধীরে ধীরে বন্ধের উপক্রম হয়। হতাশ হয়ে একটা সময় ক্যাফের ব্যবসাটা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এমন সময় একজন পরামর্শকের সহায়তায় আবারো শুরু করলেন ব্যবসাটা। এবার নতুন কৌশলে। ধীরে ধীরে ক্যাফেটা আবারো লাভজনক হয়ে উঠল। এ পুনর্জন্মের গল্পই রিভেনচারের মূল দর্শন—ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে সেটিকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিইউইডিএফ) উদ্যোগে শুরু হয়েছে রিভেনচার নামে একটি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক কৌশল ও সৃজনশীল দক্ষতা যাচাই করা। রিভেনচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেখাবে কীভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়া ব্যবসাগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়।
প্রতিযোগিতাটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে কাজ করে বাস্তব ব্যবসায়িক সমস্যার সমাধান খুঁজবে, যা তাদের বিশ্লেষণী ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে আরো উন্নত করবে। এ প্রতিযোগিতা শুধু ব্যবসায়িক বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার বিকাশেও সহায়তা করবে।
তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ প্রতিযোগিতাটি। প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে ৭-১৪ মার্চ পর্যন্ত। এ ধাপে দলগুলো ব্যর্থ ব্যবসার সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের পরিকল্পনা তৈরি করবে। পরিকল্পনার বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ তৈরি করে অনলাইনে জমা দিতে হবে। বিচারকদের যাচাইয়ের পর সেরা দলগুলো পরবর্তী ধাপে উন্নীত হবে।
৫-২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে সেমিফাইনাল রাউন্ড। নির্বাচিত দলগুলোকে একটি অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। এ ভিডিও রিভেনচারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রচারিত হবে এবং এর ওপর ভিত্তি করে দলগুলোর মার্কেটিং ও উপস্থাপনা দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে।
চলতি বছরের ৫ মে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতার ফাইনাল। চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত দলগুলো বিচারকদের সামনে তাদের সম্পূর্ণ কেস বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য সমাধান উপস্থাপন করবে। ব্যবসার পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনার পাশাপাশি আর্থিক বিশ্লেষণ, বিপণন কৌশল এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। কৌশলগত চিন্তাভাবনা, যোগাযোগ দক্ষতা ও বাস্তবসম্মত ব্যবসায়িক পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে এ ধাপে।
রিভেনচারের যাত্রা শুরু হয়েছে নিবন্ধন পর্ব দিয়ে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। চারশ’জনেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নাম লিখিয়েছেন। প্রতিযোগিতাটি সফল করতে ক্লাবটির সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ দলগুলোকে অর্থ পুরস্কারসহ সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করা হবে। তবে পুরস্কারের চেয়ে বড় বিষয় হলো এটি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ করে দেবে।
রিভেনচার আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ মোস্তফা আল মারুফ। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযেগিতায় তাদের বিশ্লেষণী দক্ষতা, কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতা প্রমাণের সুযোগ পাবে। ব্যর্থ ব্যবসাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার এ প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের বাস্তবসম্মত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করে। এতে তারা শুধু চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত হয় না, বরং নতুন কিছু তৈরির সাহস ও সামর্থ্যও অর্জন করে। বিশেষ করে রিভেনচার প্রতিযোগিতার মতো উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব অভিজ্ঞতা তাদের দক্ষ পেশাদার, সফল উদ্যোক্তা ও দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে, যাতে তারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। গ্লোবাল সাউথ থেকে নতুন ধারণা ও সমাধান তৈরি করে মানবসমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা এবং গ্লোবাল সাউথের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যেই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কাজ করে যাচ্ছে।