জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

হারিয়ে গেছে এক সময়ের পিঠা চত্বর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবারের মতো এ বছরও বেড়েছে শীতের আবহ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবারের মতো এ বছরও বেড়েছে শীতের আবহ। কিন্তু শীতের প্রকোপ বাড়লেও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আশানুরূপ হারে বাড়েনি শীতকালীন পিঠার দোকান। শীতকে কেন্দ্র করে জাবিতে প্রতি বছর হরেক রকম পিঠা তৈরির ধুম পড়ত। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়াতেই ক্যাম্পাসে অস্থায়ী পিঠা তৈরির দোকানগুলোয় ভিড় জমে যেত। এসব অস্থায়ী পিঠার দোকানের বেশির ভাগ ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও ঢাকার আশপাশ থেকে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসত ক্যাম্পাসে। তারাও শীতের পিঠার স্বাদ নিতে ভুলত না। এসব ছোট পিঠার দোকানে পাওয়া যেত মাটির চুলায় বানানো ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই, মাংসের পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, জামাই পিঠা, সঙ্গে বেশ কয়েক ধরনের মজাদার ঝালের পিঠা ইত্যাদি।

এর আগের বছরগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশ, টারজান পয়েন্ট, সুফিয়া কামাল হলের সামনে, প্রান্তিক গেট, নতুন কলা ভবনের পাশে, বটতলা, শহীদ সালাম বরকত হলসহ বিভিন্ন স্থানে পিঠার দোকান বসতে দেখা যেত। একটা সময় ক্যাম্পাসে পিঠা চত্বর থাকলেও এখন আর নেই। আগের সেই জৌলুস কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শীতকালীন পিঠার চাহিদা বাড়ে। প্রায় সব দোকানে ভিড় লক্ষ করা যায়। কিন্তু এ বছর ক্যাম্পাসে মাত্র কয়েকটি দোকান বসতে দেখা গেছে, যা সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। সরজমিনে দেখা যায়, শেখ হাসিনা হলের সামনে, প্রান্তিক গেট এবং নতুন কলা ভবনের পাশে পিঠার দোকান বসেছে। দোকান কম হ‌ওয়ায় চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় পিঠা সরবরাহ করতে পারছেন না দোকানিরা। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে পিঠা না পেয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। বিকালের সময়টাও পূর্ণতা পাচ্ছে না তাদের।

এর আগে গত মাসে রিকশা দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে কড়াকড়ি আরোপ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে পিঠার দোকানগুলো এ বছর বসতে পারেনি বলে জানা যায়।

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, ‘‌গত বছর আমরা যখন ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে এসেছিলাম, তখনো দেখেছি পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতকালীন পিঠার দোকান। কিন্তু এ বছর পিঠার দোকান নেই বললেই চলে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না দোকানিরা। আমরা বিকালে ক্যাম্পাসে বের হলে সবসময় পিঠার প্রয়োজন হয় কিন্তু সেটা আমরা পাই না। এটা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইহসান জিহাদ বলেন, ‘‌শীতকালে জাহাঙ্গীরনগরের পরিযায়ী পাখির মতোই অন্যতম আকর্ষণ পিঠাপুলি। হলের গেট থেকে শুরু করে মুরাদ চত্বর, মুরগি চত্বর, ট্রান্সপোর্ট সবখানেই টিমটিমে আগুনের হল্কা দেখতে পাওয়া যেত। সেখানে বানানো হতো ভাপা, চিতই, পাটিসাপটার মতো মজাদার পিঠা। এখানকার পিঠার স্বাদ ঘরে বানানো পিঠার থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এক বছরের মাথায় এসে সেই পিঠাপুলির জৌলুস যে এভাবে কমে যাবে তা ভাবতেও পারিনি।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিতু মনি বলেন, ‘‌ক্যাম্পাসে এসেছি চার বছর হলো। প্রতি বছরই দেখেছি হরেক রকমের পিঠার দোকান বসে ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে। কিন্তু এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। শীতের বিকালে হাঁটতে বের হলেই পিঠা না হলে চলে? কিন্তু এবার সেই বিষয়টা নেই বললেই চলে। আসলে ক্যাম্পাসের জাঁকজমকপূর্ণ ব্যাপারগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল।’

আরও