সাকুরা সায়েন্স এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে জাপানে সাতদিন

আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে।

আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। টিমের বেশির ভাগ সদস্যের জন্য ছিল প্রথমবারের মতো বিমানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। আমাদের দলটি ছিল বেশ চমৎকার। ড. মো. খোরশেদ আলম স্যারের নেতৃত্বে সদস্য হিসেবে ছিলেন ড. মো. লোকমান হোসেন, মো. আসাদুজ্জামান, মো. আলামিন, আতিকুর রহমান, শাহরিয়ার ইমন, শাওনুর রহমান, কেয়া আলম। মূল গল্পে যাওয়ার আগে প্রথমেই আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধেয় সুপারভাইজার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম স্যারের প্রতি। তার চেষ্টা ও গ্লোবাল কমিউনিকেশনের ফলেই আমি ও অন্য সদস্যরা এ অনন্য সুযোগটি পেয়েছি।

জাপানে পৌঁছে এয়ারপোর্টে স্বাগত জানান আমাদের হোস্ট ইউনিভার্সিটির একজন প্রতিনিধি। দ্বিতীয় দিন আমাদের টিম রিগাকু করপোরেশন পরিদর্শনে যাই। এটি একটি বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যারা ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স সম্পর্কিত অ্যানালাইটিক্যাল যন্ত্র তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। এখানে আমাদের গাইড ছিলেন কোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মাসায়া মিয়াগাওয়া ও তার শিক্ষার্থীরা। আমরা এক্সআরডি, এক্সপিএস, টিজি, এক্সআরএফসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রের কার্যপ্রণালি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারি। ওইদিনই আমাদের হোস্ট অধ্যাপক ড. হিরোমিৎসু তাকাবা আমাদের সান্ধ্য ভোজে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে আমরা জাপানের খাবার ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা লাভ করি। তৃতীয় দিন আমরা হোস্ট কোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি গবেষণাগার পরিদর্শন করি এবং তাদের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে ধারণা নিই। প্রফেসর তাকাবা আমাদের গবেষণাগার ঘুরিয়ে দেখান এবং পরিচয় করিয়ে দেন অধ্যাপক ড. কিম হেমের রিসোর্স রিসাইক্লিনিং ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরির সঙ্গে। তিনি আমাদের ফসফার রিসাইকেল সম্পর্কে ধারণা দেন। এটি কৃষি গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আমরা আরো বেশ কয়েকটি গবেষণাগার পরিদর্শন করে তাদের গবেষণা সম্পর্কে ধারণা নিই এবং বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ পাই। চতুর্থ দিন আমরা জাপানের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিয়াল রিসার্চের (আইএমআর) স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মমজি কুবোর গবেষণাগার পরিদর্শন করি। ওনার সঙ্গে আমাদের গবেষণা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার সুযোগ হয়। টোকিও থেকে সেন্দাই পর্যন্ত আমাদের যাত্রা ছিল জাপানের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বুলেট ট্রেনে, যা ছিল বেশির ভাগ সদস্যের প্রথমবারের মতো বুলেট ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা।

তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছলে তিনি আমাদের কম্পিউটার সিমুলেশনের ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা দেন এবং তার ল্যাবের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেখান কীভাবে অটোমোবাইল ইঞ্জিনের পিস্টনের ঘর্ষণ কমিয়ে জ্বালানি খরচ হ্রাস করা যায়। প্রফেসর কুবো আমাদের লাঞ্চ করান এবং সেন্দাইয়ের দর্শনীয় কিছু স্থান দেখে জাপানের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বুলেট ট্রেনে চড়ে দুপাশের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করি। সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল।

পঞ্চম দিন আমরা আবারো আমাদের হোস্ট ইউনিভার্সিটি কোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোমিৎসু তাকাবা ল্যাবের ও তার গ্রুপের কাজ সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেন এবং আমরাও আমাদের রিসার্চ সম্পর্কে তাকে ও তার টিমকে সম্যক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি। শেষে আমাদের টিম, টিম লিডার ড. মো. খোরশেদ আলম স্যার এবং প্রফেসর তাকাবা উভয়ই সামনের দিনগুলোয় আমাদের যৌথ গবেষণাকর্ম এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

আমি নিজে খুবই আনন্দিত যে আমরা আমাদের গবেষণাকর্মকে বিশ্বের স্বনামধন্য প্রফেসর ও গবেষকদের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছি। নিশ্চয় এটা টিমের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সবশেষে অধ্যাপক হিরোমিৎসু তাকাবা আমাদের সাকুরা সায়েন্স এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করার স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার ও আমার টিমের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আমি সবশেষে জাপান সায়েন্স ও টেকনোলজি এজেন্সিকে ধন্যাবাদ দিতে চাই, যারা আমাদের মতো দেশের গবেষণার কাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এটি নিঃসন্দেহে আমার গবেষণা ও শিক্ষাজীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা, যা আমাকে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে।

মো. আল-আমিন: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আরও