শেষ স্মৃতি বেঁধে রাখতে পাহাড়-সমুদ্রে

সারাদিন মাতিয়ে রাখা মানুষগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রথম দিনের বন্ধু, গানের আসর জমানো শিল্পী, গিটারিস্ট, খেলা পাগল, ক্লাস শেষের চায়ের আড্ডার মানুষগুলোকে, ঘাড়ত্যাড়া ছেলে আর ক্যারিয়ার নিয়ে পাগল ইন্ট্রোভার্টকে— সবাইকেই মনে পড়বে।

২০১৯ সালের ৩ মার্চ, ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। একসঙ্গে ক্লাস করা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্লাস শেষে চায়ের আড্ডায় ঝড় তোলা— সেই সব দিনগুলো এখন যেন স্বপ্ন। সময়ের গতিতে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। সারাদিন মাতিয়ে রাখা মানুষগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রথম দিনের বন্ধু, গানের আসর জমানো শিল্পী, গিটারিস্ট, খেলা পাগল, ক্লাস শেষের চায়ের আড্ডার মানুষগুলোকে, ঘাড়ত্যাড়া ছেলে আর ক্যারিয়ার নিয়ে পাগল ইন্ট্রোভার্টকে— সবাইকেই মনে পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিনগুলোকে স্মৃতির পাতায় বেঁধে রাখতে আমরা পাহাড়-সমুদ্রের টানে ছুটে গিয়েছিলাম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা মিলে বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন— এই তিন জায়গায় একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বেলাল উদ্দিন ও প্রভাষক সাইফুদ্দিন খালেদ।

২১ ডিসেম্বর, শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে জড়ো হয়েছিলাম। যাত্রা শুরু হওয়ার পরপরই বাসে গানের আড্ডা জমে উঠেছিল। সবাই মিলে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে রাত গড়িয়ে সকালে বান্দরবানে পৌঁছে গিয়েছিলাম।

বিশ্রাম নিয়ে চান্দের গাড়ি নিয়ে আমরা বান্দরবানের পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়ি। এতো উঁচু উঁচু নীল আকাশচুম্বী পাহাড় আমাদের মন কেড়ে নিয়েছিল। এসব আসলে ক্যামেরায় বন্দী করা যায় না। শুধু দু’চোখ ভরে উপভোগ করা যায়। শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়ের সবুজে ছেঁয়ে আছে উঁচু পাহাড়গুলো। আমরা সবাই ছোট-বড় উঁচু-নিচু পাহাড়ে উঠে সবুজ প্রকৃতি দেখি। শৈলপ্রপাত ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, নীলগিরিতে নীল আকাশচুম্বী পাহাড়, আকাশে মেঘগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে— এই সব দৃশ্য আমাদের মন মুগ্ধ করেছিল।

ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্টে গিয়ে হাত দুটি মেলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর যাই চিম্বুক পাহাড়, মেঘলা। মেঘলায় গিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ের পাশাপাশি ঝুলন্ত কাঠের ব্রিজ ও বিভিন্ন পশু-পাখি নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে পাই। আমরা পাহাড়ে যতই উঠি মনে হয় পাহাড়ের সৌন্দর্য জয় করছি। পাশাপাশি আমরা পাহাড়ি বিভিন্ন ফল খাই, যা অন্যরকম স্বাদ খুঁজে পাই। পাহাড়ি মানুষের সঙ্গে কথা বলি। সবাই একই ফ্রেমে বন্দী হয়ে থাকি। কারণ দিনশেষে এগুলোই আমাদের স্মৃতি হয়ে থাকবে। সারাদিন ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরে রাতে হোটেলে আবার জম্পেশ আড্ডা, গানের আসর, নাচ।

পরের দিন সকালে নাস্তা করে কক্সবাজারের উদ্দেশে বাস ধরি সবাই। দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে পড়ি সমুদ্র দেখতে। খালি পায়ে সমুদ্রের কিনারে পা ভিজিয়ে হাঁটা শুরু করি। সাগরের ঢেউ আসে আর শরীর দুলিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে জেলেরা মাছ ধরার জন্য জাল বিছিয়ে রাখে সাগরে, সেগুলো উপভোগ করি। সবাই মিলে হাঁটতে হাঁটতে দেখে ফেলি লাবনী, হিমছড়ি, সুগন্ধা, কলাতলী সমুদ্র সৈকত। দেখি বাহারি রকমের সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, কাঁকড়া, অক্টোপাস।

সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সময় সমুদ্রের মাঝে ঢেউ খেলে। পাখিরা উড়তে থাকে। দৃশ্যগুলো অসম্ভব সুন্দর। সেন্ট মার্টিনে পৌঁছিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ি সবাই গোসলের জন্য। সমুদ্রে নেমে শরীরটা মেলে ধরি। ভাসিয়ে রাখি। প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। একসঙ্গে সবাই ক্যামেরায় বন্দি হই।

সেন্ট মার্টিন সমুদ্র সৈকত সবচেয়ে বেশি সুন্দর। স্নিগ্ধ, শান্ত, মনোরম পরিবেশ। কোনো কোলাহল নেই। মানুষের উৎসুক ভিড় নেই। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। দেখে ফেলি ছেঁড়া দ্বীপ, সিন্দাবাদ দ্বীপ, গলাচিপা ও কবি হুমায়ূন আহমেদের সমুদ্র বিলাস।

ছেঁড়া দ্বীপ দেখতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সমুদ্রের কিনারে দিয়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে যাই। সমুদ্রের পাশ দিয়ে সাইকেল চালানো—এটা অন্যরকম অনুভূতি। ছেঁড়া দ্বীপে সকাল সকাল স্নিগ্ধ বাতাস শরীরে মনে হয় সজীবতা দিয়েছে। এখানের পানি এতো স্বচ্ছ যে দেখলেই মনে হয় ঝাঁপিয়ে পড়ি। সমুদ্র সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম সেন্ট মার্টিন।

রাতের সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দগুলো অসম্ভব সুন্দর। সময়ের সাথে সাথে সবাই আমরা আলাদা হয়ে যাব, কিন্তু এসব আমাদের জীবনের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে।

রাতের সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দগুলো অসম্ভব সুন্দর। সময়ের সঙ্গে হয়তো আমরা সবাই আলাদা হয়ে যাব। কিন্তু এসব আমাদের জীবনের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে। স্মৃতিগুলো সামনে আসবে আর ভালোবাসার মানুষগুলোকে মনে পড়বে। প্রাণের প্রিয় ইকো-১১। হৃদয়ে থাকবে ইকো-১১।

নাহিদুজ্জামান নাহিদ : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আরও