ইলোন মাস্কের ‘নট আ বোরিং কম্পিটিশন’-এর ফাইনালে বাংলাদেশ

ইলোন মাস্কের নট আ বোরিং কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে টিম ‘‌বোরড টানেলারস’।

ইলোন মাস্কের নট আ বোরিং কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে টিম ‘‌বোরড টানেলারস’। ৪০ সদস্যের এ দলটির ১৯ সদস্য আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে অংশ নেবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এ দলটি গঠিত।

ইলোন মাস্কের টানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘‌দ্য বোরিং কোম্পানি’ প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা টানেল নির্মাণ সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বোরড টানেলারস ১৮-২২ মার্চ টেক্সাসে অবস্থান করবে এবং ২৩ মার্চ তাদের যন্ত্রটি বিমানযোগে সেখানে পৌঁছবে। ২৪-২৬ মার্চ যন্ত্রটির পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলবে। মূল প্রতিযোগিতা চলবে ২৭-২৯ মার্চ, যেখানে নিজেদের তৈরি এমটিবিএম ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর টানেল খননের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিযোগিতা শেষে ৩০ মার্চ ক্লিনআপ ও ১ এপ্রিল চূড়ান্ত প্যাকিং সম্পন্ন হবে।

প্রতিযোগিতায় দলগুলোকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিলিমিটার প্রশস্ত একেকটি টানেল খনন করতে হবে। খননের গতি, নির্ভুলতা ও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ এ তিনটি বিভাগে প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো নগর পরিকল্পনা, পরিবহন, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা এবং খনিজ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানেল নির্মাণের খরচ কমানো ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।

বোরড টানেলারস গঠিত হয় ২০২৩ সালে। তারা মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিন (এমটিবিএম) নামে একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেছে, যা রোবোটিকস এবং মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ও কম্পিউটার প্রকৌশল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খনন করতে পারে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট), রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (রুয়েট), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বোরড টানেলারস দলে যুক্ত রয়েছেন।

বোর্ড টানেলারস তাদের প্রযুক্তি আরো উন্নত করতে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টারের (বিটাক) কারিগরি সহায়তা পাচ্ছে। এতে অর্থায়ন করছে গ্রামীণফোন। এছাড়াও সুপার স্টার গ্রুপ, রবিন্স এডু, স্পেকট্রাম, মার্স সলিউটিওস, ইনোভেটেক্স, দ্য আনটাইটেলড কোম্পানি, কসমো গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কারিগরি ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয়ে সহায়তা করছে।

উপদেষ্টা হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ ফেলো সালমান প্রোমন; বিটাকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রশিদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আশরাফুজ্জামান এবং এমআইএসটি এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লেকচারার আহসান সিদ্দিকী।

বাংলাদেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বোরিং মেশিন বানানো এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরার গল্প নিয়ে টিম বোরড টানেলারসের প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার শেখ মোহাম্মদ শিথিল বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ জন মেধাবী প্রকৌশলী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে গত বছর আমাদের যাত্রা শুরু হয়।’ প্রজেক্ট ম্যানেজার ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের দলের বিশেষত্ব হলো ভার্সেটাইল টিম। যেখানে বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিক্রুট করা হয়েছে।’ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার ফাহিন উদ্দীন এনান বলেন, ‘আমরা প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি সেটা হলো প্রাথমিক তহবিলের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলেও সেটি পাওয়া অনেক কঠিন ছিল।’

দলের আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার শাহরিয়ার ইকবাল মাহীম বলেন, ‘টিবিএম এমন এক প্রযুক্তি যেটির ওপেন সোর্স রিসোর্স অনেক কম, তবুও ৪০০ প্রতিযোগীর মধ্যে আমরা এশিয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছি। আশা করছি আমরা বড় কিছু করতে পারব।’

বোরড টানেলারস দলের সদস্য আইইউবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আসিফ হাফিজ বলেন, ‘‌গত বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া টেক, ইটিএইচ জুরিখ এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। তখনো আমাদের যন্ত্রটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তাই আমরা শুধু আমাদের আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম এবং ফাইনালে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। রুকি অ্যাওয়ার্ডও জিতেছিলাম। এবার আমরা যন্ত্রটিকে আরো উন্নত করেছি এবং আশা করছি যে মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রতিযোগিতা হবে সেখানে সেটিকে কার্যকরভাবে চালাতে পারব।’

প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার আগে যন্ত্রটিকে বাংলাদেশে পরীক্ষা করা জরুরি। নির্মাণ, পরিবহন ও ভ্রমণ সব মিলিয়ে বিষয়টি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তবে তারা বাংলাদেশে টানেল নির্মাণ প্রযুক্তিকে আরো সামনে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশে টানেল বোরিং প্রযুক্তির প্রচলন ঘটাতে চায় তরুণ উদ্যোক্তরা। ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি রাস্তা মেরামত, পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য খনন প্রকল্পে কাজে লাগবে বলে জানান তারা।

টানেল খনন প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী, যা শহর এলাকার যানজট কমাতে এবং অবকাঠামো নির্মাণকে আরো কার্যকর করতে পারে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে টানেল খনন আরো দ্রুত ও নিরাপদ হবে। এমনকি মঙ্গল গ্রহ বা চাঁদে আবাসন তৈরির মতো প্রকল্পেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও