সাজিদ হাসানের নস্টালজিক অ্যাপ ‘‌চিঠি ডটমি’

ই-মেইল কিংবা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে কাউকে চিঠি লিখতে তেমন একটা দেখা যায় না।

ই-মেইল কিংবা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে কাউকে চিঠি লিখতে তেমন একটা দেখা যায় না। হয়তো মাঝেমধ্যে চিঠি আসে, দাপ্তরিক প্রয়োজনে। প্রিয়জনের হাতের লেখার ছোঁয়া পেতে আজও হয়তো মাঝেমধ্যে কেউ চিঠি লেখেন। তবে নোটিফিকেশনের শব্দে ব্যস্ত থাকা প্রাত্যহিক জীবনে প্রিয়জনের সঙ্গে নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান এখন যেন রূপকথার গল্প।

সে রূপকথার গল্পকে সত্যিকারের বাস্তবতায় রূপ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ হাসান। ছোটবেলায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদানের স্মৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেই তৈরি করেছেন অ্যাপ চিঠি ডটমি। গত ১১ নভেম্বরে গুগল প্লে স্টোরে প্রকাশিত হওয়া অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ডাউনলোড হয়েছে আড়াই লাখবার।

সাজিদ হাসান বলেন, ‘‌আমি তখন খুব ছোট। আমার ভাই পড়ত রংপুর ক্যাডেট কলেজে। আমি আর আমার বোন ময়মনসিংহ থেকে ভাইয়াকে চিঠি পাঠাতাম। আব্বু আম্মুও লিখতেন। একদিন ভাইয়া আমাদের দেখান তিনি আমাদের পাঠানো সব চিঠিই যত্ন করে জমিয়ে রেখেছেন। আসলে সে সময় থেকেই চিঠির প্রতি আলাদা টান, আলাদা ফ্যাসিনেসন কাজ করে আমার। বর্তমান যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা অনেক যান্ত্রিক। কিছু হলে আমরা সরাসরি টেক্সট করি। কিন্তু আগে ব্যাপারটা এমন ছিল না। আমাদের চিঠি লিখতে হতো। সে সময় আমরা অনেক ভেবেচিন্তে, সুন্দর সুন্দর শব্দ ব্যবহার করে চিঠি লিখতাম। অনেক মায়া, আবেগ জড়িয়ে থাকত এসবে। এখন আসলে টেক্সটে এসব অনুভূতি প্রকাশ সম্ভব না। এ অনুভূতি আর পুরনো দিনের চিঠির প্রতি আবেগটাই এ অ্যাপ তৈরির পেছন আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

সাজিদ হাসানের এ অ্যাপে রয়েছে বেনামি চিঠি লেখার সুবিধা। মাঝেমধ্যে অনেক কথা বলতে মন চায়, যা সামনাসামনি বলা সম্ভব না। চিঠি ডটমি ব্যবহার করে অনেকে ফিরে গেছেন নব্বইয়ের দশকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিদওয়ান আল হাসান বলেন, ‘‌চিঠি অ্যাপ যেন আমাদের দুই যুগ আগে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ঠিক চিঠি লেখার মতো করেই মনের কথা প্রকাশ করা যায়, আমাকে নিয়ে কে কী ভাবছেন সেটাও জানা যায়। ফেসবুকে চিঠি অ্যাপের ব্যবহারের ট্রেন্ড চালু হলে আমি নিজেও ব্যবহার করেছি। আমাদের জন্মের আগের সোনালি দিনগুলোয় টাইম ট্র্যাভেলের মতো অনুভূতি দিয়েছে অ্যাপটি।’

এদিকে চিঠি ডটমিকে অনেকে বলছেন হারিয়ে ফেলা ঐতিহ্যের নব্য রূপ। ডিজিটাল যুগে মানুষ হাত বুলিয়ে নিতে পারছে পুরনো ঐতিহ্যকে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‌ভালো আছি ভালো থেকো/আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো গানটির মাধুরি এখনো হারায়নি, পুরনো হয়নি, তবে ফুরিয়ে গেছে চিঠি লেখার অভ্যাস। এ অ্যাপ সে গানের স্বাদকে বাস্তবে রূপান্তর করেছে। এর ফন্ট, থিম সেই পুরনো স্বাদ দিয়েছে।’

মজার ব্যাপার সাজিদ হাসানের অ্যাপটি ছিল তার করা একটি শখের প্রজেক্ট। তিনি বলেন, ‘‌ভার্সিটিতে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার আগে কয়েকদিন বন্ধ থাকে। সে সময় শখের বসে, কোডিংয়ের প্রতি ভালো লাগা থেকে অ্যাপটি বানিয়েছিলাম। যখন করেছিলাম জানতামও না এটি এত জনপ্রিয় হবে।’ এছাড়া সাজিদ হাসান আরো মনে করেন, নতুন যারা এ রকম অ্যাপ তৈরি বা এ ধরনের কাজ করতে চায়, তাদের উচিত নিজের ভালো লাগার কাজের প্রতি মনোযোগ দেয়া। সে অনুযায়ী কাজ করা। তাহলেই কাজে সফল হওয়া সম্ভব।

আরও