ভ্রমণ

নেপালে প্রকৃতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাঠ

ভ্রমণ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়েও বেশি কিছু। এটি অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এবং শিক্ষা গ্রহণের একটি বিশেষ সুযোগ।

ভ্রমণ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়েও বেশি কিছু। এটি অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এবং শিক্ষা গ্রহণের একটি বিশেষ সুযোগ। সম্প্রতি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেপাল ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন আমরা একটি নতুন মহাবিশ্বের মুখোমুখি হয়েছি। ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মুগ্ধতা শুরু। পাহাড়-মেঘের মধ্যে অবস্থিত এ বিমানবন্দরটি তার স্থাপত্যশৈলী এবং পরিবেশের স্নিগ্ধতা দিয়ে একটি ভিন্ন অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এখানে পৌঁছানোর পর মনে হয়েছিল প্রকৃতি ও সভ্যতার এক বিস্ময়কর সংমিশ্রণ আমাদের স্বাগত জানিয়েছে।

ভ্রমণের প্রথম গন্তব্য ছিল পোখরা। দুদিন ধরে আমরা শহরের অতুলনীয় সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ফেওয়া হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি, অন্নপূর্ণা পর্বতমালার তুষার-সাদা চূড়া এবং স্থানীয় মানুষের সরল জীবনধারা আমাদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। টেকসই পর্যটনের প্রতি স্থানীয়দের সচেতনতা আমাদের দায়িত্বশীল পর্যটনের একটি নতুন ধারণা দিয়েছে। এখানে আমরা শিখেছি কীভাবে স্থানীয় সম্প্রদায় প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে উন্নয়ন ও পর্যটনকে সমান গুরুত্ব দেয়।

তারপর আমরা কাঠমান্ডুতে পৌঁছালাম। এখানে পাঁচদিনের অভিজ্ঞতা ছিল ইতিহাস, আধুনিকতা ও সংস্কৃতির এক অসাধারণ সমন্বয়। প্রথম দিনে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের চূড়া থেকে পুরো শহরের দৃশ্য দেখে মনে হয়েছিল শহর ও প্রকৃতির মধ্যে এক অদ্ভুত বোঝাপড়া রয়েছে। কাঠমান্ডুর এ সমন্বয় আমাদের শিখিয়েছে সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে প্রকৃতির ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

নেপাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আমাদের ভ্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি। এখানে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে

জানার সুযোগ পেয়েছি। আরেকটি স্থান ছিল ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শ্রেণীকক্ষের পরিবেশের কারণে আমরা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিখেছি। এটি প্রমাণ করে যে শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের বিষয় নয়, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়ও।

আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট পরিদর্শন। বৃষ্টিভেজা গোদাবাড়িতে, মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এ কেন্দ্রটি পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের এক বিস্ময়। গবেষকদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি শিখেছি কীভাবে প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।

দরবার স্কোয়ারের ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও কাঠমান্ডুর প্রাণবন্ত সংস্কৃতি আমাদের জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থবহ করে তুলেছে। পোখরার শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি, কাঠমান্ডুর জীবন্ত ইতিহাস এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার এক অমূল্য উৎস হয়ে থাকবে। সভ্যতার জটিল চাহিদার সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের এ সংগ্রাম দেখে আমার মনে হয়েছিল প্রকৃতি কত মহান। নেপালের এ ভ্রমণ আমাকে গভীর উপলব্ধি দিয়েছে—জীবন একটি দীর্ঘ কবিতা, যেখানে প্রতিটি যাত্রা একটি লাইন। সেই লাইনগুলো কেবল আমাদের জন্য নয়, ভবিষ্যতের বিশ্বের জন্যও জ্ঞানের মশাল হবে।

মোছা. মনিরা খাতুন: শিক্ষার্থী, পরিবেশ ও উন্নয়ন অধ্যয়ন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আরও