ক্যাম্পাসে শীত

শীতে বদলে যাওয়া ক্যাম্পাস লাইফ

তেজোদ্দীপ্ত সূর্যটা একটু ক্লান্ত হতেই রাজ করে শীত। হরহামেশাই শোনা যায় পাখির কলরব, থাকে কোলাহলমুক্ত প্রকৃতি, সঙ্গে মানুষের ঠোঁট ফাটার মতো অমসৃণ ত্বক, গাছের পাতা ঝরে যাওয়া এবং সবার মাঝে পিঠা বানানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা—এ যেন শীতকালের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য।

তেজোদ্দীপ্ত সূর্যটা একটু ক্লান্ত হতেই রাজ করে শীত। হরহামেশাই শোনা যায় পাখির কলরব, থাকে কোলাহলমুক্ত প্রকৃতি, সঙ্গে মানুষের ঠোঁট ফাটার মতো অমসৃণ ত্বক, গাছের পাতা ঝরে যাওয়া এবং সবার মাঝে পিঠা বানানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা—এ যেন শীতকালের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। তবে নিজ গাঁ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ যেন আরো বিচিত্র রকমের। মৌসুম পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ক্যাম্পাসগুলোও যেন সজ্জিত হয় নতুন রূপে। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলগুলোয় গেলে ব্যাডমিন্টন খেলায় মত্ত ছাত্রছাত্রীদের এক শ্রেণী পাওয়া যায়। এ সময়টা অনেকেরই কাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে অবস্থিত টংগুলোয় চায়ের আড্ডায়। কোথাও বেসুরো কণ্ঠে এলোমেলো লিরিকের বন্ধুরা সবাই গোল হয়ে বসে গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে শীত মানেই আলসেমি বেড়ে যাওয়া। ভোরে ঘুম ঘুম চোখে গরম কাপড় হুডি, চাদর জড়িয়ে ক্লাস করতে যাওয়া। শিক্ষার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়েই উপভোগ করেন প্রকৃতির এ শীতল অনুভূতি।

রংপুর অঞ্চলে শীতের আগমন প্রকৃতির এক অনন্য রূপকথা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পথঘাট, বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া শিশির আর সূর্যের লুকোচুরির খেলা শীতকে করে তোলে অনন্য। এখানে শীত মানেই কেবল ঠাণ্ডা নয়, এটি এক আবেগ, এক উৎসব। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শীতের আমেজে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করেন চড়ুইভাতি, বারবিকিউ পার্টি আর শীতের জাগরণে মেতে ওঠেন খেলাধুলার উন্মাদনায়। বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচগুলো এক একটি পরিবারের মতো হয়ে ওঠে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান মুন্না বলেন, ‘শীতের রাতগুলোয় উষ্ণতার পরশ ছড়ায় শিক্ষার্থীদের হাসি, গান আর গল্পগুজব। একসময়ের অনিশ্চয়তা আর স্থবিরতার ছায়া কাটিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষার্থীবান্ধব এক প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস। শীতের হিমেল হাওয়া, তার সঙ্গে জ্বলন্ত বারবিকিউর উষ্ণতা, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিলনমেলার প্রতীক হয়ে ওঠে। এখানে শীত মানেই জীবনের উষ্ণতায় ভরা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।’

কুয়াশার সাদা চাদরে মোড়ানো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাস শীতকালে এক রূপকথার রাজ্য হয়ে ওঠে। ভোরের আলো ফোটার আগেই মাটিতে ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ রয়েছে খেজুর রসের গল্প, সব মিলিয়ে শীতের সকালের শুরুটাই অন্য রকম। শিক্ষার্থীরা কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে, চোখে কাঁচা ঘুম নিয়ে ক্লাসে ছুটে যান। কুয়াশার ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় নরম রোদ যখন শরীরে পড়ে, তখন মনে হয় যেন প্রকৃতির স্নিগ্ধতাকে আলিঙ্গন করছি আর মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দুর ঝিলিক মনে আনে অন্য রকম প্রশান্তি। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ শীতকালে হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলা। ক্লাসের ফাঁকে সবাই এখানে জমায়েত হন—আড্ডা, হাসি-ঠাট্টা আর গল্পের জোয়ারে ভেসে যায় সময়। কেউ কেউ ব্যাটমিন্টন কিংবা ভলিবল নিয়ে খেলার মজায় মাতোয়ারা, আর কেউ রোদের আলিঙ্গনে বসে নেন গল্পের স্বাদ।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসাইন বলেন, ‘যশোরের যশ খেজুরের রস—সেই রসের যশ বন্ধুদের সঙ্গে উপভোগ করা অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি করে, ক্যাম্পাসের পথে পথে ঘোরাঘুরি, আর আড্ডায় নানা গানের সুর—সব মিলিয়ে শীতের ক্যাম্পাস জীবন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। যবিপ্রবির শীত মানেই আনন্দ, আড্ডা আর হাজারো রঙে রাঙা জীবনের গল্প, হোক না পড়াশোনা অল্প।’

শীতকালে ক্যাম্পাসের আরেকটি চমৎকার দৃশ্য হলো বিকালবেলা। সূর্যাস্তের আগের মুহূর্তে নদীর ধারে বসে সময় কাটানো এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেয়। নদীর ওপরে ধোঁয়াশার মতো কুয়াশার আস্তরণ আর পাখিদের ডানার শব্দ যেন প্রকৃতির এক সম্মিলিত সিম্ফনি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদ-উন-নবী বলেন, ‘শীতকে ঘিরে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথাও না বললেই নয়। এ সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে সংগীতানুষ্ঠান, নাটক ও কবিতা আবৃত্তি। এগুলোয় অংশ নেয়া শুধু বিনোদনই নয়, শীতের এ সময়গুলোকে তা স্মৃতিময় করে তোলে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের ওপেন এয়ার মঞ্চে যখন আলোর ঝলকানির মধ্যে গান বেজে ওঠে, তখন মনে হয় শীত যেন উষ্ণতার পরশ নিয়ে আসে।’

আরও