মণ শুধু স্থান পরিবর্তন নয়, এটি শেখার একটি বিশেষ মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের জন্য শিল্প পরিদর্শন বাস্তব জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) বিজনেস ক্লাব সম্প্রতি এক শিল্প পরিদর্শনের আয়োজন করে। গন্তব্য ছিল পঞ্চগড়ের বিখ্যাত কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট, তেঁতুলিয়া।
এ শিক্ষামূলক ভ্রমণের সমন্বয়ক ছিলেন ইউল্যাব বিজনেস ক্লাবের উপদেষ্টা শওকত তানভীর রহমান। নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউল্যাব বিজনেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মো. আশিক-উল্লাহ আলভিসহ ক্লাবের অন্য সদস্যরা। সফরে অংশ নিয়েছিলাম আমরা ৭০ জনেরও বেশি। যাত্রা শুরু হয় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। ট্রেনে ওঠার আগে আশিক-উল্লাহ আলভি পুরো সফরের ব্রিফিং করেন। রাত সাড়ে ৮টায় ট্রেন ছেড়ে দেয় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার যাত্রা। সকালে পঞ্চগড় পৌঁছে নাশতা শেষে তেঁতুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দিই আমরা। দুটি বাস আগেই ঠিক করা ছিল, যা পুরো ভ্রমণের সময় ব্যবহৃত হয়। সকালে তেঁতুলিয়ার একটি হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর পৌঁছে যাই কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটে। চা উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপ, চা পাতার প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রতিষ্ঠানটির টেকসই ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে জানার সুযোগ পাই। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা এবং কারখানা পরিদর্শনের মাধ্যমে আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করি।
আমরা চা উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করি। বেশ কয়েকটি ধাপে এ কাজটি করা হয়। প্রথমে জৈবিক পদ্ধতিতে বাগান থেকে কচি চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। এরপর চা পাতার অতিরিক্ত আর্দ্রতা কমিয়ে শুকানো হয়। বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে চা পাতাকে রোল করা, যাতে স্বাদ ও সুগন্ধ বের হয়। এটিকে বলা হয় রোলিং। এর পর শুরু হয় গাঁজন অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে রেখে স্বাদ নির্ধারণের প্রক্রিয়া। পরের ধাপে চা পাতার মান অনুযায়ী শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। সবশেষে প্রস্তুতকৃত চা বাজারজাতের জন্য প্যাকেটবন্দি বা প্যাকেজিং করা হয়। কাজী অ্যান্ড কাজী তাদের চা উৎপাদনে সম্পূর্ণ জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, যা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে।
সফরের দ্বিতীয় দিনে আমরা তেঁতুলিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান পরিদর্শন করি। জিরো পয়েন্ট—যেখান থেকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় সেদিন মেঘের কারণে পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়নি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ও নো ম্যান্স ল্যান্ডে যাই। সেখানে কিছু ছবি তোলারও সুযোগ পাই। এরপর পঞ্চগড়ের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান মহারাজা দীঘি পরিদর্শনে যাই, যা স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী। পুরো দিনজুড়ে সংরক্ষিত বাস দুটি আমাদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যায় এবং পরে পঞ্চগড় রেলস্টেশনে ফিরিয়ে আনে। দ্বিতীয় দিন শেষে সন্ধ্যায় পঞ্চগড় রেলস্টেশনে ফিরে রাত সাড়ে ৮টায় ট্রেন ধরে আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই। এ সফরটি আমাদের বাস্তব ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করেছে। কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা একাডেমিক জ্ঞানকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার সুযোগ পাই।
সাদ হাসিন রায়হান: সাংগঠনিক সম্পাদক, ইউল্যাব বিজনেস ক্লাব