ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব

ঝর্ঝরি ঝরনার ডাকে...

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব প্রকৃতির অনন্য রূপে মুগ্ধ হতে এবং রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে প্রায়ই ভ্রমণের আয়োজন করে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব প্রকৃতির অনন্য রূপে মুগ্ধ হতে এবং রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে প্রায়ই ভ্রমণের আয়োজন করে। গত ১৩ ডিসেম্বর ক্লাবের প্রায় ১০০ সদস্য বিশেষ রোমাঞ্চের খোঁজে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ঝর্ঝরি ঝরনার পথে যাত্রা করি। ক্লাবের এ ধরনের আয়োজন শুধু পাহাড় ও ঝরনা জয়ের জন্য নয়, বরং একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করারও একটি চমৎকার সুযোগ। তিনটি শ্যামলী পরিবহনের বাসে শুরু হয়েছিল আমাদের এ রোমাঞ্চকর যাত্রা, যা ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

সকালে যখন বাসগুলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে যাত্রা শুরু করে, তখন সবাই ছিল উচ্ছ্বাসে ভরা। গল্প, হাসি, গান আর নাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাসের ভেতরের আনন্দময় মুহূর্তগুলো। সিনিয়র সদস্যরা তাদের আগের অভিযানের গল্প শেয়ার করে নতুন সদস্যদের অনুপ্রাণিত এবং ভবিষ্যতের অভিযান সম্পর্কে দারুণ আগ্রহ সৃষ্টি করেন। যাত্রাপথে ক্লাবের পক্ষ থেকে ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়, ম্যাংগো বার এবং হালকা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়, যা দিনের দীর্ঘ হাইকিং অভিযানে সবাইকে শক্তি জোগায়।

মিরসরাইয়ে পৌঁছানোর পর শুরু হয় আমাদের ঝর্ঝরি ঝরনা হাইকিং। ঝরনার পথে হাইকিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগ স্থাপনের আনন্দ। পাহাড়ি পিচ্ছিল মাটির পথ, সরু ঝিরিপথের বাঁক এবং মাঝেমধ্যে জোঁকের কামড় যেন প্রকৃতির এক বিশেষ চ্যালেঞ্জের মতো মনে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি আমাদের ধৈর্যশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছে। তবুও আমরা প্রত্যেকে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছি। ক্লান্তি কিংবা ভয়ের মাঝেও ছিল দারুণ রোমাঞ্চের অনুভূতি। এ যাত্রা যেন সবাইকে শেখাল, প্রকৃতিকে জয় করার অর্থ তার সঙ্গে একাত্ম হওয়া।

ঝর্ঝরি ঝরনার সামনে পৌঁছানোর পর সবার মুখে ছিল এক অন্যরকম তৃপ্তির হাসি। ঠাণ্ডা পানির ঝরনার গর্জন, আশপাশের সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ি পরিবেশ যেন এক মুগ্ধকর দৃশ্যপট তৈরি করেছিল। সেখানে সময় কাটানোর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়। কেউ পানিতে পা ভিজিয়েছে, কেউ ছবি তুলেছে, আবার কেউ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে।

ফেরার পথে ছিল আরো এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে যখন আমরা ফিরে আসছিলাম, তখন নেমে এসেছিল সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ পাহাড়ি পরিবেশকে এক স্বপ্নিল সৌন্দর্য দিয়েছিল। হাঁটার ফাঁকে কেউ পুরনো দিনের গান শুরু করলে সবাই তাতে গলা মেলায়। সেই গান মুহূর্তগুলোকে আরো আনন্দময় করে তোলে। যাত্রার শেষাংশে ক্লাবের সদস্যরা কুমিল্লার একটি হোটেলে রাতের খাবারের সময় হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন, যা দিনটির এক নিখুঁত সমাপ্তি এনে দেয়।

এ অভিযান শুধু একটি ঝরনার কাছে পৌঁছানোর গল্প নয়; এটি ছিল বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। আমরা ক্লাবের সদস্যরা অভিযানের স্মৃতি ধরে রাখতে বিশেষ হাইকিং টি-শার্ট তৈরি করেছিলাম, যা এ দিনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হয়ে থাকবে। আমাদের অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব ভবিষ্যতে আরো অনেক দুঃসাহসিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে।

যারা ভবিষ্যতে ঝর্ঝরি ঝরনায় যেতে চান, তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হচ্ছে—প্রথমত, জোঁকের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য লবণ ও সুরক্ষিত জুতা সঙ্গে রাখা উচিত। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি, ইলেক্ট্রোলাইট এবং শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে। এছাড়া অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া একা যাত্রা করা উচিত নয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো অবশ্যই পরিবেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আবর্জনা না ফেলার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।

এ ভ্রমণ শুধু একটি দিনের অভিযান নয়, এটি সবার জন্য এক দারুণ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। ঝর্ঝরি ঝরনার মতো প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কতটা সৌভাগ্যবান যে এমন দৃষ্টিনন্দন স্থান আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে। আমাদের উচিত এ ধরনের স্থানকে রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের এ অভিযান প্রকৃতি ও বন্ধুত্বের এক অসামান্য মেলবন্ধন।

মো. ইফতেখার হোসেন নক্ষত্র: জেনারেল সেক্রেটারি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব

আরও