চকরিয়া থেকে আলীকদমের দিকে ছুটে চলেছে চান্দের গাড়ি। এরপর হাঁটা পথ ইটের রাস্তা। চারদিকে গাছ, মাঝখানে ছোট পাহাড়ি রাস্তায় ঝরঝরে বাতাস এবং ঝলমলে রোদের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল শিক্ষার্থী। গন্তব্য মেঘচূড়া পর্বত, জাজিয়া হিলও বলেন অনেকে। ব্যস্তময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ল্যাব-সিটি-কুইজের চক্করে একটু ফুরসত পাওয়াই দুষ্কর। তাই তো এবারের শীতকালীন ছুটি পেয়েই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে চলেছেন তারা।
পাহাড়ের উঁচুতে উঠতে উঠতে প্রথমদিন বিকাল হয়ে যায়। সেদিন আর তেমন করে সূর্যাস্ত দেখা হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর তাঁবু খাটিয়ে শুরু হয় মুড়িমাখা, আড্ডা আর খুনসুটি। উনো খেলার পাশাপাশি চলে গানবাজনা। রাতে পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে যায়। সঙ্গে সেদিন থেমে থেমে হচ্ছিল বৃষ্টি। ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছিল যেন এক প্রাকৃতিক শিরশিরে অনুভূতি। আড্ডা আর গল্প, সঙ্গে গানের কলিগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল পাহাড়ের গহিনে। বিপরীতে নিস্তব্ধ পাহাড় ফিরিয়ে দিচ্ছিল যেন আত্মিক প্রশান্তি।
বছরের দীর্ঘতম রাত কাটানো, আবার পাহাড়ের সঙ্গে, ঝুম ঘরে। এ যেন অপূর্ব এক অনুভূতি। এভাবে সময় পার হয়ে যায়, রাতও গভীর হয়ে যায়। আগামীকালের প্রস্তুতি নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীরে ঘুমের মধ্য দিয়ে হয় প্রথম দিনের সমাপ্তি।
দ্বিতীয় দিনে শুরু হয় আবারো পথচলা। এবার লক্ষ্য ১৬০০ ফুট উঁচু মারায়ন তং। এর অন্যতম সৌন্দর্য হলো মেঘ। তবে আকাশ অনুকূল না থাকায় সেভাবে মেঘের সৌন্দর্যটা উপভোগ করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দিনের যাত্রায় পাশে ছিল আকাশের ঝলমলে রোদ। পাহাড় বিলিয়ে দিচ্ছিল একরাশ বাতাস আর অপার সৌন্দর্য। রোদ আর সবুজ ঝলমলে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে করতে একসময় সম্ভব হলো পাহাড় চূড়ায় পৌঁছানো। সবার ফটোসেশনের পর দুপুরের খাবার খেয়ে শুরু হলো অভিযানের দ্বিতীয় অংশ—আলীর গুহা ভ্রমণ।
ভ্রমণের এ অংশে জীবনের ঝুঁকি ছিল সবচেয়ে বেশি। ১০০ ফুট লম্বা এ গুহাটিতে পাহাড়ি ঝিরি থেকে ওঠা খুবই কষ্টকর। দুপুরের দিকে বাইরে প্রচুর রোদ থাকলেও এ গুহার ভেতরে একদম অন্ধকার। পানি ভেজা পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে তারপর গুহায় যাত্রা ছিল বেশ বিপজ্জনক। একটু এলোমেলো হলে সেখানেই শেষ। তবে সারাদিন ক্যালকুলাস নিয়ে মেতে থাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছেলেমেয়েগুলো তো দমে যাওয়ার পাত্র নয়। মেপে মেপে এক বুক সাহস সঞ্চয় করে চলল গুহা জয়ের যাত্রা। অন্ধকার পথ পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ।
ট্যুরের অন্যতম সদস্য কাজী নাবিলা রাইসা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলে আমরা একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে পড়ব। কারো সঙ্গে কারো আর সেভাবে দেখা হবে না। কথাও হবে না হুটহাট। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যখনই সময় পাব, এ সময়টায় সারা দেশ ঘুরব। আর পাহাড় হলে তো কথাই নেই। পাহাড়ের সৌন্দর্য কাকে না আকর্ষণ করে! তাই তো এবারের শীতকালীন ছুটি পেয়ে সবাই ছুটে এলাম পাহাড়ে।’