দুই দশকের সাফল্য
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি এখন পর্যন্ত ১৮৯টি দেশের প্রায় ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। ইউরোপের ছয় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বে পরিচালিত এ প্রোগ্রামে বর্তমানে ২১০টির অধিক মাস্টার্স প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে।
এ স্কলারশিপের বিশেষ আকর্ষণ হলো শিক্ষার্থীদের ইউরোপের ন্যূনতম দুটি দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সর্বোচ্চ চারটি দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে) পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ, যার সব খরচ স্কলারশিপ দ্বারা কাভার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৪০০ ইউরো (১ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রায়) মাসিক ভাতা, ভ্রমণ খরচ, স্বাস্থ্যবীমা ও গবেষণা সম্পর্কিত ব্যয়। এমনকি বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার ও একাডেমিক ইভেন্টেও অংশগ্রহণের সব খরচ এ প্রোগ্রাম থেকে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১৩০ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ লাভ করেছেন, যা সারা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৫১। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপের মাধ্যমে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা শুধু ইউরোপে উচ্চ শিক্ষার সুযোগই পাচ্ছেন না; তারা বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজেদের প্রতিভার প্রমাণ দিচ্ছেন। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগারে, প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কিংবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন।
আবেদন প্রক্রিয়া
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপে আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করতে হয়। আবেদন করতে কোনো ফি প্রয়োজন হয় না, যা এটি আরো বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব করে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ ডিগ্রি সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট, জীবনবৃত্তান্ত, মোটিভেশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার জমা দিতে হয়। কিছু প্রোগ্রামে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র জমা দেয়া বাধ্যতামূলক হলেও বিভিন্ন প্রোগ্রামে ইংরেজি মাধ্যমের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন সনদ দিয়ে আবেদন করতে পারেন। আবেদনের সময়সীমা সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর-জানুয়ারি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
প্রোগ্রাম বাছাইয়ে নিজের একাডেমিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল রেখে উপযুক্ত প্রোগ্রামগুলো খুঁজে বের করুন।
মোটিভেশন লেটার লেখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সময় দিন। একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজস্ব একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, গভেষণা/কাজের অভিজ্ঞতা, কেন তিনি এ প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন সংক্ষিপ্ত কথায় তার আবেদনের তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এ প্রোগ্রামে পড়ালেখার মধ্য দিয়ে দেশ কিংবা সমাজে কীভাবে উপকৃত হবে, নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি নিখুঁতভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করুন।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতায় ভালো স্কোর নিশ্চিত করুন। প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার প্রমাণপত্র ব্যবহার করতে পারেন।
আবেদনে জীবনবৃত্তান্ত (Curriculum Vitae) জমা দিতে হয়। Europass ফরম্যাট ব্যবহার করা উত্তম। https://europass.europa.eu/en -এ লিংক থেকে Europass ফরম্যাট সম্পর্কিত বিস্তারিত জানা যাবে।
সময়মতো আবেদন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করুন। আবেদন জমা দেয়ার কাজ শেষ মুহূর্তের জন্য রাখবেন না।
সফলতার গল্প তৈরি করুন
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ শুধু উচ্চ শিক্ষার একটি সুযোগ নয়; এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন জীবনের সূচনা। নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক শিক্ষার সুযোগ তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে এক বিশাল প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সামনে এখন এ সুযোগ আরো উজ্জ্বল। উচ্চ শিক্ষায় নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের গৌরবকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারছেন।
ইউরোপে উচ্চ শিক্ষার এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ আপনার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হতে পারে। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে ঘুরে আসুন, তথ্য সংগ্রহ করুন এবং প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করুন। আত্মবিশ্বাসী হন এবং দেখুন কীভাবে আপনার সাফল্য একদিন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে অন্যদের জন্য—ইউরোপের উচ্চ শিক্ষার দিগন্ত আপনাকে ডাকছে।
ইরাসমুস মুন্ডুস জয়েন্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনের লিংক:
https://www.eacea.ec.europa.eu/scholarships/erasmus-mundus-catalogue_en
ড. মো. আশিকুর রহমান: প্রেসিডেন্ট, ইরাসমুস মুন্ডুস অ্যাসোসিয়েশন