বসন্তের ভোর। দিনের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। বাতাসে হিমেল পরশ। দৌড়াচ্ছেন একদল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। তাদের মধ্যে শিশু, ছেলে-বুড়ো, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। ছিলেন শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, পেশাদার-অপেশাদার দৌড়বিদ, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ। কেউ কেউ এসেছিলেন সপরিবারে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
বলছিলাম গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ডিইউআরসি ১০ কিলোমিটার ২০২৫’ শীর্ষক সচেতনতামূলক দৌড় প্রতিযোগিতার কথা। ‘রান ফর গ্রিন ক্যাম্পাস’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১২ শতাধিক দৌড়বিদ নিয়ে ১০ ও ৫ কিলোমিটারের এ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি রানার্স কমিউনিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সংগঠন এটি। আয়োজন সহযোগী ছিল শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
প্রতিযোগীরা হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন বসুনিয়া তোরণ থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশন, ঢাকা গেট, শিক্ষা ভবন, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, ভাস্কর্য মোড়, ব্রিটিশ কাউন্সিল, মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করেন। আয়োজনের রেস ডিরেক্টর সাইফুল্লাহ সাদেক জানান, পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসের দাবি নিয়ে এ আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের দাবি থাকলেও আমাদের এ বার্তা দেশের জন্য। এ সময় পরিবেশ এবং জলবায়ু সচেতনতায় আমাদেরকে বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে। একটা সবুজ ও নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে হবে। আর মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের দ্বারাই এমন দেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব।
পরিবেশ সচেতনতামূলক এ দৌড় প্রতিযোগিতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অপেশাদার দৌড়বিদদের পাশাপাশি অংশ নেন দেশের খ্যাতনামা প্রায় সব দৌড়বিদ, আয়রনম্যান, মাস্টার অ্যাথলিটস, এভারেস্টজয়ীসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দৌড়বিদরা। প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্য একটি সবুজ ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গন। সুস্বাস্থ্য আর নির্মল পরিবেশ যে একই সূত্রে গাঁথা—এ আয়োজনের মাধ্যমে সেই ধারণাই দেন আয়োজকরা। এছাড়া এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রিন হাউজের প্রভাব, পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এ ট্র্যাকে যারা পাঁচ কিলোমিটারের প্রতিযোগী, তারা দৌড়ান এক ল্যাপ। আবার যারা ১০ কিলোমিটারের প্রতিযোগী, তারা দৌড়ান দুই ল্যাপ। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে ১০ কিলোমিটার এবং ৬০ মিনিটের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার যারা দৌড় শেষ করেন, তাদের প্রত্যেককে ফিনিশিং মেডেল, খাবার ও অন্যান্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। নারী ও পুরুষ এ দুই ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জন প্রতিযোগীকে নগদ অর্থ, বিশেষ স্মারক প্রদান করা হয়।