বিইউএফটি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব

মানবিক কাজে অনন্য

কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা, হিম বাতাস আর কখনো কখনো শৈত্যপ্রবাহ। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে তাপমাত্রা।

কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা, হিম বাতাস আর কখনো কখনো শৈত্যপ্রবাহ। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে তাপমাত্রা। অগ্রহায়ণের শুরু থেকে পৌষের দিনগুলোয় উত্তরের জেলাগুলোর আবহাওয়ার চিত্র এটি। শীত আর কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। সৈয়দপুর রেলস্টেশনে তো প্রতি রাতে ৩০ টাকায় কম্বলও ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবিপুরে সুবিধাবঞ্চিত শীতার্ত হাজারো মানুষের মাঝে উষ্ণতার পরশ ছড়িয়েছে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব। বিইউএফটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সংগৃহীত তহবিলের মাধ্যমে প্রায় সাত হাজার মানুষের মাঝে কম্বল, জ্যাকেট ও সোয়েটার বিতরণ করেন বিইউএফটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফারুক হাসান, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব নবী খান এবং সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সদস্যরা।

শুধু শীতের সময়ই নয় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বছরজুড়েই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাবের নানা মানবিক কর্মযজ্ঞ। মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের বিষয়েও কাজ করে ক্লাবটি। দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সঙ্গী হন শিক্ষার্থীরা।

কখনো অনাথ ও এতিম শিশুদের পাশে খাবার নিয়ে, কখনো দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন, বছর শুরুতে ছোট শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কিংবা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় স্কুল ড্রেস বিতরণ, আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, এমন সব নানা মানবিক কাজে বছরজুড়েই ব্যস্ত সময় পার করে বিইউএফটি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব।

চব্বিশের বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ ১১ জেলার ২০ উপজেলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ১০ হাজার ৬৭৪ বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন ১১ জেলার মানুষের মাঝে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা হয় ১৫ লাখ টাকা। ঢাকার স্বপ্নকূড়ি পাঠশালার ৭০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে নিজেদের হাতে তৈরি স্কুল ব্যাগ উপহার দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ওয়াংনিম কিয়াং স্কুলের ৩০ শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ড্রেস বিতরণ করা হয়। এ স্কুলে আগে শিক্ষার্থীদের কোনো স্কুল ড্রেস ছিল না।

বিইউএফটি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব শুধু মানুষের সেবাই নয় পরিবেশ রক্ষায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পণ্যের পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে স্থায়ী পৃথিবী গড়তে কাজ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্লাব থেকে আয়োজন করা হয় মেন্টাল হেলথ ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক সেমিনার।

ইউনিভার্সিটি পাশে বেদে বস্তিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, এতিমখানায় খাবার বিতরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ গ্রহণ, মেডিকেল ক্যাম্প, নদীর বিশুদ্ধতা রক্ষায় সচেতনতা এবং নদী ভরাট ও দখল থেকে রক্ষায় প্রচারণাসহ নানা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ক্লাবটির সভাপতি মো. শিহাবুর রহমান বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের নাগরিক হিসেবে সমাজের মানুষের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

কমিউনিটি সার্ভিস শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়ায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের একটি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন বিইউএফটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কার্যক্রম ব্যক্তি জীবনে আরো বেশি মানবিক হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। কমিউনিটির সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সারা বছরই শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো মানবিক ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কাজে আমরা সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। বিওটি চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রমগুলো আরো সামনে এগিয়ে নেব।’

আরও