বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য নানা ধরনের ফুল ফ্রি স্কলারশিপ রয়েছে। এ স্কলারশিপগুলোর আওতায় বিমানের আসা-যাওয়ার টিকিট, আবাসন ব্যবস্থা, খাবার, মাসিক ভাতা, ভিসা ফি, টিউশন ফি ও স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। এ স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বিদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা পাঁচটি স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব আজকের লেখায়।
ডাড স্কলারশিপ
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় স্কলারশিপ হলো ডাড স্কলারশিপ। German Academic Exchange Service (DAAD) কর্তৃক অর্থায়নকৃত এ স্কলারশিপ প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীদের অর্থায়ন করে। যারা আবেদন করতে পারবেন—ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরাল ছাত্রছাত্রীরা। একাডেমিক পারফরম্যান্স ও মোটিভেশনের ওপর ভিত্তি করে এ স্কলারশিপ দেয়া হয়। মাস্টার্স স্টুডেন্টদের জন্য প্রতি মাসে ৮৬১ ইউরো সঙ্গে বাসা ভাড়া দেয়া হয়। জার্মানির যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ইরাসমুস মুন্ডুস
ইউরোপের দেশগুলোয় উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চাইলে আবেদন করতে পারেন ইউরোপিয়ান কমিশন প্রদত্ত ‘ইরাসমুস মুন্ডুস’ স্কলারশিপের জন্য। সিভি, একাডেমিক যোগ্যতা, মোটিভেশন ও রেকমেন্ডেশন লেটার, ভাষা দক্ষতা ইত্যাদির ভিত্তিতে ইউরোপিয়ান কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন কমিটির সদস্যরা স্কলারশিপের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করেন। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপের অধীনে টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ, বিমান খরচ, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, গবেষণাসংক্রান্ত ফি সব খরচ বহন করা হয়।
১৯৮৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ। এ স্কলারশিপে কমপক্ষে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। এখানে ১২০-এর অধিক কোর্স রয়েছে। এ প্রোগ্রামে কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণাপত্র, কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি থেকে শুরু করে সব বিষয়েই গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে এ প্রোগ্রামে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়। এ স্কলারশিপে মাস্টার্স প্রোগ্রামে রয়েছে ১১৬টি কোর্স আর পিএইচডিতে ১২৯টি। এগ্রিকালচার, ভেটেরিনারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মানুফ্যাকচার ও কনস্ট্রাকশন, হেলথ ওলেথফেয়ার, হিউম্যানিটি, আর্টস, সায়েন্স, ম্যাথেমেটিকস, কম্পিউটিং, সোশ্যাল সায়েন্স, বিজনেস, ল—এসব স্টাডি ফিল্ডে আপনি পড়াশোনা করতে পারবেন।
ফুলব্রাইট স্কলারশিপ
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা একটি স্কলারশিপ হচ্ছে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ। স্কালারশিপটি যাত্রা শুরু করে ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট। এ প্রোগ্রাম কোর্স সময়কালীন টিউশন, বিমান যাতায়াত ভাড়া, বসবাসের জন্য মাসিক ভাতাসহ স্বাস্থ্য বীমা বহন করে।
‘ফুলব্রাইট ফরেইন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় বিশ্বের ১৫৫টি দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশ্বের প্রথম সারির ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৭০টিই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা অথবা বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ সুখ্যাতি ধরে রেখেছে।
শেভেনিং স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্যে পড়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ হলো ব্রিটিশ চেভেনিং বা শেভেনিং স্কলারশিপ। এ স্কলারশিপের অফিশিয়াল নাম শেভেনিং মাস্টার্স স্কলারশিপ, যা যুক্তরাজ্যে মাস্টার ডিগ্রি প্রত্যাশীদের দেয়া হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের অর্থায়নে যাত্রা শুরু করে শেভেনিং স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় এ বৃত্তি। এ প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার্থীরা মাসিক ভাতা, বিমান ভাড়া, নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পায়।
কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ
কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ প্রদান করে। স্কলারশিপটি ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) দ্বারা অর্থায়িত হয়। বৃত্তির আওতায় একজন শিক্ষার্থী পাবেন বিনা টিউশন ফিতে যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ। এছাড়া আবাসন ও বসবাসের আনুষঙ্গিক এবং বিমানে যাতায়াত খরচও বহন করা হয়।