গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়া লক্ষ্য

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে রয়েছে। এখন তারা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় রাখছে।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে রয়েছে। এখন তারা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় রাখছে। সরকারি চাকরি, মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থী রয়েছে। এখানে অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরি পেয়ে যায়। আমাদের প্রচুর শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হিসেবেও সমাজকে সেবা দিচ্ছে। আমি মনে করি এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।

বর্তমানে আমাদের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। সপ্তাহ খানেক আগেই আমরা একটা এইচআর সামিট করেছি, যেখানে বেশকিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসেই চাকরি পেয়েছে। এ ব্যাপারগুলো নতুন হচ্ছে এমন নয়, বরং উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম থেকেই এমন আয়োজন করে আসছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার শিক্ষা, বিভিন্ন ক্লাবে অংশগ্রহণ ইত্যাদিতে নিয়মিত অংশ নেয়। ফলে তাদের মাঝে কাজ করা জড়তা ও অস্বস্তি কেটে যায় এবং নিজেদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। চাকরির বাজারেও তারা সহজেই নিজেকে প্রকাশ করতে পারে ও অন্য দশ জন প্রতিযোগীর তুলনায় এগিয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য পূরণ বিশাল ব্যাপার আসলে। অনেক ধরনের লক্ষ্য থাকে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে, যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে ও সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। লক্ষ্যগুলোর মাঝে মূলত শুরুতে আমরা চেয়েছিলাম দেশের ৬৪ জেলার শিক্ষার্থীরা সহজে ও সাশ্রয়ী খরচে যেন উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে। এ জায়গায় আমি বলব উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় এ লক্ষ্য অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছে। আমাদের আগের স্লোগান ছিল ‘‌সাশ্রয়ী টিউশন ফিতে মানসম্পন্ন শিক্ষা’। আর এ সাশ্রয়ী ফিতেই প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী নিজেদের শিক্ষাজীবন এখান থেকে সম্পন্ন করেছে। সময়ের চাহিদায় গবেষণাকে আমরা এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই জায়গায় কাজ করার জন্য আমরা বর্তমানে ‘‌উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষতা’—এ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে প্রচুর বিদেশী ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা গবেষণার কাজও করছেন। বর্তমানে গবেষণায় বাজেটও বেশি রাখা হচ্ছে। আমরা গবেষণাকে উৎসাহিত করতে শিক্ষকদের রিওয়ার্ড দেয়ার ব্যবস্থাও রেখেছি।

মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় একটি বিশেষত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব। এখানে শিক্ষার্থীরা সহজেই শিক্ষকের কাছে আসতে পারে, শিক্ষকরা সহজেই ম্যানেজমেন্টের কাছে আসতে পারে। এ তিনটা গ্রুপের মাঝে সমন্বয় রেখে একটি টিম হয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের টিম স্পিরিটটা অনেক ভালো যার ফলে যেকোনো কাজে হাত দিলেই সফলতা আসছে। অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এদিক দিয়ে আমরা বিশেষত্ব দাবি করতে পারি।

পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে খেলাধুলা, ডিবেট, সামাজিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও জোর দেয়া হয়। আমাদের একটি হিউম্যানিটিজ ল্যাব আছে, যেখানে গেলে যেকোনো মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে অল্প সময়েই। এছাড়া ফুল টাইম কাউন্সেলিং করার জন্য কাউন্সিলর ও স্টাফ আছেন যারা শিক্ষার্থীদের সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। ক্যাম্পাসের ভেতর থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো অসুবিধায় সেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল অফিসার আছে। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা সবার দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে।

পড়াশোনার ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং, ল, ফ্যাশন ডিজাইন ও বিজনেসসংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও এখানে মৌলিক বিষয়গুলো যেমন ফিজিকস, ম্যাথ, ইংরেজি, বাংলা, এডুকেশন, ফিজিক্যাল এডুকেশন ইত্যাদিতেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের বিষয় পড়াতে আগ্রহী হয় না, কিন্তু আমরা এসব রেখেছি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমরা যা বুঝি ও কল্পনা করি সেখানে এ মৌলিক বিষয়গুলো না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা পায় না। এ বিষয়গুলো উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে।

নতুন ক্যাম্পাসে আসার পর অত্যাধুনিক ক্লাসরুম সুবিধা, অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা, আন্তর্জাতিক মানের বিশাল সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজনের জন্য মাল্টিপারপাস হল, খেলাধুলার জন্য মাঠ, সেমিনার-ট্রেনিং-প্রোগ্রাম-খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য যা দরকার সবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিনে পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। আশপাশে সুন্দর পরিবেশ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

নতুন ক্যাম্পাসে আসার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হওয়া উচিত, তেমন সুবিধা আমরা শিক্ষার্থীদের দিতে পারছি। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে বিধায় তারা নিরাপদে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের জন্য হোস্টেল ফ্যাসিলিটি রয়েছে, যা সামনে আরো বাড়ানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। ল্যাব ও ক্লাসরুম ফ্যাসিলিটিজও আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করার জন্য কাজ করছি। ডিজিটাল লাইব্রেরি ও সার্ভার তৈরি করা হয়েছে, তা আরো উন্নতমানের ও সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ চলছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চমৎকার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে আগ্রহীরা সব তথ্য পাবেন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। ওয়েবসাইটটি অনেকের প্রশংসা পেয়েছে সৌন্দর্য ও উপযোগিতার জন্য।

লেখক: উপাচার্য, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও