রিসার্চ সোসাইটি

মাঠ গবেষণায় আগ্রহী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব

গবেষণাপত্র লেখা অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। অনেক পড়াশোনা, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সঠিকভাবে উপস্থাপন—সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল।

গবেষণাপত্র লেখা অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। অনেক পড়াশোনা, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সঠিকভাবে উপস্থাপন—সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জকে সহজ করতে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত উদ্যোগে গঠিত এ ক্লাবের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং মানসম্মত গবেষণাপত্র লেখার দক্ষতা তৈরি করা। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব শুধু একটি ক্লাব নয়, এটি একটি গবেষক পরিবার। গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই এ ক্লাবের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে ক্লাবটি ছয়টি বিভাগে বিভক্ত, যেখানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ক্লাবের নিয়মিত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে—গবেষণাপত্র লেখা শেখানো, সাপ্তাহিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজন, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট ও ফিল্ড রিসার্চ, গবেষণাপত্র প্রকাশনা এবং রিসার্চ ওয়াল পরিচালনা।

ক্লাবের সদস্যরা শুধু তাত্ত্বিক গবেষণায় সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। এসব তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয় হ্যান্ডনোট এবং রিসার্চ পোস্টার, যা ক্লাবের রিসার্চ ওয়ালে প্রদর্শিত হয়। ২০২৪ সালে ক্লাবের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয় রিসার্চ ভিজিট প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এর আওতায় শিক্ষার্থীরা আকিজ গ্রুপ, ইনসেপটা, অগমেডিক্স ও সিটি ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করেন। এসব ভিজিট কেবল পর্যবেক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং শিক্ষার্থীরা বাস্তবসম্মত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেন। ক্লাবের অন্যতম বড় সাফল্য হলো ২০২৪ সালে প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ রিফ্লেকশন। এতে ক্লাবের শিক্ষার্থীদের লেখা থিম পেপার ও গবেষণাপত্র সংকলিত হয়েছে। ক্লাবের সভাপতি আবতাহি নূর বলেন, ‘‌আমাদের লক্ষ্য আরো গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করা, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করবে।’

গত বছর ক্লাবটি আয়োজন করে এক্সটেন্ডারস ইভেন্ট, যেখানে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিয়ে পোস্টার প্রেজেন্টেশন হয়। ইন্ডাস্ট্রির অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের গবেষণাকর্ম পর্যালোচনা ও পরামর্শ দেন। এর আগে ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ক্লাবটি রিসার্চ ডে উদযাপন করে। দিনটিতে গবেষণাপত্র উপস্থাপন, কুইজ প্রতিযোগিতা ও থিম পেপার প্রকাশনার মতো আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল। ক্লাবের কার্যক্রম শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিল্ড রিসার্চ আয়োজন করা হচ্ছে। বান্দরবানের আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি এবং শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রা নিয়ে ক্লাবের সদস্যরা গবেষণা করেছেন। এ ধরনের কাজ শিক্ষার্থীদের সামাজিক বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে ক্লাব নতুন সদস্য নিয়োগ দেয়। নতুনদের জন্য দায়িত্ব বণ্টন, টিম বিল্ডিং ওয়ার্কশপ ও গ্রুপভিত্তিক রিসার্চ পেপার লেখার আয়োজন করা হয়। সিনিয়ররা নতুনদের রিসার্চের মৌলিক বিষয় শেখায়। প্রতি মাসেই অ্যাবস্ট্রাক্ট লেখা, টপিক নির্বাচন ও পেপার হেডিং সিলেকশনের মতো বিষয়ের ওপর ওয়ার্কশপ হয়। এর মাধ্যমে সদস্যরা ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

ক্লাবটির মডারেটর ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ড. তার্নিমা ওয়ারদা আন্দালিব বলেন, ‘‌‌‌শিক্ষার্থীরা রিসার্চ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী। তাদের উদ্দীপনা নতুন করে সম্ভাবনা জোগাচ্ছে। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে রিসার্চ বা থিম পেপার প্রকাশ করার জন্য উদগ্রীব। এরই মধ্যে আমাদের প্রথমটি প্রকাশিত হয়ে গেছে এবং আমরা তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় রিসার্চ বুক প্রকাশনা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আশা করছি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’

গবেষণা একটি জাতির উন্নয়নের চালিকাশক্তি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব সে লক্ষ্যেই তরুণদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করছে। “রিফ্লেকশন” বই প্রকাশ, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট ও গ্রামীণ পর্যায়ের গবেষণার মতো উদ্যোগগুলো ক্লাবের সফলতার সাক্ষর। ভবিষ্যতে এ ক্লাবের হাত ধরে আরো অনেক গবেষণার আলোয় উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম।

অনিমা পোদ্দার: কো-অর্ডিনেটর, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট ক্লাব

আরও