অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী। উপ-উপাচার্য, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে দীর্ঘ ৩২ বছরের অভিজ্ঞ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই দশক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রয়েছে দেশের বাইরেও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফাহাদ হৃদয়
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে যখন উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তখন আমার মনে হয়েছে এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অনেক উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. এম আজিজুর রহমান একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ। তার সুযোগ্য সহধর্মিণী বর্তমান উপাচার্য ও সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা লেখাও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করছেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। দেশে ফিরে আসার পেছনে আমার স্বপ্ন ছিল দেশের শিক্ষা খাত বিশেষ করে বেসরকারি খাতের জন্য কিছু করা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে নিয়ে যেতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
যোগদানের পর এক বছরের অভিজ্ঞতায় অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখানে কোন বিষয়টি ইউনিক বলে মনে হয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক আমি বলব এখানে যিনি পড়াচ্ছেন তার পরিচয় বা কতটা দক্ষ শিক্ষক এখানে শিক্ষাদান করছেন। পরের বিষয় আসবে কারা এখানে পড়ছে। আমরা এখন যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি তা হচ্ছে কোন শিক্ষক এখানে পড়াচ্ছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক মানের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের ডিগ্রি অর্জন করেছেন তা আমরা প্রথম মানদণ্ড হিসেবে বিচার করছি। পাশাপাশি গবেষণায় কতদূর অগ্রসর তাও দেখা হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাসে আমরা নতুন প্রায় ৪০-৫০ জন বিদেশী পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। প্রায় সাড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার শিক্ষার্থীবিশিষ্ট আর যত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে আছে তাদের কেউই বলতে পারবে না, এত স্বল্প সময়ে এত বেশি বিদেশী পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। তাদের মধ্যে আমেরিকান, কানাডিয়ান, ইউরোপিয়ান, ইউকে, জাপান, ভারত, চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছেন। অর্থাৎ সারা বিশ্ব থেকে আসা উন্নত মানের শিক্ষাধারীদের সমন্বয় এখানে আমরা করেছি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্নত শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে। আমরা যদি আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমি যে দ্বিতীয় বিষয়টি বলেছি, কেমন শিক্ষার্থীরা পড়ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই জায়গায়ও আমরা উন্নতি করতে পারব।
আরেকটি বড় বিষয় হলো সুন্দর পরিবেশে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস। ফ্রি বাস সার্ভিস রয়েছে সব শিক্ষার্থীর জন্য, আবার কাছাকাছি দুটি মেট্রো স্টেশন রয়েছে। ভবিষ্যতে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী যেন এখানে পড়তে পারে ততটুকু সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ভবিষ্যতে লাইফ সায়েন্স স্কুল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এরই মধ্যে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ফর ইনোভেশনে আমরা পুরো বিশ্বে ২৭৬তম পজিশন পেয়েছি যেখানে বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারেনি। এ র্যাংকিংয়ের একটা ক্যাটাগরি আছে স্টুডেন্ট এনগেজমেন্ট নামে যেখানে আমরা ১২তম অবস্থানে রয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী তিন-চার বছরের মাঝে টাইমস হায়ার এডুকেশন, কিউএস এশিয়া, কিউএস ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নেয়া। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ল গ্র্যাজুয়েট এরই মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে প্রায়ই। মাত্র ২১ বছর বয়সী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ বিষয়গুলো অবশ্যই অনন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি ম্যাক্রোলেভেলে আমি বলব ম্যানেজমেন্ট অনেক শক্তিশালী, কোনো বিষয়ে সহজেই তাদের কাছে যাওয়া যায় ও তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুসারে অনুমোদন দিয়ে দেন। মাইক্রোলেভেলে আরেকটি বড় শক্তির বিষয় হলো শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতা ও নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব।
কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজের দিক থেকে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু এগিয়ে আছে বলে মনে করেন?
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে অনেকগুলো ক্লাব কাজ করছে। এ ক্লাবগুলো নিয়মিত প্রোগ্রাম, অ্যাক্টিভিটি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে বাইরের দুনিয়ার জন্য। এছাড়া এখানে এইচআর সামিটের মতো ক্যারিয়ারসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয় প্রায়ই। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই চাকরির সুযোগও পাচ্ছেন। রয়েছে শিক্ষক ও উচ্চতর ডিগ্রিতে অধ্যয়নরতদের জন্য গবেষণার সুযোগ। গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নতুন স্লোগানে কাজ করছি আমরা। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন লাইব্রেরি, ল্যাব ও ম্যানেজমেন্টের সহায়তায় এখানে সবাই পরিবেশ পাচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলার। ছাত্ররা অবসরে বাইরে খেলাধুলা করে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ রাখারও সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন নামে একটি বিষয়ও রয়েছে একাডেমিক কারিকুলামে, যা অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই। আমি বলব কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা সবসময়ই সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ দিতে প্রস্তুত।