অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট

উচ্চশিক্ষায় সম্ভাবনাময় অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট

অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং এমন একটি শিল্প, যা পোশাক উৎপাদন ও বাজারজাতের পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং এমন একটি শিল্প, যা পোশাক উৎপাদন ও বাজারজাতের পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সেক্টরে অ্যাপারেল পণ্যের উৎপাদন ও উন্নয়ন, উপকরণ সংগ্রহ, পরিকল্পনা এবং রফতানি বাজারে পণ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে পোশাক শিল্প বৈশ্বিক বাজারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং নিঃসন্দেহে একটি চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্র, যা সৃজনশীলতা ও ব্যবসার মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করে। এ পেশায় কর্মরত ব্যক্তিরা সঠিক কাপড় নির্বাচন, উৎপাদনের সময়সূচি নির্ধারণ, সরবরাহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং চূড়ান্ত পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন, যা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা ব্র্যান্ড ও বিক্রেতাদের সময়মতো সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে সহায়তা করেন, যাতে সে পণ্য গ্রাহকের কাছে সর্বোচ্চ গুণগত মান এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছায়।

অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং প্রক্রিয়াটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেন্ড ফোরকাস্টিং এবং বিশ্লেষণ, পণ্য উন্নয়ন, উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন পরিকল্পনা ও বিতরণ। প্রথমে মার্চেন্ডাইজাররা বাজারের প্রবণতা এবং গ্রাহকের চাহিদা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে কোন স্টাইল, কাপড় ও রঙ জনপ্রিয় হবে তা পূর্বানুমান করেন। পণ্যের ধারণা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কাপড় ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী সংগ্রহ করেন। উৎপাদন পরিকল্পনার পর্যায়ে, উৎপাদনের সময়সূচি নির্ধারণ, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। সবশেষে মার্চেন্ডাইজাররা নিশ্চিত করেন যে পণ্যগুলো দক্ষতার সঙ্গে খুচরা আউটলেট অথবা ই-কমার্স প্লাটফর্মে বিতরণ হচ্ছে। এ পেশায় সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, বিশ্লেষণী দক্ষতা ও সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি মনোযোগের প্রয়োজন হয়, যা ফ্যাশন শিল্পে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ।

বাংলাদেশে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ফাস্ট ফ্যাশনের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বৈশ্বিক সোর্সিং, উৎপাদন এবং সরবরাহের শৃঙ্খলা পরিচালনার জন্য দিন দিন দক্ষ পেশাজীবীদের চাহিদা বাড়ছে। যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশ, তাই এক্ষেত্রে কাজের সুযোগও অপরিসীম। অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং বিষয়ে স্নাতকরা পণ্য উন্নয়ন, ক্রয় ও সোর্সিং, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং রিটেইলিং ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বায়িং হাউজ, রিটেইল কোম্পানিতে কাজ করার জন্য উপযুক্ত। যেসব জায়গায় চাকরির শুরুতে প্রথম পর্যায়ে ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা থেকে বেতন শুরু হয়, যা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একসময় দেড় লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা অথবা এর বেশিও হয়ে থাকে। একই সঙ্গে টেকসই ও গ্রহণযোগ্য ফ্যাশনের ওপর ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব পেশাজীবীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে, যা পরিবেশবান্ধব সমাধান উদ্ভাবনের মাধ্যমে পোশাক শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ) অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এএমএম) এমন একটি বিভাগ, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে আসে। আইএসইউর ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল কাশেমের তত্ত্বাবধানে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্পে দক্ষ পেশাজীবীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক রফতানির বিশ্বজুড়ে সুনাম, এ বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণকে প্রতিদিন বাড়িয়ে তুলছে। এ বিভাগ শিক্ষার্থীদের শুধু পোশাক পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনার পাঠই দেয় না, বরং তাদের একটি সফল পেশাজীবনের শক্ত ভিত্তি নির্মাণ করে।

এ বিভাগের পাঠক্রম শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, বরং এতে বাস্তব অভিজ্ঞতার সুনিপুণ মিশ্রণ রয়েছে। ফ্যাশন ট্রেন্ড, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো পড়াশোনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু বইয়ের জ্ঞান অর্জন করে না বরং পোশাক শিল্পের বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তোলে, যা তাদের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়।

ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর পরই রয়েছে দেশসেরা অ্যাপারেল ব্র্যান্ডে ইন্টার্নশিপের সুযোগ এবং বিভিন্ন বহুজাতিক গার্মেন্টস বায়িং হাউজে আকর্ষণীয় চাকরির সুযোগ, ক্যারিয়ার বৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রি নেটওয়ার্ক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ১৯টি সিস্টার কনসার্ন গ্রুপে চাকরির সুযোগ। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ এবং দেশের অন্যান্য গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য মার্চেন্ডাইজার কর্মরত আছেন, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। তাই দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আ্যপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে মানসম্মত ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে বিদেশী মার্চেন্ডাইজারদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আইএসইউতে শিক্ষার্থীদের জন্য আছে পর্যাপ্ত স্মার্ট ক্লাসরুম, উন্নত বই ও জার্নাল সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, অত্যাধুনিক ল্যাব এবং ফ্যাশন শোরুম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন, উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ফ্যাকাল্টি সদস্য রয়েছেন, যারা সবসময় শিক্ষার্থীদের ক্লাস, ব্যবহারিক বিষয়সহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় অতি গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করেন, যাতে সর্বোচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতায় নতুন অধ্যায় যোগ করে আইএসইউ কর্তৃক আকর্ষণীয় ইন্টার্নশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন সেক্টরে নিয়মিত ভিজিট। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পোশাক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা তাদের মার্চেন্ডাইজিংয়ের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো এবং কাস্টমারের চাহিদার ধরন শিখিয়ে দেয়। এ বাস্তবজ্ঞান তাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে এবং বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বায়িং হাউজ, রিটেইল কোম্পানিতে কাজ করার পথকে মসৃণ করে। এভাবে তারা নিজেদের মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্পে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। একদিকে যেমন তারা পেশাগত জীবনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সুনামও প্রসারিত করে।

জগলুল হক মৃধা: বিভাগীয় প্রধান, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি

আরও