ডাটা সায়েন্সে ক্যারিয়ার

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বদরবারে

ডাটা সায়েন্স বা উপাত্ত বিজ্ঞান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চাহিদাসম্পন্ন একটি ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

ডাটা সায়েন্স বা উপাত্ত বিজ্ঞান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চাহিদাসম্পন্ন একটি ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী তথ্যের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ বিপুল উপাত্ত থেকে কার্যকর জ্ঞান আহরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ডাটা সায়েন্স অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, মডেলিং এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা এ শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য। ডাটা সায়েন্টিস্টরা বিভিন্ন উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করেন এবং মেশিন লার্নিং ও পরিসংখ্যানের সাহায্যে পূর্বাভাসমূলক মডেল তৈরি করেন। তাদের কাজের মধ্যে উপাত্ত পরিষ্কার করা, প্যাটার্ন চিহ্নিত করা ও তা থেকে কার্যকর সমাধান প্রদান করা অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রযুক্তিগত জগতের নানা প্রয়োগ ক্ষেত্র রয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেবা উন্নয়নে সাহায্য নেয়, স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়নে উপাত্ত বিজ্ঞান অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিখন পদ্ধতি উন্নত করা সম্ভব হয়। এছাড়া বিনোদন, পরিবহন ও সরকারি নীতিনির্ধারণে ডাটা সায়েন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে একটি মজবুত ভিত্তি থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন পাইথন এবং আর, পাশাপাশি মেশিন লার্নিং ও পরিসংখ্যানের মৌলিক ধারণা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রের শিক্ষা গ্রহণের জন্য আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ডাটা সায়েন্স প্রোগ্রাম অন্যতম স্বীকৃত ও প্রগতিশীল প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামে ভর্তি হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ের পাশাপাশি গণিতের ভালো প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক; বিশেষ করে মোট জিপিএ ৬.০০ ও গণিতে পারদর্শিতা প্রয়োজন।

এআইইউবির ডাটা সায়েন্স প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে পরিসংখ্যান ও সম্ভাব্যতা, ডাটা মাইনিং, মেশিন লার্নিং, বিগ ডাটা প্রযুক্তি, ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন ও প্রোগ্রামিংয়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায়ে মৌলিক ধারণা থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে উন্নত মডেল তৈরি এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা অর্জন করেন। এছাড়া প্রোগ্রামটি গবেষণা ও বাস্তব জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ প্রদান করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা বিকাশ করতে সক্ষম হন।

ডাটা সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন শেষে চাকরির বাজার বিশ্বজুড়ে ও দেশের অভ্যন্তরে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ডাটা সায়েন্টিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, ডাটা অ্যানালিস্ট এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকিং, টেলিকম, ই-কমার্স ও স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা খাতে এ দক্ষ পেশাজীবীদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। লিংকডইনে প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ডাটা সায়েন্স সম্পর্কিত ১৬৪টি চাকরির বিজ্ঞাপন রয়েছে, যা এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক এবং উজ্জ্বল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এআইইউবি তাদের ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ডাটা সায়েন্স প্রোগ্রাম চালু করে শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছে। এ প্রোগ্রামটি অত্যাধুনিক গবেষণাগার সুবিধা এবং অভিজ্ঞ পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

ডাটা সায়েন্সে গবেষণা ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগও অত্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যেখানে পূর্ণ ফান্ডেড স্কলারশিপ যেমন ফুলব্রাইট, ইরাসমাস মুন্ডাস এবং ডাডের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের এ প্রোগ্রামগুলোয় ভর্তি হয়ে গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে তাদের কর্মজীবনে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে।

সর্বোপরি ডাটা সায়েন্স আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সফল হতে হলে শিক্ষার্থীদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং ব্যবহারিক দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও ক্রমাগত শেখার মানসিকতা থাকা আবশ্যক। এআইইউবির ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ডাটা সায়েন্স প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাগত পরিবেশ প্রদান করে, যা তাদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল একাডেমিক শিক্ষা লাভ করেন না, বরং গবেষণা, ইন্টার্নশিপ ও শিল্প ক্ষেত্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও পান। এটি তাদের ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করে তোলে।

মশিউর রহমান: ডিন (ভারপ্রাপ্ত), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ

আরও