ক্যাম্পাসে শীত

কুয়াশা, পিঠা আর বন্ধুত্বের গল্প

শীতের সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাস যেন কুয়াশার চাদরে মোড়া এক স্বর্গরাজ্য।

শীতের সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাস যেন কুয়াশার চাদরে মোড়া এক স্বর্গরাজ্য। কুয়াশার চাদরে ঢাকা ক্যাম্পাস, ভোরের সোনালি রোদে চিকচিকে শিশির, আর শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল পদচারণে সাজে প্রকৃতি ও ক্যাম্পাসজীবনের অদ্ভুত সুন্দর এক গল্প। সকালে ক্যাম্পাসে দেখা মেলে এক অন্যরকম দৃশ্য। খোলা মাঠের শিশিরভেজা ঘাসগুলো নুয়ে পড়ার দৃশ্য যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবিকেও হার মানায়। তীব্র কুয়াশায় ঢেকে আছে টুকিটাকি চত্বর, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর। এক ভবন থেকে আরেক ভবন দেখাই যেন দায়। এর মাঝেই শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস আর প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে ছুটে চলেছেন তাদের গন্তব্যে।

রাজশাহীতে হাড় কাঁপানো শীতে শিক্ষার্থীদের জীবনও ভিন্ন এক রঙে রাঙায়। গায়ে মোটা পোশাক, বন্ধুর সঙ্গে ক্লাসের ফাঁকে গরম চা, আর মাঝরাতে প্যারিস রোডে আড্ডা—শিক্ষার্থীদের জীবনে নিয়ে আসে উচ্ছ্বাসের ভিন্ন ছোঁয়া। কেউ কাঠ পুড়িয়ে আগুন ঘিরে জমান গানের আসর, কেউবা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যায় শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) সামনে বাহারি পিঠার গন্ধে চলে অন্যরকম পিঠা উৎসব। পিঠা খাওয়া নিয়ে খুনসুটি আর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এমন দৃশ্যের সঙ্গে যেন মিশে থাকে রাবি শিক্ষার্থীদের শীতের গল্প।

সকালে তীব্র কুয়াশার মাঝেও হাঁটতে বের হয়েছেন মীর তুহিন নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘শীত সবার জন্য একটু কষ্টকর হলেও ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ ভালোই লাগে। রাজশাহীতে শীতের মাত্রা বেড়েছে। কাল রাত থেকে বেশি শীত পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিছু দূরত্বেই কাউকে দেখা যাচ্ছে না।’ ক্যাম্পাসের রিকশাচালক রমিজ মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে বিগত দিনের তুলনায় বেশি শীত এবং কুয়াশা হওয়ায় বাইরে মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। বাইরে অনেক শীত পড়েছে তাই গরম কাপড় পরে বের হয়েছি।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অভি ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় কুয়াশায় মোড়ানো শীতের পরিবেশ আমার কাছে অসাধারণ লাগে। রাস্তার পাশের ফুল আর লাল শাপলা দেখে প্রকৃতির মুগ্ধতা অনুভব করি। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা।’

শীতের অন্যতম আকর্ষণ পিঠা, যা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণ হয়ে উঠেছে। শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসির সামনে চিতই ও ভাপা পিঠা তৈরি হচ্ছে আতপ চালের আটা ও সেদ্ধ চাল দিয়ে। গরম গরম পিঠা দোকানের কর্মীরা আড্ডাস্থলে পৌঁছে দিচ্ছেন। সঙ্গে থাকছে চিংড়ি, শুঁটকি, বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনিয়া পাতা ও কালিজিরাসহ সাত রকমের ভর্তা। গরম পিঠা আর মজাদার ভর্তার স্বাদ শিক্ষার্থীদের আড্ডাকে আরো জমিয়ে তুলছে, যা শীতের এ আমেজে এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করছে। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনীন আক্তার বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খাওয়া ও আড্ডার মজা অসাধারণ। পরিবারের সঙ্গে পিঠা খাওয়ার আনন্দ এক রকম, আর বন্ধুদের সঙ্গে এভাবে বসে খাওয়ার মজাটা ভিন্ন।

আরও