রিসার্চ সোসাইটি

কীভাবে লিখবেন গবেষণা প্রবন্ধ

গবেষণা মানবসমাজের অগ্রগতির মূল ভিত্তি। এটি আমাদের জীবনকে উন্নত করতে ও চারপাশের বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষ হিসেবে আমাদের সহজাত আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়।

গবেষণা মানবসমাজের অগ্রগতির মূল ভিত্তি। এটি আমাদের জীবনকে উন্নত করতে ও চারপাশের বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষ হিসেবে আমাদের সহজাত আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়। এটি করার জন্য আমাদের বোঝাপড়া ও অন্তর্দৃষ্টি উন্নত হতে হয়। আমাদের জানতে হবে কোনো একটি জিনিস কীভাবে কাজ করে বা কাজ করে না, যাতে আমরা সেগুলো ব্যবহার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে পেতে পারি বা তাদের আরো দক্ষ করে তুলতে পারি। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, যিনি মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ কাজগুলো বোঝার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি যদি দেখতে পারতেন যে শরীর কীভাবে কাজ করে, তবে তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক বা আবেগপ্রবণ প্রকৃতি কেমন সেটিও ব্যখ্যা করতে পারতেন। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে গবেষণা শুধু তথ্য সংগ্রহের জন্য নয়। গবেষকরা কী অনুসন্ধান করবেন সে সম্পর্কে যে পছন্দগুলো করেন তা প্রতিনিধিত্ব করে তারা কীভাবে বিশ্বকে দেখেন।

একজন লেখক মূলত তিন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। কী লিখবেন? কেন লিখবেন? এবং কীভাবে লিখবেন? তা বুঝে উঠতে পারেন না। এছাড়া পর্যায়ক্রমে আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় একজন লেখককে। যেকোনো মৌলিক লেখা কষ্টসাধ্য কাজ। গবেষণা প্রবন্ধ লেখা আরো কঠিন। তদুপরি কিছু বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও দক্ষতা থাকলে তা সহজ হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট কিছু উদ্ধৃতিগুলোর সংকলন কিংবা কোনো বিষয়ের সাধারণভাবে সুসংঘবদ্ধ উল্লেখের নাম গবেষণা প্রবন্ধ নয়। গবেষণা প্রবন্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে সেসব লেখা, যা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর গবেষণা পদ্ধতি অনুসারে প্রণীত হয়।

প্রকৃতিগতভাবে গবেষণা প্রবন্ধের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্যতম কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রবন্ধটি অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। প্রবন্ধটির এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। সমসাময়িক বিষয় সংশ্লিষ্ট হতে হবে অথবা বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত কোনো বিষয় হতে হবে। নতুন কোনো আবিষ্কার কিংবা নতুনত্বের ছোয়া থাকতে হবে। জাতি, গোষ্ঠী, সমাজ কিংবা বৃহত্তর অর্থে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপকারে আসে এমন কোনো বিষয় হতে হবে। প্রবন্ধটি যথাসম্ভব সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হতে হবে। গবেষণা পদ্ধতি অনুসারে সুশৃঙ্খল ও সুসংঘবদ্ধভাবে প্রণীত হতে হবে। গবেষণা পদ্ধতি অনুসারে চাহিদামতো পরিপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রবন্ধটি হতে হবে পরিচ্ছন্ন।

কেন ও কীভাবে গবেষণা প্রবন্ধ লিখবেন? একটি আর্টিকেলে এর বিশদ আলোচনা করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেছেন, যে বিষয়টা লিখবেন তার একটা গুরুত্ব আপনার বিবেচনায় আছে বলেই আপনি তা লিখবেন। এ গুরুত্ব বহন করে বেশকিছু বিষয়ের ওপর। যেমন নতুনত্ব। প্রথম যে বিষয়টা আপনাকে গবেষণা প্রবন্ধ লিখতে উদ্বুদ্ধ করবে তা হলো বিষয়ের নতুনত্ব। নতুন যেকোনো বিষয়কে সবার সামনে তুলে ধরা গবষণা প্রবন্ধের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। সুতরাং আপনার চিন্তায়, চেতনায় কিংবা কর্মে যেকোনো যৌক্তিক নতুনত্ব অন্যদের জানানো আপনার দায়িত্ব। যেমন কোনো দর্শন কিংবা সূত্র সম্পর্কে আপনার চিন্তার যৌক্তিক নতুন কোনো দিক। অথবা অন্য কথায় কোনো দর্শন বা যুক্তিকে যদি অসংযত মনে হয় তা হলে তা কী, কেন ও কীভাবে অসংযত মনে হচ্ছে তা তুলে ধরাও নতুন চিন্তাচেতনার অন্তর্গত হতে পারে।

নতুন যেকোনো আবিষ্কার তার পদ্ধতিগত, ব্যবহারিক কিংবা প্রয়োজনগত দিক তুলে ধরে লেখা যায় গবেষণা প্রবন্ধ। এটার গুরুত্বও অপরিসীম। আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সমাজ-সংস্কৃতিতে সমস্যার কোনো অন্ত নেই। বরং সমস্যা নেই এমন বিষয় খুঁজে বের করাই কষ্ট। এসব সমস্যা খুঁজে বের করার পাশাপাশি সমাধানের উপায় কী তা হতে পারে গবেষণা প্রবন্ধের মৌলিক একটি কারণ। আগের কোনো প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের সহজ-সরল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন ছাড়াও ভালো-মন্দ দিক তুলে ধরাও হতে পারে সুন্দর একটি গবেষণা প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। তবে সমালোচনা হতে হবে যুক্তিনির্ভর ও মতামত উপস্থাপনের সময় লক্ষ রাখতে হবে তা যেন তথ্যনির্ভর হয়। প্রয়াজনীয় ক্ষেত্রে অবশ্যই উদ্ধৃতি দিতে হবে, যাতে একদিকে লেখকের মতামতের দূঢতা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে লেখাটি নকলমুক্ত হয়। গবেষণা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণা প্রবন্ধ কীভাবে লিখবেন তার বর্ণনায় মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ উল্লেখ করেন যে সাধারণ লেখার সঙ্গে একটি গবেষণা প্রবন্ধের প্রকৃতি ও কৌশলগত বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই গবেষণা প্রবন্ধের লেখার ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত কিছু কৌশল রয়েছে তা জানা দরকার। সেক্ষেত্রে সাধারণ কিছু করণীয় রয়েছে। সাধারণ নিয়ম বলতে যে নিয়মগুলো গবেষণা প্রবন্ধ কিংবা গবেষণালব্ধ যেকোনো মৌলিক লেখা যেমন এমফিল ও পিএইচডি থিসিস লেখার জন্য অনুসরণ করা হয় তাকে বোঝানো হবে। এ নিয়মগুলো জানা প্রবন্ধকারের জন্য খুবই জরুরি। কারণ এ নিয়মগুলো অনুসরণ করা ছাড়া কোনো প্রবন্ধই স্বীকৃত কোনো জার্নালে (গবেষণা পত্রিকা) প্রকাশ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে অন্যতম নিয়মগুলো হলো প্রবন্ধটি মৌলিক রচনা হতে হবে। অন্য কোথাও প্রকাশ হতে পারবে না। প্রবন্ধটিতে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে তার মধ্যে প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ লিখতে হবে (সাধারণত ১০০-২০০ শব্দের মধ্যে)। মৌলিক শব্দ/শব্দসংকেত। (সাধারণত সর্বোচ্চ পাঁচটি মৌলিক শব্দ, যা প্রবন্ধটিতে ব্যবহার হয়েছে এবং বিষয়গত দিক থেকে তা গুরুত্ব বহন করে), ভূমিকা ও মূল আলোচনা। আবিষ্কৃত বা আলোচনায় সিদ্ধান্তে উপনীত বিষয়গুলো ফাইন্ডিংস; উপসংহার বা প্রস্তাবনা; রেফারেন্সেস; উদ্ধৃতি ও প্রমাণসমূহ। আপনার মন্তব্যের সপক্ষে কিংবা আলোচনান্তে উদ্ধৃতিগুলো উপস্থাপনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম। গবেষণা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরসীম। এক্ষেত্রে দুই ধরনের নিয়ম প্রচলিত। একটি ডকুমেন্টরি-নোট স্টাইল: ফুটনোট কিংবা ইন্ড নোট আরেকটি হলো মূল আলোচনার মধ্যে উদ্ধৃতি); অথার-ডেট স্টাইল। এ দুই ধরনের উদ্ধৃতির ক্ষেত্রেই বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।

আরও