বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছর

যেমন হওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছর

নতুন শিক্ষা বছর হাজার স্বপ্নের পসরা সাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখবে হাজারো তরুণ প্রাণ।

নতুন শিক্ষা বছর হাজার স্বপ্নের পসরা সাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখবে হাজারো তরুণ প্রাণ। ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন’ এই শব্দ দুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত না বলা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় যদি বলতে হয় তবে প্রথম বর্ষকে বলতে হবে, সময়টা জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর বানানোর সময়। ঠিক বহুতল ভবনের নির্মাণকাজের মতো। ভিত্তি যদি শক্তপোক্ত না হয় দমকা হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যেতে পারে।

সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে যদি তোমার মনে হয় তুমি জীবন থেকে কী চাও, তা তুমি জানো না। তোমার ক্যারিয়ার গোল নেই, চাকরিতে প্রবেশের জন্য প্রাথমিক ধারণা নেই। উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মানসিক স্বাধীনতা ও সাহস নেই। তবে বুঝে নিতে হবে প্রথম বর্ষ থেকেই তোমার পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ ভুল ছিল। যার কারণে তোমাকে জীবনযুদ্ধে কমপক্ষে দুই-তিন বছর পিছিয়ে যেতে হবে।

এ পি জে আব্দুল কালাম তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, সমস্যাই ভেতর থেকে টেনে বের করে আনে অন্তর্নিহিত সাহস ও প্রজ্ঞা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে থাকা একজন শিক্ষার্থীকে পরিবর্তিত পরিবেশ, আবাসন সংকট, আর্থিক সংকট, নতুন কারিকুলাম, বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতিসহ হাজারটা নিত্যনতুন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই সবকিছুর মাঝেও একটি পরিকল্পিত রোডম্যাপ থাকতে হয়। ঠিক তেমন চারটি বিষয় বেশ জরুরি।

ব্যক্তিগত উন্নয়ন/সেলফ ডেভেলপমেন্ট

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার অন্তর্নিহিত কারণ হলো নিজেকে দক্ষ মানব শক্তিতে পরিণত করা, সেটা সবাই জানে। তবুও আমরা কীভাবে শুরু করতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনার বিষয় রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে কয়েকটি কাজ বেশ দরকারি:

১. স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়া, এতে দায়িত্বশীল চরিত্রের বিকাশ ঘটে।

২. ক্লাব বা অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে, যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

৩. অবশ্যই সিনিয়রদের থেকে ভেবেচিন্তে মেন্টর বেছে নিতে হবে। ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গঠনের গাইডলাইন পাওয়া যাবে।

রেজাল্ট ভালো রাখতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট ভালো রাখার দরকার হয় না। এটি মোটেও সঠিক নয়। রেজাল্ট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, এর শুরুটা হওয়া উচিত প্রথম বর্ষ থেকেই। রেজাল্টের মাপকাঠি বিষয়ভেদে আলাদা হলেও সিজিপিএ কমপক্ষে ৩.৫০ রাখার চেষ্টা করা উচিত। ফলে বেশকিছু সুবিধা হয়:

১. বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

২. চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়।

৩. বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়ে, যা কিনা কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়।

প্যাসিভ ইনকামের ধারণা রাখা

শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করাটা বেশ যুগোপযোগী ধারণা। এখন উন্ন দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও প্যাসিব ইনকাম টার্মটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। স্বাবলম্বী হতে বর্তমান যুগে টিউশন পড়ানো ছাড়াও অনেক উপায় রয়েছে। যেমন:

১. ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিংসহ অসংখ্য ফ্রিল্যান্সিং জব

২. ব্লগ রাইটিং

৩. প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি

৪. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি

বন্ধুত্ব উদযাপন

নিজের পরিবার-পরিবেশ ছেড়ে এক নতুন ভুবনে পা দেয়ার পর একটি সম্পর্ক সবচেয়ে কাছের হয়ে ওঠে, তা হলো বন্ধুত্ব, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সমানে ভাগ করে নেয় বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন উপভোগ করতে বন্ধুর বিকল্প নেই। স্মৃতির ভাণ্ডারে চিরসবুজ এ সময়ের কাটানো মুহূর্তগুলোই।

কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি তবুও শরতের আকাশের মতো ক্ষণস্থায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, এখানে যাপিত জীবন আসন্ন জীবনের জন্য প্রশিক্ষণ পর্ব। একজন নবাগত শিক্ষার্থী ছোট ছোট সমস্যা আর সমাধানের মাধ্যমেই বাধা অতিক্রম করতে শিখবে।

আরও