উরি র‌্যাংকিং-২০২৪

বিশ্বের ৩০০ ইনোভেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি

রাজধানী ঢাকার মূল শহর থেকে উত্তরে মেট্রো রেল স্টেশন থেকে ৩ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজধানী ঢাকার মূল শহর থেকে উত্তরে মেট্রো রেল স্টেশন থেকে ৩ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রদানের পীঠস্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগীদের কাছে। ২০০৩ সালে DAR ট্রাস্টের অধীনে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। শুরুতে উত্তরা মডেল টাউনের সেক্টর ৬-এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে আধুনিক স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিংস ফর ইনোভেশন (WURI) র‍্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছে। র‍্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২৭৬তম। রিপোর্ট অনুযায়ী তিনটি ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি। এ র‍্যাংকিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে উরি র‍্যাংকিংয়ে স্টুডেন্ট সাপোর্ট অ্যান্ড এনগেজমেন্টে ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরা ইউনিভার্সিটি। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের মধ্যে উত্তরা ইউনিভার্সিটির অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই ক্যাটাগরিতে নেই। উরি র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে উত্তরা ইউনিভার্সিটি আছে ২২তম অবস্থানে।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৩ সালে ড. এম আজিজুর রহমান (DAR) ট্রাস্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রাস্টটি একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা। দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, খ্যাতিমান উদ্যোক্তা এবং মুক্তিযোদ্ধা ড. এম আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ ট্রাস্ট পরিচালিত হয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ট্রাস্ট বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে অগ্রগতি ও নতুনত্ব আনার লক্ষ্যে উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে।

ড. এম আজিজুর রহমান ছিলেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য এবং বর্তমানে উত্তরা ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা লেখা ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি ও রাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্টডক্টরেট অর্জন করেছেন। তার নেতৃত্বে নতুন ক্যাম্পাসে দেশের চাহিদাপূর্ণ প্রোগ্রামগুলোয় ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ক্লাবভিত্তিক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে পাঁচটি স্কুল ও চৌদ্দটি বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন স্নাতকোত্তর ও স্নাতক ৪০টি প্রোগ্রাম চালু রেখেছে। প্রায় দুই দশক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে প্রচুর গবেষণার সুযোগও দিচ্ছে। এরই মধ্যে আটটি সমাবর্তন সফলভাবে সম্পন্ন করছে এ বিদ্যাপীঠ। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এরই মধ্যে সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন ও দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। “উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষের মূলমন্ত্র সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে র‍্যাংকিংয়ে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে। স্মার্ট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ নিজেদের তৈরি করার পাশাপাশি শ্রমবাজারে সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতীতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা অনেকেই হয়েছেন উদ্যোক্তা। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করা। প্রতিযোগিতামূলক করপোরেট পরিবেশের জন্য প্রস্তুত হতে এবং পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের সবসময় সহায়তা দেয়া হয়। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি বোর্ডের পাশাপাশি”বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দ্বারা পরিচালিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটিতে সপ্তাহের সাতদিনই বিভিন্ন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্লাস থাকে, যাদের মাঝে অনেক চাকরিজীবীও রয়েছেন। চাকরিজীবীদের জন্য শুক্রবার ও ছুটির দিন ক্লাস নেয়া হয়। প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের জন্য রয়েছে নিজস্ব ফ্রি পরিবহন ব্যবস্থা, ভার্সিটির বাসেই সব শিক্ষার্থী সমগ্র ঢাকা নগরী ও ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও আসা-যাওয়া করেন। নতুন ক্যাম্পাসে আসার পর বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট আবাসন ব্যবস্থা দিচ্ছে। অর্ধশতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারীসহ চার শতাধিক শিক্ষক নিরলসভাবে শিক্ষার উৎকর্ষের কাজে নিয়োজিত। এছাড়া সৃজনশীল ও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে এক আনন্দঘন পরিবেশে পৌঁছে দিয়েছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান রক্ষার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত ইকুইপমেন্টসহ ক্লাসরুম, প্রয়োজনীয় গবেষণার ব্যবস্থাসম্পন্ন ৫৬টির বেশি ল্যাবরেটরি, সিএসই অ্যাপল ল্যাব, প্রফেশনাল ট্রেনিং, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, ইন্টার্নশিপ, জব প্লেসমেন্ট, উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন শিক্ষক, বিভিন্ন এক্সট্রা অ্যান্ড কো-কারিকুলার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রায় ২০টি ক্লাব, সুপরিসর ক্যান্টিন এবং বিভিন্ন বিষয়ের প্রচুর বই, জার্নাল ও পত্রিকাসম্পন্ন বিশাল লাইব্রেরি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল সার্ভার তৈরি করে তা সমৃদ্ধ ও উন্নত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত দিকের কথা মাথায় রেখে স্থায়ী ক্যাম্পাসে খেলাধুলা করার মতো মাঠ, খোলা জায়গা ও গাছগাছালির পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে। ক্যান্টিনের খাবারের স্বাস্থ্যগত মান রক্ষার জন্য প্যাকেটজাত খাবার ছাড়া বাকি আইটেম যেমন ব্রেড, রাইস, কারি ইত্যাদি ক্যান্টিনের নিজস্ব রসুইঘরে তৈরি হয়।

এমনকি শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতায় সহযোগিতার জন্য দেশের প্রথম হেলথ হিউম্যানিটিজ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ল্যাব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবসরে বা সারা দিনের কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার জন্য মনোরমভাবে তৈরি। রয়েছে সুন্দর প্রাকৃতিক সুর শোনার ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের চর্চা করার জন্য বাদ্যযন্ত্র। সুন্দরভাবে সাজানো এ ল্যাব কক্ষ বিশেষভাবে তৈরি হওয়ায় বাইরের শব্দ ও কোলাহলরোধী নিরিবিলি পরিবেশে যে কাউকে রিল্যাক্স সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিক অবসাদ কাটিয়ে সতেজ হয়ে ওঠার জন্য চমৎকার সুযোগ করে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাউন্ডার স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে যেন বঞ্চিত না হন, সেদিকটা মাথায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দরিদ্র মেধাবী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৬ শতাংশ স্কলারশিপ। এছাড়া নারী, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন কোটায় বৃত্তি দেয়া হয়। শিক্ষার জন্য ব্যাংক লোনের সহায়তা করা হয়। প্রতি সেমিস্টারে ইনস্টলম্যান্টের মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারেন।

শিক্ষার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, উন্নত অবকাঠামো, অভিজ্ঞ শিক্ষক, গবেষণার সুযোগ এবং ব্যতিক্রমধর্মী কর্মমুখী শিক্ষার কারণে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ বলে জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য, বিতর্ক, ক্যারিয়ার মেলা ও সামিটসহ অসংখ্য সহায়ক পরিবেশ পাচ্ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি দেশের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীও এখানে পড়াশোনা করছেন। দেশের শিক্ষার্থীদের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে বিদেশী উচ্চতর র‍্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি, স্কলারশিপ, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক মানের পাঠক্রম নিশ্চিতও করে থাকে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়। আরো বেশি মানসম্পন্ন শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে কিউএস র‍্যাংকিং, টাইমস হায়ার র‍্যাংকিংসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় র‍্যাংকিংয়ে জায়গা করে নেয়ার লক্ষ্যে এখন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

আরও