মানিকগঞ্জের হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-এর বেশি ঠান্ডাজনিত রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি থাকছে ১০০-এর বেশি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সূত্রমতে, ২৫০ শয্যার জেলার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। এদের মধ্যে বড় একটি অংশই ঠান্ডাজনিত রোগী। এছাড়া নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে ঠাণ্ডা, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরোগী বেশি। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক শিশুরোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেককেই অন্য প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এবিএম তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘শীতজনিত রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্করা।’
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। কুয়াশার কারণে ব্যাকটেরিয়া ওপরে উঠতে পারে না, নিচে ঘুরে বেড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসগুলো খুব সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। সাধারণত লোটাভাইরাসের কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ব্রঙ্কাইটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস শিশু ও বয়স্কদের সহজেই আক্রান্ত করে। নিউমোনিয়ার কারণে যে ভাইরাসগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো সহজেই শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসকে আক্রান্ত করছে।’
গত ডিসেম্বরে বহির্বিভাগে প্রায় নয় হাজার ঠান্ডাজনিত রোগীর মধ্যে শিশু ২ হাজার ১১২ জন ও বয়স্ক ৯৭২ জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। একই সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ২২৫ শিশু ও ৮৮ বয়স্ককে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। চলতি মাসের প্রথম ১২ দিন জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় তিন হাজার রোগী আসে, যার মধ্যে ১ হাজার ৬২ জন শিশু ও ৩১৬ জন বয়স্ক। একই সময়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড, শিশু ও নবজাতক বিভাগে ভর্তি হওয়া ৭১৫ শিশু ও ৩৮২ জন বয়োবৃদ্ধকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. বদরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিমে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। নির্ধারিত ২০ বেডের অতিরিক্ত আরো ১০-১৫ জন রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হয়।’
বর্হিবিভাগের শিশু চিকিৎসক ডা. মো. ফরিদ খান জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ শিশু রোগী দেখেন তিনি। এর মধ্যে বেশির ভাগই ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগী। শিশুদের ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়ানো, উষ্ণ স্থানে রাখাসহ বিশুদ্ধ পানি পান করানো ও নাক দিয়ে পানি এলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহা উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শীতের সময় বাচ্চা ও বয়স্ক— দুই বয়সীদের শীতে সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে। ঠান্ডাজনিত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালে অক্সিজেন, নেবুলাইজার ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বা সরঞ্জামাদি রয়েছে। কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার ও নার্সসহ নির্দিষ্টসংখ্যক জনবলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ডা. মোকছেদুল মোমিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শীতজনিত রোগীর চিকিৎসায় জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোয় বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব গাইডলাইনের মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের কম্বল ব্যবহার, হাসপাতালের ভাঙা জানালা-দরজা মেরামত, নেবুলাইজার মেশিন ঠিক করা, অক্সিজেন সিলিন্ডারে অক্সিজেন রাখার নির্দেশনা রয়েছে।’