সমীক্ষা ছাড়াই ওয়াকওয়ে নির্মাণ

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় কুতুবখালী খাল

রাজধানীর খালগুলোর দখল-দূষণ কমাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

রাজধানীর খালগুলোর দখল-দূষণ কমাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারই অংশ হিসেবে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী খালের পাশে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, দামি চেয়ার, স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণ করে খাল সংরক্ষণের পথে হেঁটেছিল সংস্থাটি। কিন্তু খালটি দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ডিএসসিসি। 

সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, কুতুবখালী খালে পানির স্রোত নেই। বর্জ্যে ঠাসা খালে শুধু পলিথিন আর পলিথিন। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে খাল পরিষ্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রতিনিয়তই ময়লা বাড়ছে খালে। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কুতুবখালী খাল ৫০ ফুট প্রস্থ ও আট ফুট গভীর ছিল। স্থানীয় লোকজন বলেন, দখল হতে হতে খালের পূর্ব দোলাইরপাড় অংশের প্রশস্ততা নেমে আসে প্রায় ৩০ ফুটে। বিভিন্ন সময়ের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালেও কুতুবখালী খালের প্রশস্ততা ছিল ৮০-১০০ ফুট। তবে খরস্রোতা খালটি ২০০১ সাল থেকে দখল হতে থাকে। ২০১০ সালে পুনরায় সেটিকে খনন করা হয়। তখন খালটির প্রশস্ততা ছিল ১০-৩০ ফুটের মধ্যে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণের ফলে সেটি আরো সংকুচিত হয়েছে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে ঢাকার সব খালের পাশেই ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা ভাবছে সিটি করপোরেশন। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে সংস্থাটি বলছে, সুন্দর পরিবেশ দেখে লোকজন আর খালে ময়লা ফেলবে না। সে লক্ষ্যেই কুতুবখালী খালপাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে সংস্থাটি। সেখানে ৮ দশমিক ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে খালের পাশে দেয়া হয়েছে এক মিটার উঁচু গ্রিলের বেষ্টনী। রয়েছে পাঁচটি স্টিলের বেঞ্চ ও ১৪৫টি বাতি। সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

তবে খালপাড়ে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। মেয়র মহোদয়ের (ফজলে নূর তাপস) মনে হয়েছে, এ ধরনের অবকাঠমো নির্মাণ করা হলে খাল দূষণ কমবে, তাই তিনি এ কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা এর বাস্তবায়ন করেছি।’ 

পূর্ব সমীক্ষা ছাড়া সিটি করপোরেশনের এ কাজে সবচেয়ে বড় ভুল খালের সীমানা নির্ধারণ না করা। ফলে বর্তমানে বানানো অবকাঠামো পরবর্তী সময়ে ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হবে। সীমানা নির্ধারণ না করে ও কোনো সমীক্ষা ছাড়া ওয়াকওয়ে নির্মাণের ফলে কুতুবখালী খালের দখল আরো বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মী সৈয়দ সাইফুল আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার খাল নিয়ে আমরা বেশকিছু কাজ করেছি। সেখানে দেখেছি, সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণের ফলে অনেক খাল অস্তিত্ব হারিয়েছে। কিছু খাল কেবল বড় ড্রেনের আকারে টিকে আছে। কুতুবখালী খাল তারই একটি। তাই সিটি করপোরেশনের প্রথম কাজ হলো খালের সীমানা নির্ধারণ করা। উচ্চ আদালতও এ নিয়ে রায় দিয়েছেন। সীমানা নির্ধারণ করতে হবে সঠিকভাবে। এসব না করে খালের জায়গাতেই ওয়াকওয়ে বা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ আসলে খালটিকেই মেরে ফেলার পদক্ষেপ বলে মনে করি।’

খালের দখল উচ্ছেদ করে সীমানা নির্ধারণের কথা বলেছেন নগরবিদ ইকবাল হাবিবও। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ধানমন্ডি লেক করেছি। তার পাশেও তো ওয়াকওয়ে আছে। সেখানে বেষ্টনী দিতে হয়নি। আবার হাতিরঝিলে ওয়াকওয়ের পাশে বেষ্টনী দিয়েছি। তাই কোথায় বেষ্টনী দিতে হবে আর কোথায় হবে না, সেটা সমীক্ষা না করে হুট করে কোনো পদক্ষেপ নেয়া তো বোকামি।’ 

আরও