ঢাকা ইপিজেড চলছে পল্লী বিদ্যুতে, উৎপাদনে ফিরতে পারেনি সব কারখানা

ঢাকা ইপিজেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সোমবার দুপুরে বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) বিদ্যুৎ দিয়ে বিকল্প উপায়ে অনেক কারখানার উৎপাদন শুরু হয়েছে।

ঢাকা ইপিজেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সোমবার দুপুরে বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) বিদ্যুৎ দিয়ে বিকল্প উপায়ে অনেক কারখানার উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে ঢাকা ইপিজেডে (ডিইপিজেড) দৈনিক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, তাতে সব কারখানা চালু হয়নি। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গতকালও বিদ্যুতের অভাবে পাঁচটি কারখানা বন্ধ ছিল। এসব কারখানায় অন্তত ছয় হাজার কর্মী রয়েছেন। কাজের উদ্দেশ্যে অনেক কর্মী এসব কারখানায় এসেও পরে ফিরে গেছেন।

ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাগুলো চালু রাখতে হলে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে বিআরইবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সর্বোচ্চ ৩৫ মেগাওয়াট, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও হচ্ছে। বেশকিছু কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালু রাখতে ক্যাপটিভ (নিজস্ব জেনারেটর) ব্যবহার করছে।

গতকাল ডিইপিজেড ঘুরে দেখা গেছে, গ্লোবাল লেভেল বাংলাদেশ লিমিটেড, হ্যাঙ্গারস প্লাস, কুং কেং টেক্সটাইলস লিমিটেড, এসজিডব্লিউআইকাস বিডি লিমিটেড ও এসবিএফ লিমিটেডের কারখানা বন্ধ রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঢাকা ইপিজেডের একটি বিদেশী কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বণিক বার্তাকে জানান, সকাল ৯টার (গতকাল) পর বিদ্যুৎ সরবরাহ ২ ঘণ্টার মতো নিরবচ্ছিন্ন ছিল, এরপর ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। পরে বিদ্যুৎ এলেও কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়। কিন্তু তার কারখানায় অটোমেটেড জেনারেটর সিস্টেম থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়নি। তবে জেনারেটর দিয়ে দীর্ঘ সময় কারখানার উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। বিআরইবি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বেশকিছু কারখানা শিফট বাতিল করেছে, কোনো কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।

ঢাকা ইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে আছে ইউনাইটেড পাওয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বিতরণ কোম্পানি তিতাসের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে। তবে গ্যাস সরবরাহ বাবদ তিতাসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বকেয়াসংক্রান্ত জটিলতায় ২৮ এপ্রিল ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে তিতাস। ইউনাইটেডের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মূলত ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্মিত। বিকল্প উপায়ে বিআরইবি থেকে ইপিজেডে বিদ্যুৎ এলেও সরবরাহের নিরবচ্ছিন্নতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শরিফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইউনাইটেডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের পর বিআরইবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কারখানা চালু রাখতে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের (ডিইপিজেড) চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে তারা।’

এদিকে, ঢাকা ইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। ২৮ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে বেপজা। ওই চিঠিতে বলা হয়, বেপজার আওতাধীন ঢাকা ইপিজেডে শিল্প-কারখানায় প্রতিদিন ৪৩-৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ ঢাকা ইপিজেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নেয়া হয়।

বেপজার ওই চিঠিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ডিইপিজেডে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি ব্যাহত হওয়ার কথা জানানো হয়। উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাবসহ শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

ঢাকা ইপিজেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিতাস ২৮ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় ৯০টি কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। এসব কারখানায় কাজ করে অন্তত এক লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কারণে ওইদিন দুপুরের পর বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদনে যেতে পারেনি। অনেক কর্মী কারখানায় এলেও কাজ করতে পারেননি। আবার অনেক কারখানা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটি ঘোষণা করে।

বেপজার ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ইপিজেডে মোট ১১৫টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ডিইপিজেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সক্রিয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০, যার বেশির ভাগ বিদেশী। এখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানা রয়েছে। ডিইপিজেডের শীর্ষ ১০ বিনিয়োগকারীর তালিকায় এসব দেশের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আরও