সেমিনারে বক্তারা

কারখানায় পিফাসের ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিল্পাঞ্চলের মানুষ

দেশের চামড়া ও টেক্সটাইল খাতের কারখানাগুলোয় ব্যবহার হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পিফাস। এসব কারখানা থেকে বর্জ্য হিসেবে নির্গত পিফাস মাটি ও পানিকে দূষিত করছে।

দেশের চামড়া ও টেক্সটাইল খাতের কারখানাগুলোয় ব্যবহার হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পিফাস। এসব কারখানা থেকে বর্জ্য হিসেবে নির্গত পিফাস মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। এটি শিল্প এলাকায় বসবাসরত মানুষের ক্যান্সার, লিভারের ক্ষতি, থাইরয়েডের সমস্যার মতো নানান স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। গতকাল ‘বাংলাদেশে পিফাস দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। তারা জানান, টেক্সটাইল কারখানার আশপাশের ৭৫ শতাংশ কলের পানিতে পিফাস রয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ সেমিনারটির আয়োজন করে। শিল্পবর্জ্য থেকে নিঃসৃত পার-পলিফ্লুরো অ্যালকাইল পদার্থগুলোর (পিএফএএস বা পিফাস) মাধ্যমে পানি ও মাটির দূষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পিফাস মূলত নন-স্টিক কুকওয়্যার, খাবারের মোড়ক, অগ্নিনির্বাপক ফোম ও কাপড়ে ব্যবহার করা হয়। টেক্সটাইল কারখানার আশপাশের ৮৭ শতাংশ পৃষ্ঠজল এবং ৭৫ শতাংশ কলের পানিতে পিফাস পাওয়া গেছে। সাভারের কর্ণতলী নদীতে পিফাসের মাত্রা ডাচ পরামর্শ সীমার চেয়ে ৫৪ হাজার গুণ বেশি, যার কারণে এ ধরনের এলাকায় বসবাসরত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে। ক্যান্সার, লিভারের ক্ষতি এবং থাইরয়েডের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এখনো আন্তর্জাতিক পিফাস নিষিদ্ধকরণ নীতিমালা গ্রহণ করেনি এবং জাতীয় পর্যায়ে কোনো আইন নেই।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, পিফাস দূষণে আমরা জর্জরিত। একসময় আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা হয়েছে, আমরা আন্দোলন করেছি। এখনো দেশের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। ভূপৃষ্ঠের পানি রক্ষা সরকারের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু আমাদের নীতিগুলোর অকার্যকারিতা, দূরদৃষ্টির অভাব রয়েছে। আজ যে পানি আমরা পান করছি সেটা দূষিত। আমরা যে কত সংকটের মধ্যে রয়েছি তা বুঝতেই পারছি না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিউবার্ট বোম বলেন, দ্রুত শিল্পায়ন উচ্চ পর্যায়ে পিফাস দূষণে ভূমিকা রাখছে। এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যাও। প্রতিটি সরকারকে অবশ্যই এ দূষণ বন্ধে কাজ করতে হবে। কেমিক্যাল আমদানির রেজিস্ট্রেশন মনিটরিং করতে হবে। পিফাস দূষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যক্তি খাতের টেক্সটাইল এবং প্রসাধনী শিল্পকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্য বিষয়টাকে চিকিৎসায় নামিয়ে আনা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য যখন চিকিৎসায় নেমে আসে তখন সেটা বাণিজ্যে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা না হয়, তাহলে সব ধসে পড়বে। এখন আর বিদেশীদের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। নিজেদেরই সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। সঞ্চালনা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। বাংলাদেশে পিফাস দূষণের ওপর অবস্থানপত্র উত্থাপন করেন সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট শাহিদ হাসান।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা—ধরা-এর সহ-আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী, ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের অ্যাডভোকেসি পরিচালক জ্যাকি এসপোসিটো, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সাইপ্রেস সিসটেম আইএনসির চিফ টেকনোলজি অফিসার ড. জাকি ইউসুফ, ইএসডিওর প্রোগ্রাম উপদেষ্টা অটল কুমার মজুমদার এবং থ্রি ফিফটি ডট অর্গ-এর দক্ষিণ এশিয়া মোবিলাইজেশন সমন্বয়ক আমানুল্লাহ পরাগ।

আরও