টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীর পানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বড় নওপাড়ায় নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত দুদিনে ১৫টির বেশি ঘরবাড়িসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাচ্ছে না নদীতীরের মানুষ। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে নদীতীরবর্তী দুই শতাধিক পরিবার। নদীপারের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে।
তবে ভাঙন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টানা দুদিনে ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ তবে নদীতে গভীরতা বেশি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া এলাকায় হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি ছিল, চার ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি ঘর বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। ভাঙনকবলিত শ্রাবন্তী রাজবংশী বলেন, ‘২৫টি বছর ধরে সংসার গুছিয়েছি। চোখের সামনে নদীতে বিলীন হয়ে গেল। কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন কোথায় যাব, কে আশ্রয় দেবে আমাদের।’
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ভাটিতে বামতীর রক্ষায় প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে প্রায় দুই বছর। কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, উজানের ঢলের পানি পদ্মা হয়ে সাগরের দিকে যাওয়ায় নদীতে এখন প্রচণ্ড স্রোত বইছে। মূল পদ্মায় চর জেগেছে। সেজন্য জলযানগুলো নদীর এ অংশের তীরঘেঁষে যাতায়াত করছিল। স্রোতে হঠাৎ করেই নদীর তলদেশ থেকে মাটি ও জিও ব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ অংশ পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। এরইমধ্যে এ অংশের ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই ভাঙনকবলিত এ অংশে জিও ব্যাগের মধ্যে বালি-সিমেন্ট মিশ্রিত করে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ শেষ করা হবে।’
এদিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় রক্ষাবাঁধের কাজ চলছে। এর পরও কেন থামছে না ভাঙন—এ প্রশ্ন স্থানীয়দের। এর আগেও কয়েকবার উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে পদ্মায় ভাঙন দেখা দেয়। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে ইউনিয়নটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়নওপাড়া ভাঙনের মুখে পড়ে। এতে অর্ধশত ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়। সে সময় পদ্মার বাম তীর প্রকল্পের মধ্যে এ অংশসহ ৪ দশমিক ৬২ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভাঙনের শিকার ময়না বাড়ই বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে পদ্মাপারে নতুন সংসার গুছিয়েছি। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারালাম। এখন বাঁচব কীভাবে। পদ্মার ভাঙন সব কেড়ে নিয়েছে আমাদের। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। যদি বর্ষা মৌসুমের আগেই বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হতো তাহলে এভাবে নদীভাঙনের শিকার হতে হতো না আমাদের।’