দেশের অন্যতম চালের মোকাম নওগাঁয় আবারো বাড়তে শুরু করেছে দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও পাইকারিতে চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা বেড়েছিল। খুচরায় বাড়ে ২-৩ তিন টাকা। সারা দেশের মোকামে হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন মিল মালিকরা। বাজারে ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সহসাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খাদ্যশস্য লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুদ করছে একটি চক্র। একই সঙ্গে বেশকিছু মিল মালিক কম দামে কেনা ধান দীর্ঘদিন মজুদ রেখেছেন। এতে হাটবাজারে কমেছে ধানের সরবরাহ। যার প্রভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চালের দাম বাড়ছে।
শহরের আড়তদারপট্টিতে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৫-৬৬ টাকা, কাটারিভোগ ৬৮-৭২, সুভলতা ৬২-৬৩, ব্রি-২৯, ৫৬-৫৮ এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও মোকামে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৩-৬৪ টাকা, কাটারিভোগ ৬৫-৭০, সুভলতা ৬০-৬১, ব্রি-২৯ ৫৪-৫৬ এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫০-৫২ টাকা কেনাবেচা হয়েছে।
শহরের সততা রাইস এজেন্সির আড়তদার সুকুমার ব্রহ্ম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর নওগাঁর মোকামে চালের চাহিদা বেড়েছে। হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে অস্থিরতাও বাড়ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। অবৈধভাবে খাদশস্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্যা নেয়ার ক্ষেত্রে বিগত সরকারের আমলে আইন পাস হয়েছিল। সেই আইনে কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। বর্তমানে চালের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে হলে অবশ্যই আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি ফেরানোর সুযোগ নেই।’
তবে শহরের সুলতানপুর মহল্লার মোল্লা অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী হাসান মোল্লা বলেন, ‘মজুদবিরোধী অভিযানের নামে বিগত দিনে যে হয়রানি হয়েছে, সেটি করলে চালের বাজারে আরো প্রভাব পড়তে পারে। মিলাররা যদি ক্ষুব্ধ হয়ে চাল উৎপাদন বন্ধ করে দেন, সেক্ষেত্রে এর চরম মূল্য দিতে হবে ভোক্তাকে। তাই আগামীতে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনের উচিত চালকল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা।’
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের ১১ জুলাই সংসদে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন-২০২৩ পাস হয়।
তবে আইনটি অযৌক্তিক বলে মনে করেন জেলা অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, ‘সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সংসদে অযৌক্তিক এ আইন পাস করিয়েছেন। এ আইন দেশীয় চালকল শিল্পকে আরো ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। আমরা শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলাম। ছোটখাটো বিষয়ে কঠোর শাস্তির দিকে এগোলে চাল ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অটোরাইস মিল মালিকরা দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছেন। দাম বাড়ানোর কাজটি তারাই করছেন। দুই সপ্তাহে হাসকিং মিলে উৎপাদিত প্রতি কেজি চালের দাম সর্বোচ্চ ১-২ টাকা বেড়েছে। মৌসুমের শেষ সময়ে দাম বাড়া অস্বাভাবিক কিছু না। নতুন ধান বাজারে এলে আবারো দাম কিছুটা কমতে পারে।’