বান্দরবানে দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ

আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ জেলা প্রশাসকের

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ায় দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ায় দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরপর বাঁধ অপসারণে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ পরিবেশ অধিদপ্তর।

গত রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন। নির্দেশ কার্যকর করতে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বন বিভাগ পরিবেশ অধিদপ্তর। সময় জড়িত ব্যক্তিকে প্রকৃতি বিধ্বংসী কাজসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান কার্যালয়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছে পরিদর্শনকারী দল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অভিযান পরিচালনাকারী দুই সংস্থা।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের ২১ মার্চ টংকাবতী রেঞ্জের ৩০৯ নম্বর দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজায় বাগান সৃজনের লক্ষ্যে বন বিভাগকে ৬০০ একর পাহাড়ি ভূমি হস্তান্তর করে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। হস্তান্তরিত ভূমির ভেতর দিয়ে দুটি ঝিরি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। তিন বছর আগে দক্ষিণ দিকের বন বিভাগের ভূমিঘেঁষে নিজেদের কৃষিজমি অল্প পরিমাণ খুঁড়ে পুকুর করার নামে ওই দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ দেয়ার উদ্যোগ নেয় পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ইয়াসিন। সে সময় শিক্ষক ইয়াসিনের প্রকৃতিবিধ্বংসী বেআইনি কাজ বন্ধ করে পুনরায় না করার নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ।

সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই একই স্থানে বাঁধ দেয়ার তথ্য পায় বন বিভাগ। পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার সহকারী বন সংরক্ষকের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা অভিযোগের তথ্যের সত্যতা পায়। বাস্তবতায় গত রোববার জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন সহকারী বন সংরক্ষক রিটা আকতার। সভায় ঝিরির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান কার্যালয়কে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ওই এলাকায় পাহাড় কেটে দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করেন শিক্ষক মো. ইয়াসিন। সে সময় করা এনফোর্সমেন্ট মামলায় পরিবেশ আদালতের রায়ে দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেন তিনি। একই সঙ্গে পরে পরিবেশ বিধ্বংসী ওই কাজ না করার শর্ত দেয়া হয়। সাম্প্রতিক যৌথ অভিযানে দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করে কমবেশি পাঁচ একর ফসলি জমি খুঁড়ে পুকুরের আদলে করে পাড় দিয়ে তিন ভাগ করা নিচু অংশের দুটিতে ঝিরির পানি জমানো হয়েছে। বাঁধের পাড় পাহাড়ের মাঝে বর্ষাকালে পানি যাওয়ার জন্য সরু নালা রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, বন বিভাগের ভূমির ভেতর থেকে দুটি ঝিরি এসে মৌলভীপাড়া-চরম্বা হয়ে আনুমানিক তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গতিপথ ঘুরে টংকাবতী খালে মিলিত হয়েছে। গত দুই বছর আগে ঝিরি দুটির গতি পথে বাঁধ দিয়ে কমবেশি ছয় একর ফসলি জমিতে মাছ চাষ করছেন শিক্ষক মো. ইয়াসিন। এছাড়া তিনি ওই বাঁধঘেঁষা বন বিভাগের কমবেশি ২৫ একর ভূমি দখল করে আকাশমণি গাছ লাগিয়েছেন। দুটি ঝিরিতে বাঁধ দেয়ার কারণে লোকালয়ে ঝিরির পানিপ্রবাহ বলতে গেলে শুকিয়ে গেছে। শুধু বর্ষাকালে ঝিরিতে পানি থাকে বলে জানায় স্থানীয়রা।

হাঙ্গর খাল থেকে বন বিভাগের সীমানা শুরু বলে দাবি করেছেন মো. ইয়াসিন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আকাশমণি গাছের বাগান করা ভূমির জন্য বন্দোবস্তির আবেদন করেছি। বাবার নামে বন্দবস্তি থাকা চার একর ফসলি জমিতে মাছের খামার করেছি। শুধু বর্ষাকালে ঝিরি দুটিতে পানি প্রবহমান থাকে।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রাকৃতিক দুটি ঝিরি উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০২২ সালে পাহাড় কেটে দুটি ঝিরির পানিপ্রবাহ বন্ধ করায় মো. ইয়াসিনকে লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ আদালত। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেখাতে পারলে এবারো তার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।

চলমান সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজ শেষে অবৈধ দখলদারদের উৎখাতসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ বান্দরবানের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী যেকোনো কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সহযোগিতায় পরিবেশ রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর রয়েছে।

আরও